East Bengal | Asean Cup | Subhash Bhowmick : আসিয়ান জয়ের ১৯ বছর! নেই আজ সুভাষ ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে একাধিক সফল কোচ রয়েছেন। তবে বাংলার সুভাষ ভৌমিক যা করেছিলেন তা কিন্তু সোনার হরফে লেখা থাকবে। বিদেশের মাটিতে গিয়ে একের পর এক বিদেশি দলের চোখে চোখে রেখে শুধু কথাই বলেলনি তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, কত ধানে কত চাল!
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ডেস্ক: তারিখ ২৬ জুলাই, সাল ২০০৩। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে 'রেড লেটার ডে'। সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গল ইতিহাস লিখেছিল বিদেশের মাটিতে। বাইচুং, অ্যালভিটো, ডগলাস, ষষ্ঠী, চন্দন, সন্দীপ, ওকোরো, সুলে মুসা ও এম সুরেশরা স্বপ্নই দেখেননি শুধু, স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছিলেন প্রিয় কোচের হাত ধরে। জাকার্তায় থাই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেক তেরো সাসানাকে হারিয়েই বিশ্বের দরবারে লাল-হলুদ মশালের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আসিয়ান কাপ জয়ের কেটে গেল ১৯ বছর। তুবও যেন আশিয়ান কাপ নামটা শুনলেই লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে আচমকাই দোলা দেয়।
গ্রুপ লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সাসানার কাছে ০-১ হেরে ইস্টবেঙ্গল শুরু করেছিল আসিয়ান অভিযান। সেসময় সাসানা ছিল এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। অনেকেই মনে করেছিলেন যে, বৈতরণী বোধ হয় পার করতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু না, সুভাষের ফৌজ দ্বিতীয় ম্যাচেই ফিলিপাইন আর্মিকে এক-আধটা নয়, হাফ ডজন গোল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল সব প্রতিপক্ষকে, এবার ভয় পেতে শুরু করো, ইস্টবেঙ্গল আসছে...। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্দোনেশিয়ার পারসিতা তাঙ্গেরাংকে ২-১ গোলে হারায় ইস্টবেঙ্গল। সেমিফাইনালও কম নাটকীয় ছিল না। ইন্দোনেশিয়ার পেত্রোকিমিয়া পুত্রার বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খেলা ১-১ ছিল। টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গল ৭-৬ জিতে ফাইনাল খেলে। যে দলের কাছে হেরে আসিয়ান শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল, সেই দলের বিরুদ্ধেই বদলার ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল ৩-১ জিতে খেতাব নিয়ে আসে ভারতে। আবারও প্রমাণিত হয়ে যায়, ফুটবল দেবতা জুলাই মাসেই উজাড় করে দেন। মোহনবাগানের ঐতিহাসিক শিল্ড জয় থেকে ইস্টবেঙ্গলের আসিয়ান সেরা হওয়া! সবই এই জুলাই মাসে।
প্রথম কোনও ভারতীয় দল হিসেবে এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের ক্লাব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইস্টবেঙ্গল দেখিয়ে দিয়েছিল, যে ইচ্ছা থাকলে খেলায় অসম্ভব বলে কিছু নেই। আসিয়ান জয়ের আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোনও ভারতীয় ফুটবল ক্লাবের এত বড় সাফল্য ছিল না। আমন্ত্রিত দল হিসাবে এই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে, শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরা! ঠিক যেন রূপকথার গল্প! ইস্টবেঙ্গলের কলকাতায় ফেরার মুহূর্তটি কখনও ভোলা যাবে না। সুভাষের টিম জাকার্তা থেকে দমদম বিমানবন্দরে পা রেখেছিল রাত একটা দেড়টা লাগাদ। বাইচুংরা খেলার ক্লান্তি ও জেট ল্যাগ বুঝতে পারেননি তখন। কারণ তাঁদের স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরের বাইরে শুধু ইস্টবেঙ্গল নয় ভারতীয় দলের পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন প্রায় দশ হাজার ভক্ত। জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরাও পরে এই জয়ে সামিল হয়ে পড়েন। বিগত ১৯ বছরেও আসিয়ান জয় অমলীন হয়নি।
ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে একাধিক সফল কোচ রয়েছেন। তবে বাংলার সুভাষ ভৌমিক যা করেছিলেন তা কিন্তু সোনার হরফে লেখা থাকবে। বিদেশের মাটিতে গিয়ে একের পর এক বিদেশি দলের চোখে চোখে রেখে শুধু কথাই বলেলনি তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, কত ধানে কত চাল! ব্র্যান্ড বাঙালি মগজাস্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে এসেছিলেন তিনি। আসিয়ান জয় শুধু ইস্টবেঙ্গলের নয়, বাংলার জয়, বাঙালির বুদ্ধিমত্তা ও ফুটবল আবেগেরও জয়। আসিয়ান জয়ী ইস্টবেঙ্গল এটাও দেখিয়েছিল যে, মহাযুদ্ধে নামার আগের প্রস্তুতি পর্বটাই অনেক হিসেব বদলে দিতে পারে। আসিয়ান কাপের প্রস্তুতির জন্যই কলকাতার ফুটবল দেখেছিল এক অন্য অধ্যায়। আসিয়ানের প্রস্তুতি আর পাঁচটা টুর্নামেন্টের মতো ছিল না। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পাশের পাঁচতারা হোটেলে ফুটবলারদের নিয়ে এসেছিলেন সুভাষ। আজ থেকে ১৯ বছর আগে ভারতীয় ফুটবলে পাঁচতারা হোটেল গল্পের মতো শোনাবে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের সৌজন্যেই প্রথমবার ভারতীয় ফুটবলে জুড়েছিল, জাকুজি, আইসবাথ, প্যারাসুট ট্রেনিংয়ের মতো শব্দগুলি।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই ভারত তথা ময়দানের প্রবাদপ্রতিম কোচ সুভাষ ভৌমিক প্রয়াত হন। আসিয়ান কাপের নাম যতবার উচ্চারিত হবে ততবার উচ্চারিত হবে সুভাষ ভৌমিকের নামও। আসিয়ান গৌরবগাথাই আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে আলাদা জায়গা করে দিয়েছিল। সৌজন্যে অবশ্যই সুভাষ ভৌমিক। প্রতিবছর এই দিনে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে কেক কাটা হয়। তবে চলবি বছর কোনও কেক কাটা হল না। কারণ নেই আজ সুভাষ!