নিজস্ব প্রতিবেদন: অযোধ্যার সঙ্গে সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে কোরিয়ার। সেই সুবাদে দীপাবলিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কিম জং-সুক। মঙ্গলবার রামনাথ পার্ক অ্যাভিনিউতে কিম জং-সুকের চপার যখন মাটি ছুঁল, তখন মুহুর্মুহু ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উপচে পড়েছে চারিদিক। কিম জং-সুককে অভ্যর্থনা জানান রাম এবং সীতার অবতারে দুই শিল্পী। এর পর ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে বক্তৃতা রাখেন মুন জায়ে-ইনের পত্নী।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন- অযোধ্যায় মন্দির ছিল, মন্দিরই থাকবে, দীপাবলিতে বললেন যোগী


কিমের বক্তৃতায় শুধুই দুই দেশের সুষ্ঠু সম্পর্কের কথা উঠে এল না। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ শোনা গেল তাঁর মুখে। দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট লেডির মুখে রবীন্দ্রনাথের নাম! শুনে একটু অবাক হয়তো হবেন আপামর বাঙালি। অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন, রবি ঠাকুরের প্রেমে তিনি পড়লেন কীভাবে?


এই উত্তর খুঁজতে গেলে চলে যেতে হবে ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথের জাপান সফরে। এটাই ছিল তাঁর প্রথম জাপান সফর। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয় পড়ুয়াদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারেন, কোরিয়দের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি রয়েছে। সেই সংস্কৃতির অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কোরিয়া অধিগ্রহণ করে জাপান। তাঁদের উপর জাপানি সেনার চলে অকথ্য অত্যাচার। ধ্বংস করে দেওয়া হয় কোরিয় সংস্কৃতি।


আরও পড়ুন- চিন - মায়ানমার সীমান্তে নিহত উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া, দাবি গোয়েন্দাদের


রবীন্দ্রনাথ তাঁদের কথায় সেটা অনুভব করেছিলেন। এর পর কোরিয়ার ভূরাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরতে তাঁর সফরকে একটা মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করলেন রবীন্দ্রনাথ। কোরিয়ার উপর জাপানের এই আগ্রাসন নীতির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। রবি ঠাকুরের মন্তব্যে জাপান কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। পাল্টা জাবাব  দেন তাঁর ‘দ্য সং অব দ্য ডিফিটেড’ কবিতায়। তিনি লেখেন ‘সি (কোরিয়া) ইজ সায়লেন্ট উইথ আইজ ডাউনকাস্ট; সি হ্যাজ লেফ্ট হার হোম বিহাউন্ড হার...।’ এটাও বলা হয় জাপানে চই নাম সুন নামে এক কোরিয় পড়ুয়াকে উদ্দেশ্য করে এই কবিতা লেখেন রবীন্দ্রনাথ।


আরও পড়ুন- যোগীর পর মোদীর রাজ্য! আমেদাবাদ পাল্টে কর্ণাবতী নাম রাখার প্রস্তাব বিজেপির


এর পর ১৯২৪ এবং ১৯২৯ সালে তাঁর বিদেশ সফরেও জাপানের সম্রাজ্যবাদী নীতিকে কড়া সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। রবিঠাকুরের এই কোরিয়া প্রীতি উদ্বুদ্ধ করেছে সে দেশের নাগরিককে। তাঁর লেখনী কোরিয় ভাষায় অনুবাদও হয়। ১৯২৯ সালে লেখা ‘ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’ গভীর প্রভাব ফেলেছে কোরিয়ার সমাজ জীবনে। সেখানের পাঠ্য বইয়ে পড়ানো হয় ‘ল্যাম্প অব দ্য ইস্ট’। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে রবীন্দ্রনাথের ব্রোঞ্জের মূর্তি উদ্বোধন করেন প্রাক্তন লোকসভা অধ্যক্ষ মীরা কুমার। বলাবাহুল্য কোরিয়ার সংস্কৃতিতে এখনও ‘নীরবে নিভৃতে’ রয়ে গিয়েছেন ‘বাঙালির রবীন্দ্রনাথ’।