আজ জন্মদিন কুমায়ুনের ত্রাতা `কার্পেট সাহেবে`র

Soumitra Sen Sun, 25 Jul 2021-5:58 pm,

ভয়ঙ্কর কোনও শিকার ধরার সময় তিনি একাকী থাকতে পছন্দ করতেন। গাড়িতে নয়, পায়ে হেঁটেই পথ অতিক্রম করতেন। কখনও  তিনি 'রবিন' নামে তাঁর কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে শিকারে যেতেন। শিকারের সময়ে অন্যদের জীবনরক্ষার্থে নিজে অনেক বড় ধরনের ঝুঁকিও নিতেন। ক্রমে তিনি পাহাড়ি অঞ্চলের গরিব মানুষগুলির কাছে হয়ে উঠেছিলেন দেবতার মতো-- ত্রাতা, রক্ষাকর্তা, বন্ধু, অভিভাবক।

 তিনি আর কেউ নন। জিম করবেট। আজ তাঁর জন্মদিন। ১৮৭৫ সালের এই ২৫ জুলাইয়ের দিনেই ভারতের কুমায়ুনে নৈনিতাল শহরে জন্ম জিমের। ইংরেজ এই শিকারি কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমী ও একজন একনিষ্ঠ পরিবেশ সংরক্ষণবাদীও। তাঁর মৃত্যু ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে। তাঁর নামানুসারে ভারতের রয়েছে বিখ্যাত জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক।

 নিজেরা আট ভাইবোন, তবে জিম বেড়ে উঠেছিলেন ১৬ জন সন্তানের বড় এক পরিবারে। তাঁর বাবা ক্রিস্টোফার করবেট নৈনিতালের ডাকঘরে পোস্টমাস্টার পদে নিয়োগ পাওয়ার পরে ১৮৬২ সালের দিকে নৈনিতালে চলে আসেন। মাত্র চার বছর বয়সে জিম করবেট তাঁর বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর তার বড় ভাই টম নৈনিতালের পোস্টমাস্টার পদে নিযুক্ত হন। 

 

খুব অল্প বয়স থেকেই জিম কালাধুঙ্গিতে তাঁদের বাড়ির চারিপাশের বন এবং বন্যজীবনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তরুণ বয়সে তো ঘন ঘন জঙ্গলভ্রমণে যেতেন। এর ফলে তিনি বেশিরভাগ পশুপাখিকেই তাদের ডাক শুনে চিনতে পারার ব্যাপারটা শিখে নিয়েছিলেন। আরও কিছু পরে তিনি বুনো পশুদের অনুসরণ করতে শেখেন। ক্রমশ একজন ভাল মানের শিকারি হয়ে ওঠেন।

 

১৯০৭ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে করবেট মোট ৩৩টির মতো মানুষখেকো বাঘকে গুলিবিদ্ধ করেছিলেন। যদিও এদের মধ্যে মাত্র ডজনখানেককে নথিভুক্ত হয়েছিল। তাঁর শিকার করা বিগ ক্যাটেরা ১২০০-এর উপর পুরুষ- মহিলা এবং শিশুদের হত্যা করেছিল। 

 

জিমের প্রথম শিকার করা বাঘটি ছিল চম্পাবতের। যেটি চম্বাবতের মানুষখেকো হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। প্রায় ৪৩৬টি নথিভুক্ত মৃত্যুর জন্যে এই বাঘটি দায়ী ছিল। বাঘ ছাড়াও তিনি অন্ততপক্ষে দুটো মানুষখেকো লেপার্ডও হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৯১০ সালে তিনি পানারে প্রথম লেপার্ডটিকে হত্যা করেছিলেন। যেটি প্রায় ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছিল বলে খবর। আর দ্বিতীয়টি ছিলো কুমায়ুনের মানুষখেকো লেপার্ড। প্রায় আট বছর ধরে যেটি দৌরাত্ম্য করেছিল এবং হত্যা করেছিল ১২৬-এর বেশি মানুষকে। 

জিম করবেটের সঙ্গে থাকতেন তাঁর বোন ম্যাগি। তবে ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে তাঁরা কেনিয়ায় চলে যান। তাঁদের বাড়িটিকে এক মহিলাকে বিক্রি করে দিয়ে যান। যেটি পরবর্তীতে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। এর নামকরণ হয় 'জিম করবেট জাদুঘর'। ভারতে থাকতেই তাঁর একটি বই বেরিয়েছিল। তবে কেনিয়ায় গিয়েই করবেট পুরোপুরি লেখালিখি শুরু করেন। 

 

তাঁর নামে (অধুনা) ভারতের উত্তরাখন্ডে 'জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক' নামে একটি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। তাঁর রচিত বইগুলি আজও পাঠককে আকর্ষণ করে। তাঁর শিকার কাহিনীগুলি নিয়ে হলিউডে একাধিক ছবি নির্মিত হয়েছে।

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link