`বাঁচতে হবে, বাড়ি ফিরতে হবে`, টানা ১৩ দিন সাইকেল চালিয়ে তামিলনাড়ু থেকে ডায়মন্ডহারবার ফিরলেন যুবক

Sat, 02 May 2020-11:27 am,

অধীর রায় : মনের জোর আর লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে অসাধ্য সাধন করা যায় । হাতেকলমে সেটাই করে দেখালেন ২৩ বছরের আতিবুল শাহ । ডায়মন্ডহারবারের ২ নম্বর ব্লকের সিমলা গ্রামের বাসিন্দা আতিবুল মনের জোর আর অদম্য সাহসের উপরে ভরসা করে ১৩ দিন ধরে সাইকেল চালিয়ে সুদূর তামিলনাড়ু থেকে ফিরে এলেন ডায়মন্ডহারবারের গ্রামের বাড়িতে। বুধবার সকালে ডায়মন্ডহারবার-২ ব্লকের সিমলা গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসার পর দুশ্চিন্তা মুক্ত হয় আতিবুলের পরিবার। 

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আতিবুল বছর পাঁচেক ধরে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও চেন্নাই সহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি বা বেসরকারি ভবনে ঠিকাদার সংস্থার অধীনে এসি মেশিন বসানোর কাজ করতেন। বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে মাস কয়েক থেকে কাজ করে আবার বাড়ি ফিরে আসেন। এবারে লকডাউনের দিন ১৫ আগে আতিবুল তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে কাজ শুরু হয়নি। এরমধ্যেই লকডাউন  শুরু হয়ে যাওয়ায় সমসায় পড়ে যান তিনি। একমাস লকডাউনে তাঁর খাওয়ায় টাকাও শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে দিন ১৫ আগে বাড়িতে ফোন করে টাকা চান। 

গরিব পরিবার কোনওমতে ধারদেনা করে ছেলের জন্য ৩০০০ টাকা পাঠিয়েছিল। কিন্তু আতিবুলের মাথায় একটাই চিন্তা ছিল যে, তাঁকে যেভাবেই হোক বাড়িতে ফিরতে হবে। পরিবারের পাঠানো টাকা হাতে পাওয়ার পরই তাই ওই টাকায় সাইকেল কিনে ফেলেন। তারপর ওই সাইকেলে করেই বাড়ির পথে রওনা দেন আতিবুল। এক সময় টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে যায় তাঁর। খিদে নিবারণের জন্য রাস্তায় সাইকেল দাঁড় করিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে খাবার চেয়ে পেট ভরান। সারা দিন ধরে সাইকেল চালিয়ে রাতে কোনও মন্দির বা ব্রিজের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তার পুলিসরাও আতিবুলকে খাবার কিনে দিয়ে বা টাকা দিয়ে সাহায্যে করেছে। এইভাবে ১৩ দিন ধরে টানা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন আতিবুল। 

বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছে। দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। অবশেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসায় খুশি তাঁরা। আতিবুল জানিয়েছেন, "আমি কলকাতায় ফিরব বলে পুলিসের কাছে রাস্তা জানতে চাইলে ওরা বলে দিত। আমার সব কিছু শুনে ওরা কেউ ৫০ টাকা, কেউ আবার ১০০ টাকা দিয়েছে।  ফেরার সময় কদিন বৃষ্টির জন্য সমস্যা হচ্ছিল। প্রতিদিন সকালে সাইকেল চালাতে শুরু করতাম। খিদে পেলে তবেই কোথাও দাঁড়িয়ে দোকানে হাত পেতে খাবার চেয়ে খেতাম।" এখন বুধবার সকালে আতিবুল গ্রামের বাড়ি ফিরতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। তামিলনাড়ু থেকে এতগুলো রাজ্য পেরিয়ে আসায় তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেয় গ্রামবাসী। তাঁরাই মাহাবুবার গায়েনের সহযোগিতায় আতিবুলকে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা আপাতত তাঁকে ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, করোনা মোকাবিলায় ২৪ মার্চ থেকে দেশে জারি লকডাউন। প্রথম দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২১ দিনের লকডাউন জারি করে কেন্দ্র। লকডাউন জারি হওয়ার সময় থেকেই আন্তঃরাজ্য রেল, বাস সহ সব ধরনের পরিবহন পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। সিল করে দেওয়া হয় আন্তঃরাজ্য সীমানা। ২১ দিনের লকডাউনের পর দ্বিতীয় দফায় ৩ মে পর্যন্ত ফের ১৯ দিনের লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশে সংক্রমণের হার এখনও বেড়ে চলায় সোমবার ৪ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ফের তৃতীয় দফায় ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে তৃতীয় দফায় দেশের গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনের জন্য বেশ কিছু ছাড় রয়েছে। যদিও রেড জোনে সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। অন্যদিকে, ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিক, পড়ুয়া, পর্যটকদের ঘরে ফেরাতে শুক্রবারই বিশেষ ট্রেন চালানোর অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আর তারপরই 'শ্রমিক স্পেশাল' ট্রেন চালানো কথা ঘোষণা করেছে রেল। 

ZEENEWS TRENDING STORIES

By continuing to use the site, you agree to the use of cookies. You can find out more by Tapping this link