EXCLUSIVE: পড়াশুনো নিয়ে ভেবো না, ক্রিকেট খেলতে চাইলে খেলো, বলেছিলেন বাবা
বাবা পেশায় ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। এহেন পরিবারের ছেলে ময়াঙ্ক বলেন, 'পরিবারের তরফে প্রতি পদক্ষেপে সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। বাবা আমাকে কখনও ক্রিকেট খেলতে বাধা দেননি। তবে আমার মনে হয়েছিল পড়াশুনোটাও সমান দরকারি। তখন বাবা বলেন, তাতে একটু খামতি হলেও কোনও সমস্যা নেই। ক্রিকেটাই যখন তোমার ভালবাসা তখন মনপ্রাণ দিয়ে সেটাই খেলো।'
মৃদুলা ভরদ্বাজ
ঘরোয়া ক্রিকেটে লাগাতার ভাল পারফর্মেন্সের জোরে ভারতীয় দলের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কর্ণাটকের ক্রিকেটার ময়াঙ্ক আগরওয়াল। তবে এখনো খানিকটা অপেক্ষা করতেই হবে তাঁকে। তবে তা নিয়ে মোটেও ভাবিত নন ময়াঙ্ক। তাঁক কথায়, সময় এলে ঠিক জায়গা হবে দলে। সচিন তেন্ডুলকরকে দেখে ব্যাট হাত তুল নিয়ছিলন ময়াঙ্ক। আর এখন সেই ব্যাটেই রানের বন্যা। ইতিমধ্যে সচিন, বিরাটের মতো কিংবদন্তীদের একাধিক রেকর্ডও ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন তিনি।
রণজি ট্রফির গত মরসুমে ১১৬০ রান করেন ময়াঙ্ক। গড় ছিল ১০৫.৪৫। এর মধ্যে ছিল ৫টি শতক। বিজয় হাজারে ট্রফিতেও ম্যাচ প্রতি গড়ে ১০০ রান করে মোট ৭২৩ রান করেন তিনি। ভারতের 'এ' তালিকাভুক্ত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসাবে রেকর্ড করেছেন তিনি। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে এক মরসুমে ২,০০০-এর বেশি রান সংগ্রহ করার নজিরও গড়েছেন ময়াঙ্ক। এর মধ্যে রয়েছে ৮টি শতক ও ৯টি অর্ধশতক।
সচিনকে দেখে ঠিক করে ফেলেছিলাম ক্রিকেটটাই খেলব
ক্রিকেট জীবনের শুরুর দিনগুলি নিয়ে বসতে গিয়ে ময়াঙ্ক জানিয়েছেন, সচিন দেখেই ঠিক করেছিলাম ক্রিকেট খেলব। তিনি বলেন, '১০ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। গরমের ছুটিতে গ্রীষ্মকালীন শিবির হত। সেই শিবিরেই আমার ক্রিকেট খেলার শুরু।'
ক্রিকেটের প্রতি আমার ভালবাসা সচিনকে ঘিরে। ময়াঙ্ক বলেন, 'সচিনকে ক্রিকেট খেলতে দেখে অবিভূত হতাম। ওকে দেখে আমারও ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা প্রবল হয়ে ওঠে। জানতাম না পারব কি না, তবে চেষ্টার কসুর করব না বলে ঠিক করে নিয়েছিলাম তখনই। সেই আমার ক্রিকেটের শুরু। স্কুলে গরমের ছুটিতে ক্যাম্পে যেতাম। এভাবেই ধীরে ধীরে ক্রিকেট খেলতে থাকি।
দশমের পরই সিদ্ধান্ত
ময়াঙ্কের কথায়, দশমের বোর্ড পরীক্ষা পাশ করার পরই ক্রিকেটকে কেরিয়ার হিসাবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তিনি বলেন, 'তখন সবে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করেছি। বয়স ১৫ কি ১৬। তখনই পড়াশুনো আর ক্রিকেটের মধ্যে আমি ক্রিকেটকে বেছে নিই। ঠিক করি ক্রিকেটকেই পেশা করব।'
সঙ্গে চলে পড়াশুনোও
তবে ক্রিকেট খেলতে পরিবারের তরফে কোনও বাধা আসেনি বলে জানিয়েছেন ময়াঙ্ক। বাবা পেশায় ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। এহেন পরিবারের ছেলে ময়াঙ্ক বলেন, 'পরিবারের তরফে প্রতি পদক্ষেপে সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। বাবা আমাকে কখনও ক্রিকেট খেলতে বাধা দেননি। তবে আমার মনে হয়েছিল পড়াশুনোটাও সমান দরকারি। তখন বাবা বলেন, তাতে একটু খামতি হলেও কোনও সমস্যা নেই। ক্রিকেটাই যখন তোমার ভালবাসা তখন মনপ্রাণ দিয়ে সেটাই খেলো।'
সচিন নয়, রোল মডেল সহবাগ
সচিনের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেট খেলা শুরু করলেও ময়াঙ্কের রোল মডেল কিন্তু বীরেন্দ্র সহবাগ। ময়াঙ্কের কথায়, 'সহবাগ খুব সাবলীলভাবে ক্রিকেট খেলেন। ওনার খেলার ধরন আমার ভাল লাগে।'
ঘরোয়া ক্রিকেটই উত্তরণের সিঁড়ি
ঘরোয়া ক্রিকেটকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ময়াঙ্ক। তিনি বলেন, 'ঘরোয়া ক্রিকেটই খেলোয়াড়ের ভিত্তি তৈরি করে। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট বেশ মজবুত। কেউ ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করলে তার ফল সে পাবেই।'
ফরম্যাট নয়, প্রতিভাটাই গুরুত্বপূর্ণ
রণজি ট্রফি, সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি ও বিজয় হাজারে ট্রফিতে ময়াঙ্কের পারফর্মেন্স চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। এহেন ময়াঙ্কের কাছে যদিও সব ফরম্যাটই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় খলোয়াড়ের যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত। কারণ প্রতিভা সব সময় স্বীকৃতি পায়, ফরম্যাটটা গৌন।
ভারতীয় দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুললেন না মুখ
টিম ইন্ডিয়ায় সুযোগ নিয়ে যদিও কোনও কথা খরচ করেননি ময়াঙ্ক। তাঁর কথায়, 'যা যখন পাওয়ার তা তখনই পাবেন। যা আপনার হাতে নেই তা নিয়ে ভেবে বা কথা বলে কী লাভ? যা করছেন করতে থাকুন। যা হওয়ার তা কেউ রুখতে পারবে না।'
বলে রাখি, গত বেশ কয়েক বছর ধরে টিম ইন্ডিয়ায় ময়াঙ্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জল্পনা চলছে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের মুখ্য নির্বাচক এমএসকে প্রসাদের কথায়, 'আমার সঙ্গে ময়াঙ্কের কথা হয়েছে। আমি ওকে বলেছি, কোথায় দাঁড়িয়ে আছো তা নিয়ে বিভ্রান্ত হবে না। দলে থাকুক বা না-থাকুক, আমাদের কর্তব্য প্রতিটি খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলা। ময়াঙ্ককে আমি বলেছি ও খুব ভাল করছে। ও খুব তাড়াতাড়ি দলে সুযোগ পাবে।'
আইপিএল-এ খেলা বড় পাওনা
ময়াঙ্কের কথায়, 'আইপিএল খেলোয়াড়দের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের আইপিএল খুব সাহায্য করে। বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার সুযোগ ও তাঁদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার অভিজ্ঞতা অনেক কাজে লাগে। তাছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ আইপিএল দেখেন। তাঁদের সামনে খেলতে পারার মজাই আলাদা।'
তিনি বলেন, 'আইপিএল শেখার আদর্শ মঞ্চ। এখানে গোটা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার সুযোগ মেলে। বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলে বোঝা যায় যে কোথায় কতটা সংশোধন দরকার।'
শেন ওয়ার্নকে খেলতে চাই
ব্যাটসম্যান হিসাবে শেন ওয়ার্নের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে ময়াঙ্কের। তাঁর কথায়, 'সুযোগ পেলে আমি ওয়ার্নের বল খেলতে চাই। তবে কোনও বোলারকেই ভয় পাই না।'
চমকে দিয়েছিলেন প্রেমিকাকে
প্রণয়ের কথা বলতে গিয়ে একটু লাজুক হয়ে পড়েছিলেন ময়াঙ্ক। তিনি বলেন, 'আমি খুন লাজুক। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। আমি আমার প্রেমিকাকে লন্ডনে প্রোপোজ করেছিলাম। পড়াশুনো করতে তখন লন্ডনে গিয়েছিলেন ময়াঙ্কের প্রেমিকা। তখনই লন্ডনে গিয়ে তাঁকে প্রোপোজ করে চমকে দিই।'
সব খেলোয়াড়ই সেরা
টিম ইন্ডিয়ার সেরা খেলোয়াড় বাছতে গিয়ে ময়াঙ্ক কিন্তু বেশ সাবধানী। তিনি বলেন, 'দলে সব খেলোয়াড়েরই নির্দিষ্ট একটি দায়িত্ব থাকে। আমি কোনও খেলোয়াড়ের তুলনা বা তাঁকে নম্বর দেওয়ায় বিশ্বাসী নই। আমার মনে হয় প্রতিটি খেলোয়াড়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।