এখানে রাস্তায় হাঁটতে-হাঁটতে বুনো শুয়োর বা হাতির সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াটাই রীতি...

Rabha People in Jalpaiguri: জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকের মরাঘাট বনাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদের একটি মেলা বনবস্তি। মূলত রাভা জনজাতি গোষ্ঠীর বাস এখানে, ননাই নদীর পাড়ে জঙ্গল ঘেরা গ্রামটিতে। কেমন আছে রাভা জনজাতি?

| Aug 12, 2023, 17:14 PM IST

প্রদ্যুৎ দাস: বহুদিন থেকেই অভিযোগ উঠছে, বনবিভাগের উদাসীনতা এবং জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে থমকে গিয়েছে রাভা বনবস্তির আর্থ সামাজিক উন্নয়ন। এমন মনোভাব অন্য কারও নয়, রাজ্য সরকারের  গ্রামীণ পর্যটন বোর্ডের। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকের মরাঘাট বনাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদের একটি মেলা বনবস্তি। মূলত রাভা জনজাতি গোষ্ঠীর বাস এখানে, ননাই নদীর পাড়ে জঙ্গল ঘেরা গ্রামটিতে।

1/7

জীবন-যাপন

এই গ্রামেরই মেয়ে দীপ্তি রাভা। একেবারে ছোটবেলায় ঘন জঙ্গলপথে পায়ে হেঁটে দূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার শুরু। এখন তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সরকারি অফিসার হওয়ার লক্ষ্যে বনবস্তির বাড়ি, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে শিলিগুড়িতে। সেখান থেকেই লড়াই করছেন ডাব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্যে।

2/7

কষ্টের মধ্যেও মুখে হাসি

কেন এই লড়াইটা লড়ছেন তিনি? কীভাবে প্রেরণা পেলেন? আসলে ছোট থেকেই তিনি দেখে আসছেন গ্রামে রাস্তা নেই। জঙ্গলের পথে জংলি হাতি, বুনো শুয়োরের মোকাবিলা করেই যাতায়াত, স্কুল-কলেজ, কাজ করতে হয়। তাই তিনি সরকারি অফিসার হতে চান। সরকারি অফিসার হলে গ্রামের মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে পারবেন। এমন কিছু করবেন যাতে আগামী প্রজন্মকে তাঁর মতো কষ্ট করতে না হয়।

3/7

আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে

চাষ-আবাদ করে, সুপুরি বিক্রি করেই চলে এই রাভা জনজাতি গোষ্ঠীর অধিকাংশ পরিবারের। এলাকার আর্থ-সামাজিক ছবিটা পরিবর্তন করার লক্ষ্যে রাজ্য গ্রামীণ পর্যটন পর্ষদের উদ্যোগে এখানে শুরু হয়েছিল প্রকল্প। এই প্রসঙ্গে বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য দেউদ রাভা জানান, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আমরা এই গ্রামে বেশ কয়েকটি হোম স্টে নির্মাণ করেছি, যেখানে থেকে একদিকে যেমন পর্যটকেরা জঙ্গলের স্বাদ নিতে পারবেন, সঙ্গে পর্যটকদের সামনে আমাদের রাভা জনজাতি গোষ্ঠীর যে নিজস্ব সংস্কৃতি সেটা উপভোগ করারও সুযোগ থাকছে।

4/7

রাভা ঘর-সংসার

তবে যেহেতু পর্যটকদের এই মরাঘাট বনাঞ্চলের ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দেয় না রাজ্য সরকারের বন বিভাগ, তাই আজ অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে মেলা বনবস্তিবাসীর বহু-আকাঙ্ক্ষিত এই হোমস্টে প্রকল্প। জঙ্গলের মাঝে থেকেও জঙ্গল সাফারির মতো সুযোগ না থাকায়  পর্যটকেরা এখানে ভ্রমণের জন্য আসছে না, এমনই অভিযোগ স্থানীয় বনবস্তিবাসী জগদানন্দ রায়েরও।  

5/7

স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন

জগদানন্দ রায় বলেন, এই বনবস্তির আর্থ-সামাজিক উন্নতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে জঙ্গলরক্ষার মন্ত্র। এখানে পর্যটকেরা আসবেন, থাকবেন, স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি হবে, গ্রামীণ পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে-- এমনই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু কোথায় কী? চাষবাস, গরু-শুয়োর পালন করে ছ'মাসের খাবার জোগাড় করা সম্ভব হয়, বাকি ছ'মাস গ্রাম ছেড়ে বাইরে যেতে হয় কাজের সন্ধানে। 

6/7

পর্যটন কি ব্যর্থ?

রাজ্য সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের গ্রামীণ পর্যটন বোর্ডের সদস্য তমাল গোস্বামী জানান, মেলা বনবস্তির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের পর্যটন মন্ত্রক অনেক সাহায্য করেছে। তিনি নিজে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই গ্রামের এথনিক কালচারকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।

7/7

রাভা জনজাতি অধ্যুষিত মেলা বনবস্তি

তবে নানা প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে, বিষয়টি জেলা প্রশাসন কিংবা বন দফতরের কাছে ততটা মনোযোগ পায়নি। বনবিভাগের উদাসীনতা এবং কোনও অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে আজও আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছে রাভা জনজাতি অধ্যুষিত মেলা বনবস্তি।