ইডেনের আত্মকথা: বহু ইতিহাসের সাক্ষী দাঁড়িয়ে 'গোলাপি' ইতিহাসের দোরগোড়ায়
কপিল, আজহার, লক্ষ্মণ, হরভজন, রোহিতের ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি দলগত সাফল্যের সাক্ষী আমি।
সুখেন্দু সরকার
স্মৃতি কি সততই সুখের? হয়তো বা! নাকি সুখ দুঃখের মাঝে এক অসম্পূর্ণ দোলাচল? ফেলে আসা সময়ের কথা বললেই আমার মনে পড়ে ...
১৯৩৪ সালের কথা। ডগলাস জার্ডিনের দল এসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলল এখানে। সেই পরিচিতি পেলাম। তখন থেকেই আমি ক্রিকেটের মহাতীর্থ- আমি ইডেন গার্ডেন্স। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আমার সঙ্গে। বহু ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী আমি। অনেক ক্রিকেটারের উত্থান-পতন আমার দেখা। সে আজহারউদ্দীনের মতো তরুণ ক্রিকেটারের উদ্ধত উত্থানই হোক বা আসিফ ইকবালের বিদায়।
১৯৮৭-তে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী আমি।
১৯৯১-এ বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়ক কপিল দেবের ওডিআই হ্যাটট্রিকটাও আমার দেখা।
২০০১ সালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক টেস্ট তো এক লহমায় বাড়িয়ে দিয়েছে আমার অহংকার! ভিভিএস লক্ষ্মণের অনবদ্য ২৮১ থেকে দ্রাবিড়-লক্ষ্ণণের অমর পার্টনারশিপ। আর শেষ বেলায় হরভজনের হ্যাটট্রিক। স্টিভ ওয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দিয়েছিল আমার ঘরের ছেলে (সৌরভ গাঙ্গুলি)। তখন আমায় কে পায়!
মহারাজের শতরানও আমি দেখেছি।
২০১৪ সালে হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় রোহিত শর্মার চার-ছয়ের সুনামিও আমি দেখেছি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রোহিতের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের (২৬৪ রান) সাক্ষীও আমি।
কপিল, আজহার, লক্ষ্মণ, হরভজন, রোহিতের ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি দলগত সাফল্যের সাক্ষী আমি। ২০১৬ সালে দেখেছি ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মহিলা ও পুরুষ দলের চ্যাম্পিয়ন্স ডান্সে তখন আমার পাগলপারা অবস্থা।
সাফল্য যেমন আছে তেমনই '৬৭-র দাঙ্গার পাশাপাশি ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর কিংবা '৯৯-এর ভারত-পাকিস্তান টেস্টে যা হয়েছিল সে লজ্জা তো আমারই। অনেক পূর্ণতার মাঝেই কিছু অপূর্ণতা থেকে যায়। দিন-রাতের গোলাপি বলে টেস্টের মধ্যে দিয়েই আপাতত সে পূর্ণতার খোঁজে আমি।
Kolkata gearing up for the #PinkBallTest #TeamIndia #INDvBAN pic.twitter.com/16p66AvHTn
— BCCI (@BCCI) November 20, 2019
ভারতের মাটিতে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট। মুকুটে উজ্জ্বল পালক, গর্বের অংশীদার হয়ে সেই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের জন্য আমি প্রস্তুত। গোলাপি আভায় রাঙা হয়ে উঠুক আমার ক্যানভাস। নন্দন কাননে রচিত হোক ক্রিকেট সাহিত্যের নতুন রূপকথা। পিঙ্ক টেস্টে লালিত হোক আমার শহর ... আমার কলকাতা!
আরও পড়ুন - গোধূলির কঠিন সময়ে গোলাপি বলে অনুশীলন ভারতের, মরিয়া ব্যাটিং বিরাটের