Franz Kafka: 'আস্ত পোকা' থেকে বিশ্ব উপন্যাসের অমর সৌধ

| Jul 03, 2021, 19:14 PM IST
1/11

গ্রেগর সামসা। একজন ট্রাভেলিং সেলসম্যান। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখলেন, তিনি একটা আস্ত পোকা হয়ে গেছেন! অর্থাৎ তাঁর রূপান্তর ঘটে গেছে। 

2/11

এটি আসলে একটি উপন্যাসের প্রথম লাইন। লাইনটি ছিল এরকম--'এক সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রেগর সামসা দেখল–সে পোকা হয়ে গেছে!' এই উপন্যাসের এই প্রথম লাইনটিকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি লাইন হিসেবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর অসংখ্য পাঠক এই একটি লাইনে যুগ যুগ ধরে ভাবনার খোরাক পেয়েছেন। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ পর্যন্ত আন্দোলিত হয়েছিলেন এই একটি লাইন পড়ে। 

3/11

এ হেন একটি বাক্যের স্রষ্টার নাম ফ্রান্‌ৎস কাফকা। আজ  তাঁর  জন্মদিন। ১৮৮৩ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের প্রাহা (প্রাগ) শহরের (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী) এক মধ্যবিত্ত জার্মান-ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কাফকাকে বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। 

4/11

কাফকার বাবা ছিলেন হারমেইন কাফকা, মা জুলি কাফকা। বাবার ছিল কাপড়ের দোকান। মা-ও বাবাকে ব্যবসায় সাহায্য করতেন। হারমেইন ও জুলি পারিবারিক ব্যবসায় এতই ব্যস্ত থাকতেন যে তাঁরা ছেলেমেয়েদের বিশেষ সময় দিতে পারতেন না। এ কারণে ফ্রান্‌ৎস কাফকার শৈশব  একাকীত্বের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।

5/11

বাবার সঙ্গে কাফকার সম্পর্কের তীব্র টানাপোড়ন ছিল। তাঁর একাধিকক লেখায় তাঁর বাবার ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর 'ব্রিফ এন দেন ভেটার' (Brief an den Vater) বা 'বাবাকে লেখা চিঠি' থেকে জানা যায়, বাবাকে তিনি স্বৈরাচারী মনে করতেন। তবে তাঁর মা ছিলেন নম্র ও শান্ত।

6/11

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শেষে ম্যাক্স ব্রড নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে পরিচিত হন। যাঁর সঙ্গে কাফকার আজীবন বন্ধুত্ব ছিল। ম্যাক্স লক্ষ করেছিলেন, কাফকা অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির  এবং মিতভাষী। কাফকা আর ব্রড মিলে প্লেটো থেকে শুরু করে গুস্তাভ ফ্লবেয়ার পর্যন্ত নানা লেখা পড়েছেন, আলোচনা করেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দস্তয়ভস্কি, ফ্লবেয়ার, ফ্রানৎস গ্রিলপারসার আর হাইনরিখ ফন ক্লাইস্ট-- এই চার লেখকের লেখা পড়ে কাফকা সবে চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলেন।

7/11

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে পাশ করে চাকরিতে ঢোকেন কাফকা। পাশাপাশি লেখালেখিও শুরু করেন। তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল এক ইতালিয়ান বিমা কোম্পানি। অভিজ্ঞতা সুখের ছিল না। সকাল আটটা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করে লেখালেখিতে সময় দিতে পারছিলেন না বলে চাকরিই ছেড়ে দিলেন। পরে চাকরি নিলেন ‘Workers’ Accident Insurance Institute for the Kingdom of Bohemia’-তে। দৈনিক ছ'ঘণ্টার চাকরি। সঙ্গে চলল লেখালেখি। ১৯০৮ সালে কাফকা তাঁর প্রথম লেখা ছাপলেন।

8/11

 ১৯১৭ সালে কাফকার যক্ষ্মা ধরা পড়ল। ভয়ংকর ছোঁয়াচে এই রোগের চিকিৎসা তখনও তেমন না থাকায় নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন কাফকা। এই সময়েও লিখছেন আরেক মাস্টারপিস The Trial। যা পরে প্রকাশিত হয়। যক্ষ্মার জন্য কাফকাকে চাকরি থেকে পেনশন দিয়ে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখনও চালিয়ে যান লেখা। 

9/11

কিন্তু কাফকা ক্রমশ বিষাদে ডুবে যান। তাঁর প্রেম-জীবনও মসৃণ হয় না। মোটামুটি তিন জন প্রেমিকার কথা শোনা যায় তাঁর। কাফকার শেষ প্রেমিকার নাম ছিল ডোরা ডিয়ামান্ট। প্রত্যেককেই অসংখ্য চিঠি লেখেন। সেসবই অসাধারণ পত্রসাহিত্যের নজির হিসেবে রয়ে যায় তা। ১৯২৩ সালে কাফকা যখন একটু একটু করে ফুরিয়ে আসছেন তখনই ডোরার সঙ্গে পরিচয়। দুজনে মিলে ঠিকও করলেন তাঁরা প্যালেস্টাইন যাবেন, সংসার শুরু করবেন। রেস্টুরেন্ট খুলে ডোরা রান্না করবেন আর কাফকা হবেন ওয়েটার। তা আর সত্য হওয়ার সুযোগ হল না।

10/11

এদিকে প্রেমে ব্যর্থ,  স্বল্প রোজগেরে ক্ষীণজীবী মানসিক ভাবে ভঙ্গুর ও বিষাদাচ্ছন্ন কাফকা বন্ধু ম্যাক্সকে এক আশ্চর্য চিঠি লিখলেন।  প্রিয় বন্ধু ম্যাক্স, আর হয়তো যক্ষ্মা আমার পিছু ছাড়ছে না। তাই তেমনভাবে লেখালেখিও করা হয়ে উঠছে না। আমার লেখাগুলির ব্যাপারে তোমায় কিছু বলতে চাই। আমার প্রকাশিত পাঁচটি বই আর ছোটগল্পগুলি হয়তো কালস্রোতে হারিয়ে যাবে। আর আমার অপ্রকাশিত লেখাগুলির ব্যাপারে তোমায় বলছি, সব পাণ্ডুলিপি আর নোট পুড়িয়ে দিও। যদি পারো আমার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চিঠিগুলি সংগ্রহ করেও পুড়িয়ে দিও। পুড়িয়ে দেওয়ার আগে কেউ যেন সেসব পড়ে না দেখে সে ব্যাপারে আমার বিশেষ অনুরোধ রইল। তবে তুমি নিজে সে অনুরোধের বাইরে।   --ফ্রান্‌ৎস

11/11

বলাই বাহুল্য বন্ধুকে অত্যন্ত  ভালবাসলেও এক্ষেত্রে বন্ধুর কথা রাখেননি ম্যাক্স ব্রড। বরং তিনি নিজে সেসব লেখা পড়লেন। পড়ে বিস্মিত হলেন। আর যত্ন করে সেই সব লেখা প্রকাশ করলেন। জন্ম নিলেন পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম জিনিয়াস এক গদ্যকার। নিজের অজান্তেই কাফকা জন্ম দিলেন ‘Kafkaesque’ বলে নতুন এক ধারার।