Exclusive: শীর্ষে থাকা Magnus Carlsen-কে হারানো থেকে Sachin Tendulkar-এর প্রশংসা, অকপট তরুণ গ্র্যান্ড মাস্টার Rameshbabu Praggnanandha
ইতিহাস গড়ল ১৬ বছরের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ।
সব্যসাচী বাগচী: দাবার দুনিয়ায় চমকে দিলেন ভারতের তরুণ গ্র্যান্ড মাস্টার রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ (Rameshbabu Praggnanandha)। শিশুসুলভ মুখ। বুদ্ধিদীপ্ত দু’চোখে শান্ত চাহনি। বয়স মোটে ১৬। কিন্তু মগজাস্ত্রে ঠাসা ভারতের এই কিশোর দাবাড়ু প্রজ্ঞানন্দই ইতিহাস গড়ে ফেলেছে্ন। ম্যাগনাস কার্লসেনকে (Magnus Carlsen) হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছেন এই তরুণ গ্র্যান্ড মাস্টার। এয়ারথিংস মাস্টার্স (Online Chess Compitition) নামের একটি অনলাইন দাবার প্রতিযোগিতায় এই কান্ড ঘটান প্রজ্ঞানন্দ। কালো রংয়ের ঘুঁটি নিয়ে খেলছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। ৩৯তম চালেই তিনি হারিয়ে দেন কার্লসেনকে। এর আগে অবশ্য টানা তিনটি ম্যাচে জিতেছিলেন কার্লসেন। কিন্তু ভারতের তরুণ গ্র্যান্ড মাস্টারের কাছে থমকে গেল তাঁর দৌড়।
অসাধ্য সাধন করায় ক্ষুদে দাবাড়ুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister Of India) নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) থেকে শুরু করে সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। মাত্র ১৬ বছর বয়সে অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতায় পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও শীর্ষে থাকা কার্লসেনকে হারিয়ে অঘটন করার পর থেকে শুভেচ্ছা জোয়ারে ভাসছে্ন প্রজ্ঞানন্দ। কার্লসেনকে হারানোর পর থেকে বদলে গিয়েছে ছেলেটির জীবন। এত ব্যস্ততার মধ্যে জি ২৪ ঘণ্টাকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন 'বিস্ময় বালক'।
প্রশ্ন: কামব্যাক করে এমন জয় কতটা আত্মবিশ্বাস বাড়াল?
প্রজ্ঞানন্দ: অবশ্যই খুব খুশি হয়েছিলাম। অবশ্যই এই জয় আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে। এর কারণ দুটি। প্রথম, ম্যাগনাস কার্লসেন শুধু শীর্ষেই নেই। ওঁ একজন কিংবদন্তি। এছাড়া কার্লসেন এগিয়ে ছিল। তাই কামব্যাক করে জেতার জন্য এই ম্যাচটা আমার কাছে আরও স্পেশাল।
প্রশ্ন: কার্লসেনের বিরুদ্ধে খেলার জন্য কি আলাদা চাপ ছিল?
প্রজ্ঞানন্দ: একেবারেই না। সেই ম্যাচে বাড়তি কোনও চাপ ছিল না। আমার কাছে এটা ছিল অন্য সাধারণ ম্যাচের মতো। আগেও ওঁর বিরুদ্ধে খেলেছি। তাই জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
প্রশ্ন: কী পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বনাথন আনন্দ?
প্রজ্ঞানন্দ: অনেক ছোটবেলা থেকেই বিশ্বনাথন আনন্দ আমাকে গাইড করছেন। প্রতিটি বড় প্রতিযোগিতা খেলতে নামার আগে ওঁর কাছ থেকে মূল্যবান পরামর্শ পাই। এ বারও পেয়েছি। প্রতিযোগিতা চলার সময় আমি কোনও ভিডিও দেখি না। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখি। এগুলো মেনে নিজের অনেক উন্নতি হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার রোল মডেল?
প্রজ্ঞানন্দ: আমার রোল মডেল এক ও অদ্বিতীয় বিশ্বনাথন আনন্দ। ওঁর অনেক খেলা খুব কাছ থেকে দেখেছি। এবং সেখান থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। আগে আমি শখ হিসেবে দাবা খেলতাম, কিন্তু পরে সেটা প্যাশনে পরিণত হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে তিনি যখন ফিরেছিলেন, তখন ওঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল। সেটা আমার কাছে বিশেষ মুহূর্ত ছিল। এরপর থেকে আমি ওর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সচিন তেন্ডুলকরের কাছ থেকেও প্রশংসা পেলেন। কতোটা আত্মবিশ্বাস বাড়াল?
প্রজ্ঞানন্দ: আমি খুব খুশি। এটা একটা বড় পাওনা। দেখে ভাল লাগছে যে এত মহান ব্যক্তিত্বরা আমাকে সমর্থন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁদের আশীর্বাদ আমাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: পড়াশোনা ও দাবার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়?
প্রজ্ঞানন্দ: আমার স্কুল সবসময় আমাকে সমর্থন করে। ওদের জন্যই দেশে-বিদেশে সব প্রতিযোগিতায় খেলতে পাই। স্কুলের মাস্টারমশাইরা আমাকে উৎসাহ দেন। তাই আমি সময় পেলেই বই-খাতা নিয়ে বসে যাই। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমার নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্য নেই। কারণ আমার পুরো জীবন দাবাকে জুড়ে।
প্রশ্ন: আপনার তো ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনও খুব পছন্দের।
প্রজ্ঞানন্দ: হ্যাঁ, আমি অবসর সময়ে অন্যান্য খেলাও খেলি। আমি টেবিল টেনিস এবং ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি। এর পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন এবং ক্রিকেট দেখতেও উপভোগ করি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক।
প্রশ্ন: আপনি নাকি রজনীকান্তের অন্ধভক্ত?
প্রজ্ঞানন্দ: লেখাপড়ার সঙ্গে দাবা খেলা নিয়ে বেশি সময় কেটে গেলেও সিনেমা দেখতে খুব ভাল লাগে। বিশেষ করে রজনীকান্তের সিনেমা। ওঁর কোনও সিনেমা মিস করিনি।
প্রশ্ন: কোচ বি আর.রমেশ বলেন, 'আপনার মাথা নাকি কম্পিউটারের মতো'! এটা কি সত্যি?
প্রজ্ঞানন্দ: এটা আমার পক্ষে বলা খুব কঠিন। আসলে আমি পরিশ্রম করতে ভালবাসি। তাঁর অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা যখন ওপেনিং নিয়ে সময় ব্যয় করে, তখন আমি এন্ড গেম শিখে নিয়েছিলাম। এর পিছনে অবশ্য আমার বাবা-মা'র অবদান রয়েছে। বাবা একটা সময় চুটিয়ে দাবা খেলতেন। দিদি দাবা খেলেন। ওদের দেখেই পরিশ্রম করতে শিখেছি।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যতের লক্ষ্য?
প্রজ্ঞানন্দ: আমি দৈনন্দিন ৭-৮ ঘণ্টা দাবা প্রতিদিন অনুশীলন করি। তাই এই সাফল্য নিয়ে না ভেবে ভবিষ্যতে আরও ভাল দাবা খেলার কথা ভাবছি। কারণ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমার একমাত্র লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: Wriddhimam Saha Exclusive: বিতর্কিত টুইট সিরিজ থেকে IPL-এ নতুন অঙ্গীকার, অকপট ঋদ্ধিমান
আরও পড়ুন: Wriddhiman Saha: বোর্ডের চুক্তির অঙ্ক দেখিয়ে ঋদ্ধিকে সমস্যায় ফেলার নতুন ছক শুরু হল!