অনিকেশ ব্যানার্জি
গত ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারামন। আয়করে নতুন কর সরলীকরণ ও কর কমার কথা বলা আছে ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরের বাজেটে।
এবারের বাজেটে কর নির্ণয়ের ২টি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কম করের সুযোগ নিলে আয়করের অধীনে যে ছাড় পাওয়া য়ায়, তা নেওয়া যাবে না। যেমন ৮০সি ধারা, গৃহঋণের সুবিধা, স্বাস্থ্য বিমা, এইচআরএ-র সুবিধা ইত্যাদি। আড়াই লাখ টাকা অবধি দুই ক্ষেত্রে ছাড় আছে।
# নতুন নিয়মে কর ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ অবধি।
# অন্যটা পুরনো নিয়মে যা ছিল তা হল ৫ শতাংশ, ২০ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ।
কোনও আয়করদাতা নিজেই ঠিক করতে পারবেন তিনি কোন পদ্ধতিতে কর দেবেন। সাধারণ যে মধ্যবিত্ত অনেকেরই জীবন বিমা করে রেখেছেন, স্বাস্থ্য বিমা করা রয়েছে। একদিকে এইগুলো দিয়ে যাবেন নতুন নিয়মে তাতে আবার করের বোঝাও বহন করতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
আরও পড়ুন-যারা লড়াই করে তারাই শেষপর্যন্ত জেতে, শাহিনবাগ আন্দোলন নিয়ে বিজেপিকে নিশানা মমতার
# কারও আয় ৮৭এ ধারায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। কর ছাড় দেওয়া হয় দুটি পদ্ধতিতে। এছাড়া হেলথ ও এডুকেশন সেস রয়েছে ৪ শতাংশ। ৫০ লাখ টাকা আয় থেকে শুরু হচ্ছে সারচার্জ। তারপর আয় অনুসারে সারচার্জ বাড়াবে। ৫ লাখ টাকা আয়ের ব্যক্তি করছাড়ের সুযোগ নিলে নতুন ও পুরনো পদ্ধতিতে কোনও কর দিতে হবে না।
ধরা যাক, কারও আয় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শুধু ৮০সি-র ছাড় নিলে পুরেনা পদ্ধতিতে কোনও কর দিতে হবে না। নতুন পদ্ধতিতে কর ১৮ হাজার ২০০ টাকা।
কারও আয় যদি ৯ লাখ টাকা হয় পুরনো পদ্ধতিতে শুধু ৮০সি ধারায় ছাড় নিলে কর হবে ৬৫ হাজার টাকা। নতুন পদ্ধতিতে হবে ৬২ হাজার ৪০০ টাকা। লাভ হল ২ হাজার ৬০০ টাকা।
# উচ্চ আয়ের ব্যক্তি নতুন কর পদ্ধতির সুযোগ নিলে আর্থিক সুবিধা পাবেন। মধ্যবিত্ত ব্যক্তিকে জীবন ধারনের জন্য জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম দিতেই হবে। এটার ছাড় না নিলে কর দিতে হবে। একইসঙ্গে বিমাগুলির জন্য খরচ চালাতে হবে। মধ্যবিত্তের ওপরে বাড়াবে আর্থিক চাপ।
# উচ্চ আয়ের ব্যক্তিও এই কর কাঠামোর সুযোগ নিতে পারবেন। তবে দুটি পদ্ধতি এই বছরের জন্য ভালো করে বুঝে নিতে হবে। নতুন কর কাঠামো গ্রহণ করলে পুরনোর সুযোগ নেওয়া যাবে না। আগামী বছরগুলিতেও এই কর কাঠামো মেনে চলতে হবে। তার ফলে ৭০টি কর ছাড়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
আরও পড়ুন-এমাসেই চালু হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, জেনে নিন ভাড়া-অত্যাধুনিক ব্যবস্থা
# এদিকে কোম্পানির কর ২২ শতাংশ যা আগের থেকে ৮ শতাংশ কম। ফলে কোম্পানির ডিভিডেন্টের পরিমাণ বাড়তে পারে। সরকার নতুন আইনে ডিভিডেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন কর কোম্পানির হাত থেকে তুলে দিয়েছে। ডিভিডেন্টের ওপর কর দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। ফলে বাড়তি করের বোঝা চাপবে সাধারণ মানুষের ওপরে।
অন্যদিকে কোম্পানি গুলির ওপর থেকে করের বোঝা কমলো ঠিকই কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপরে ডিভিডেন্টের করমুক্ত আয় হয়ে গেল কর যুক্ত আয়।
# যারা জিএসটির জাল বিল তৈরি করবেন তাদের জন্য বিলের সমপরিমাণ টাকাই জরিমানা বলে গণ্য হবে। আগামিদিনে জিএসটি জালিয়াতি আটকাতে এটা একটা বড় পদক্ষেপ।
# যারা ৮০জি ধারার সুযোগ নেন তাঁদের দান করা অর্থ সরাসরি অনলাইনে দেখতে পারবেন। পাশাপাশি রিটার্নও সরাসরি দেখা যাবে।
-লেখক ট্যাক্স কনসালট্যান্ট
নিজেই ঠিক করুন কোন পদ্ধতিতে কর দেবেন, জেনে নিন এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়