#উৎসব: ধনতেরাস কী? জেনে নিন এই পুজো করলে কী লাভ?
নিজস্ব প্রতিবেদন: ধনতেরাস উৎসব পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পালন করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা মূলত এই দিন শুভ বলে মনে করেন। এই দিন শুভ মনে করা হয় বলে বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো করেন। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরই দীপাবলী। হিন্দু ক্যালেন্ডারের অনুযায়ী, ৪ নভেম্বর ধনতেরাস। মূলত অবাঙালিদের মধ্যে এর প্রচলন থাকলেও এখন বাঙালিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এই উৎসব। এই উৎসবে মূলত সোনা কেনা হয়। সোনা না কিনতে পারলেও যে-কোনও ধাতুই কেনাকে শুভ বলে মনে করা হয়।
দীপাবলী মূলত পাঁচ দিনের উৎসব। এর আর এক নাম আছে— ধনাত্রয়োদশী বা ধনবত্রী ত্রয়োদশী। ‘ধন’ শব্দের মানে সম্পত্তি। ত্রয়োদশী শব্দের অর্থ হিন্দু ক্যালেন্ডারের ১৩তম দিন। দীপাবলীর সময় লক্ষ্মীপুজোর দিন দুই আগে ধনতেরাস হয়। বলা হয়, ধনতেরাসের দিন দেবী লক্ষ্মী তার ভক্তদের গৃহে যান ও তাঁদের ইচ্ছাপূরণ করেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে এই দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা এ দিন দামি ধাতু কেনেন। সম্পদের দেবতা কুবেরও এ দিন পূজিত হন।
কথিত আছে, রাজা হিমার ১৬ বছরের ছেলের এক অভিশাপ ছিল। তার কুষ্টিতে লেখা ছিল, বিয়ের চার দিনের মাথায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। তার স্ত্রীও জানত সেই কথা। তাই সেই অভিশপ্ত দিনে সে তার স্বামীকে সে দিন ঘুমোতে দেয়নি। শোয়ার ঘরের বাইরে সে সমস্ত গয়না ও সোনা-রূপার মুদ্রা জড়ো করে রাখে। সেই সঙ্গে সারা ঘরে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। স্বামীকে জাগিয়ে রাখতে সে সারারাত তাকে গল্প শোনায়, গান শোনায়। পরের দিন যখন মৃত্যুর দেবতা যম তাদের ঘরের দরজায় আসে, আলো আর গয়নার জৌলুসে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। রাজপুত্রের শোয়ার ঘর পর্যন্ত তিনি পৌঁছন ঠিকই। কিন্তু সোনার উপর বসে গল্প আর গান শুনেই তাঁর সময় কেটে যায়। সকালে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান তিনি। রাজপুত্রের প্রাণ বেঁচে যায়। পরদিন সেই আনন্দে ধনতেরাস পালন শুরু হয়।
ধনতেরাসের পরের দিন নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী। দীপাবলীর আগের দিন এটি। একে ছোটি দিওয়ালি-ও বলে।ভারতে ধনতেরাস উত্সব উদযাপিত হয় সোনা, রুপো বা বাসন কিনে। একে সৌভাগ্যের লক্ষণ বলা হয়। নতুন জামাকাপড়ও এ সময় কেনে মানুষ। এরপর করা হয় লক্ষ্মী পুজো। চারিদিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর আরাধনা করা হয়। পুজো হয় গণেশেরও। শাস্ত্র মতে, প্রচলিত কিছু আচার অনুষ্ঠানের ধরন ও পন্থা অবলম্বন করলে দেবী তুষ্ট হবেন।
প্রতিদিন স্নান করে শুদ্ধ হয়ে লক্ষ্মী গায়ত্রী মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে মা লক্ষ্মী অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। এই মন্ত্র জপ করার সময় পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করলে ভাল হয়। দক্ষিণাবর্ত শঙ্খকে বলা হয় মা লক্ষ্মীর শঙ্খ। লাল, সাদা বা হলুদ রংয়ের একটি পরিষ্কার কাপড়, একটি রুপোর পাত্র অথবা মাটির পাত্রের উপর রাখতে হয় এই শঙ্খ। এই শঙ্খের মধ্য দিয়েই বাড়িতে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রবাহিত হয়। বলা হয়, সমস্ত দেবতা বাস করেন তুলসী গাছে। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, দেবী তুলসী হলেন মা লক্ষ্মীরই এক রূপ। তাই বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে এবং সেখানে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বাললে তুষ্ট হন মা লক্ষ্মী। টানা ১২ দিন ধরে ভক্তিভরে লক্ষ্মী দ্বাদশ স্তোত্র ১২ বার উচ্চারণ করলে ঋণমুক্তি ঘটে।