Bankim Chandra: জীবনের প্রত্যুষেই তাঁকে তাড়া করে ফিরত 'এ জীবন লইয়া কী করিব'র দীপ্ত-ভাবনা!

| Jun 28, 2021, 15:21 PM IST
1/10

বাঙালির নবজাগরণের, বাঙালির রেনেশাঁর এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি আমাদের ভাষার প্রথম সার্থক উপন্যাস রচয়িতা। কিন্তু এটুকুই তাঁর পরিচয় নয়। তিনি উনিশ শতকের এমন এক বাঙালি যিনি নানা ভাবে নানা আঙ্গিকে আমাদের সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন। 

2/10

উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে ১৮৩৮ সালের (১২৪৫ বঙ্গাব্দ) ১৩ আষাঢ় (২৬ জুন) জন্ম গ্রহণ করেন বঙ্কিম। আজ, সেই ১৩ আষাঢ়, ঘটনাচক্রে ইংরেজি তারিখটি ২৮ জুন। বঙ্কিমের বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এবং তাঁর দাদা, তিনিও বাংলা সাহিত্যের এক মহাপ্রতিভা, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

3/10

ছোট থেকেই বঙ্কিম ক্ষুরধার মেধার অধিকারী। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। বঙ্কিমের কনিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, 'শুনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।' যদিও গ্রামের পাঠশালায় বঙ্কিম কোনওদিনই যাননি। পাঠশালার গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন। 

4/10

১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র এ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। বঙ্কিমচন্দ্রের দু'টি বিবাহ। প্রথম বিয়ে হয় ১৮৪৯ সালে। তখন তার বয়স ছিল ১১ বছর। নারায়ণপুর গ্রামের এক পঞ্চমবর্ষীয়ার সঙ্গে বিয়ে। কিন্তু চাকুরি জীবনের শুরুতে যশোর অবস্থান কালে ১৮৫৯ সালে এ পত্নীর মৃত্যু হয়। পরে ১৮৬০ সালের জুনে হালিশহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৮৫৮ সালেই তাঁর কর্মজীবন শুরু। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে তিনি যশোর জেলায় কাজে যোগ দেন। ওই বছরের অগস্টে। কর্মজীবন থেকে অবসরগ্রহণ ১৮৯১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। ১৮৯৪ সালের (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল) ৮ এপ্রিল মৃত্যু।

5/10

কিন্তু এই সালতামামি দিয়ে বঙ্কিমকে বোঝা কঠিন। সারাজীবন ঘুরে ঘুরে কাজ। উচ্চ পদে দারুণ দায়িত্বের কর্মভার তাঁর। এর উপর স্বাভাবিক সংসারজীবন যাপনের ধাপচাপ তো ছিলই। এত কিছুর পরেও তিনি সারা জীবন ধরেই সাহিত্যের যে সুউচ্চ সৌধ নির্মাণ করেছিলেন তার তুলনা তিনিই। তিনি শুধু বাংলাসাহিত্য তো নয়, সামগ্রিক ভাবে আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যেরই প্রাণপুরুষ, দীক্ষাপুরুষ, উদগাতা ও পিতৃপুরুষ তিনিই।  

6/10

'দুর্গেশনন্দিনী' থেকে বঙ্কিমের এবং বাংলা গদ্য সাহিত্যের যে মহা-যাত্রা শুরু হল, তা এক কথায় অতুলনীয়। একের পর এক অনন্য গদ্যের উপন্যাসে তখন আলোড়িত বাঙালির সাহিত্যক্ষেত্র।     

7/10

এরই মধ্যে বঙ্কিম পরিকল্পনা করে ফেললেন একটি  উত্‍কৃষ্ট বাংলা সাহিত্য পত্রিকার। নাম দিলেন 'বঙ্গদর্শন'। 'বঙ্গদর্শন' বঙ্কিমপ্রতিভার আর এক অনন্য  স্বাক্ষর। 'বঙ্গদর্শনে'র মতো অমর কালজয়ী কোনও বাংলা সাহিত্যপত্রিকা সম্ভবত আজও জন্মায়নি!

8/10

'বঙ্গদর্শনে'র প্রথম সংখ্যা থেকে ১৮৭৪-এর এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র এই পত্রিকায় যে যে উপন্যাস লিখেছিলেন সেগুলি হল 'বিষবৃক্ষ', 'ইন্দিরা','যুগলাঙ্গুরীয়' এবং 'চন্দ্রশেখর'। এই সব উপন্যাসের আত্মপ্রকাশ বঙ্কিমচন্দ্রের লেখকজীবনের এক এককটি মাইলস্টোন।

9/10

বঙ্কিম সারাজীবন নানা জেলায় কাজ করেছেন। কখনও মুর্শিদাবাদ, কখনও মেদিনীপুর, কখনও হাওড়া। কিন্তু তাঁর অক্লান্ত মেধা-চর্চায় কোনও বাধা পড়েনি। ধর্মতত্ত্বের আলোচক হিসেবেও প্রখ্যাত। তাঁর ক্ষুরধার মেধা যা স্পর্শ করেছে সেটাই হীরকদ্যুতিতে প্রতিভাত হয়েছে। অনন্য রসবোধের অধিকারী বঙ্কিম জীবন-সমাজ-ইতিহাস সব কিছুকেই গভীর চিন্তার আলোয় দেখেছিলেন। আর আমাদের  সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু আমরা কি তাঁকে নিয়ে যথোচিত চর্চায় মগ্ন? 

10/10

বঙ্কিমকে নিয়ে বাঙালি চর্চা করে বটে। তবে তেমন সাড়া-জাগানো নয়।। এ কালের বাঙালি বঙ্কিমকে ঠিক মনেও কি রেখেছে? বঙ্কিম দুঃখ করেছিলেন, বাঙালির ইতিহাস নেই বলে। তিনি দাবি করেছিলেন বাঙালির ইতিহাস চাই। নইলে বাঙালি কখনও মানুষ হবে না। তিনি লিখেছিলেন,'এমন দুই এক হতভাগ্য জাতি আছে যে, কীর্তিমন্ত পূর্বপুরুষগণের নাম অবগত নহে। সেই হতভাগ্য জাতিদিগের মধ্যে অগ্রগণ্য বাঙ্গালী'। আজও কি তাঁর আক্ষেপের দিন অপগত হয়েছে? আজও কি বাঙালি ঠিক সেই অর্থে ইতিহাসসচেতন, ইতিহাসপ্রাণিত, ইতিহাসসন্ধানী?