150th Birth Anniversary Of Sri Aurobindo: অরবিন্দ অ্যাক্রয়েড ঘোষ থেকে শ্রীঅরবিন্দ: এক অনন্য আলোকযাত্রা

১৫ অগস্ট তাঁর আবির্ভাব। ১৮৭২ সালের এই দিনে অরবিন্দ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীঅরবিন্দের ভক্তরা এর পিছনে দৈব ইশারা খুঁজে পান। স্বয়ং অরবিন্দও মনে করতেন এই দিনের বিশেষ তাৎপর্য আছে।

| Aug 15, 2022, 13:22 PM IST

সৌমিত্র সেন: ২০২২ সালের ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ৭৫ বছর পূর্তি, ৭৬-য়ে পা। এই নিয়ে গোটা দেশ আনন্দ-উত্তাল। কিন্তু পাশাপাশি আরও একটি বড় ঘটনা ঘটেছে। এটা নিয়ে হয়তো সাধারণ মানুষ তত আলোড়িত হয়নি। সেটি হল ২০২২ শ্রীঅরবিন্দের সার্ধশতবর্ষও। ১৫ অগস্ট তাঁর আবির্ভাব দিবস। ১৮৭২ সালের ১৫ অগস্ট অরবিন্দ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন।  শ্রীঅরবিন্দের ভক্তরা এর পিছনে দৈব ইশারা খুঁজে পান। অরবিন্দ নিজেও মনে করতেন এই দিনের বিশেষ তাৎপর্য আছে। 

1/9

বাবার প্রদর্শিত পথে

অরবিন্দের বাবা ছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত চিকিৎসক কৃষ্ণধন ঘোষ। তিনি ডা. কে ডি ঘোষ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। অরবিন্দের মা ছিলেন স্বর্ণলতা দেবী। ব্রাহ্ম আন্দোলনের নেতা রাজনারায়ণ বসু ছিলেন অরবিন্দের মাতামহ। এঁর কাছ থেকেই সমাজসংস্কারের প্রাথমিক পাঠ পেয়েছিলেন অরবিন্দ। যার মূল ভিত্তি ছিল জাতপাত ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত, নারী-পুরুষ সমানাধিকার। 

2/9

অরো আদ্যোপান্ত সাহেব হয়ে উঠুক

বাবা কৃষ্ণধন চেয়েছিলেন অরো আদ্যোপান্ত সাহেব হয়ে উঠুক। তাই শিশুকালেই ছোট্ট অরোকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ইংরেজি পড়াশোনার আবহে। অরোকে সাহেব বানানোর ইচ্ছে তাঁর এতই প্রবল ছিল যে তিনি অরবিন্দের মিডলনেম রেখেছিলেন 'অ্যাক্রয়েড'। অরবিন্দ 'অ্যাক্রয়েড' ঘোষ।  ১৮৭১ সালে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষ করে কৃষ্ণধন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ভারতীয় সমাজের রক্ষণশীলতা, সংস্কার, অভ্যাস, রীতিনীতি সমস্ত ত্যাগ করেছিলেন। তিনি চাইতেন না তাঁর সন্তানেরা এদেশের মানুষের মতো হোক।

3/9

বাবার নির্দেশিত পথ থেকে সরে আসা

বাবার নির্দেশিত পথেই ১৮৮৯ সালে অরবিন্দ সেন্ট পলস থেকে পাশ করেন। সেই বছর তিনি কিং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষায় বসেন ও প্রথম হন। বাৎসরিক ৮০ পাউন্ডের সিনিয়র ক্লাসিক্যাল স্কলারশিপ পান ১৮৯০ সালে। আইসিএস প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। গ্রিক ও ল্যাটিনে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাশও করেন। কিন্তু অশ্বারোহণ পরীক্ষা না দেওয়ায় তিনি ICS পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেন না। এই প্রথম তিনি তাঁর বাবার নির্দেশিত পথ থেকে সরে আসার মনোভাবের প্রকাশ ঘটালেন।

4/9

ভারত অভিমুখে যাত্রা ১৮৯৩ সালে

অরবিন্দ বিলেত ছেড়ে ভারত অভিমুখে যাত্রা করেন ১৮৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বরোদার মহারাজা গাইকোয়াড়ের কাছে ২০০ টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন তিনি। চাকরিতে যোগদান করার পর তাঁকে নানা কাজের জেরে দেওয়ানখানা বা মহাকরণে নিযুক্ত হতে হয়। পরে বরোদা কলেজে ফরাসি ভাষার শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। পরে এই কলেজেই ১৯০৪ সালে ভাইস প্রিন্সিপাল হন। এখানেই বাংলা এবং সংস্কৃত শিখেছেন। সে-যুগের বিশিষ্ট সাহিত্যিক দীনেন্দ্রকুমার রায় তাঁকে বাংলা শেখান।    

5/9

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং বীরসন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ

এরপর থেকে ধীরে ধীরে ভারতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অরবিন্দ। বাংলা এবং মধ্যপ্রদেশের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। লোকমান্য তিলক এবং ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি হয়। বাঘা যতীন হিসেবে পরিচিত যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর জন্য তিনি বরোদার সেনাবিভাগে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। উল্লেখ্য, লন্ডনে থাকার সময়েই অরবিন্দ গুপ্ত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। চিন্তা এবং চেতনায় তিনি চরমপন্থী ছিলেন। সেই সময় দুই বাঙালি মনীষী তাঁকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। এঁরা হলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং বীরসন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ।

6/9

অনুজ বারীন ঘোষের মাধ্যমে

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৬ সালে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ বা জাতীয় বিদ্যালয় ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (বর্তমানে যেটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিপ্লবী অরবিন্দ। অনুজ বারীন ঘোষের মাধ্যমে বাংলা বিপ্লবী দলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে। ১৯০৭ সালে তিনি 'বন্দেমাতরম' পত্রিকা প্রকাশ করেন।

7/9

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহায়তায়

১৯০৮ সালে কলকাতার মানিকতলায় বিপ্লবীদের একটি বোমা কারখানা ছিল যেটি ব্রিটিশের চোখে পড়ে যায়। বেশ কয়েকজন বিপ্লবী ধরা পড়েন। তাঁদের স্বীকারোক্তি থেকে ২ মে গ্রেফতার করা হয় অরবিন্দ ঘোষকে। এর সঙ্গে তিনি আলিপুর বোমা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। ৫ মে তাঁদের আদালতে পেশ করা হয়। বছরখানেক চলে মামলার শুনানি। ১৯০৯ সালে রায় প্রকাশিত হয়। মামলায় অরবিন্দদের আইনি সাহায্য করেন বিখ্যাত ব্যারিস্টার তথা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। অরবিন্দ ও বাকি ন'জনের বেকসুর খালাস হয়।

8/9

অপরিমেয় আধ্যাত্মিক উপলব্ধি

কারাগারে থাকার সময় অরবিন্দের অপরিমেয় আধ্যাত্মিক উপলব্ধি ঘটে। আধ্যাত্মিক বিকাশ পূর্ণতার দিকে এগোতে থাকে। তাঁর কথায়, কারাগারের মধ্যে তিনি অন্তরাত্মার ডাক শুনেছিলেন। বন্দিদশায় তিনি অনুভব করেছিলেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তাঁর জন্য নয়, তাঁকে খুঁজতে হবে জীবনের অন্য মার্গ। যখন তিনি কারাগার থেকে বেরোলেন তখন তিনি যেন এক আলাদা মানুষ। রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে নিমগ্ন করলেন তিনি। বিপ্লবী অরবিন্দ ঋষি অরবিন্দে রূপান্তরিত হতে শুরু করলেন।

9/9

১৯৫০ সালে প্রয়াত ঋষি অরবিন্দ

৩৮ বছর বয়সে ১৯১০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে চিরদিনের জন্য কলকাতা ত্যাগ করে ফরাসি অধিকৃত পণ্ডিচেরিতে চলে গেলেন অরবিন্দ। জীবনের বাকি ৪০টি বছর এখানেই কাটান। আর সেখানে জীবন উৎসর্গ করলেন ধর্মসাধনা, দর্শন-সাহিত্যচর্চা ও স্বপ্রতিষ্ঠিত আশ্রমকর্মে। তবে নিজেকে মূলত উৎসর্গ করলেন যোগ সাধনায়। এখানে থাকার সময়ে তিনি ধর্ম, দর্শন, ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষাতেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-- 'দ্য লাইফ ডিভাইন', 'সাবিত্রী', 'মাদার ইন্ডিয়া', 'এসেজ অন গীতা',  'ভারতের নবজন্ম', 'কারাকাহিনী'। তাঁর 'সাবিত্রী' কবিতায় মোট ২৪ হাজার লাইন আছে। ১৯৫০ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হন ঋষি অরবিন্দ।