সৌদি আরব: ২ ('৪৮ সালে আল-শেহরি, '৫৩ সালেম আলদসরি) 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আর্জন্টিনা: ১ ('১০ পেনাল্টি- মেসি) 


সব্যসাচী বাগচী 


'ক্রিকেট ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা'। যারা এত বছর এই কথাটা লিখে আসতেন, তাঁরা মঙ্গলবার ৮০ হাজারের কাতারের (Qatar) লুসেল স্টেডিয়ামে (Lusail Stadium) আয়োজিত আর্জেন্টিনা (Argentina) বনাম সৌদি আরবের (Saudi Arabia) ম্যাচ দেখে থাকলে, ফুটবলের ক্ষেত্রেও এই বাক্য ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন। প্রথমে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার পরেও, অফসাইডের জন্য তিন-তিনটি গোল বাতিল হওয়া। এবং প্রথমার্ধে একেবারে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো গুটিয়ে থাকা সৌদি আরবের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই একেবারে বিস্ফোরণ! মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল শুধু তামাম দুনিয়াতে ছড়িয়ে থাকা অগণিত নীল-সাদা সমর্থকদেরই নয়, খোদ লিওনেল মেসির (Lionel Messi) বিশ্বকাপ জয়ের (FIFA World Cup 2022) স্বপ্নের মাঝে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল। শেষবার ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে জোড়া গোল হজম করেছিল নীল-সাদা বাহিনী। পোল্যান্ডের কাছে ২-৩ গোলে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ৪৮ বছর পর সেই কালো স্মৃতি আবার ফিরে এল। এবার ফলাফল ২-১। অবশ্য এমন জয়ের জন্য সৌদির গোলকিপার মহম্মদ বিন খালিল বিন ইব্রাহিম আল-ওয়েস (Mohamed Al-Owais)। দুই গোলে এগিয়ে থাকার পর তিনি তেকাঠির নীচে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পারফর্ম করলেন। এতটাই তাঁকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল যে বল কেন, মাছিও পর্যন্ত গলতে পারবে না! 


তিনটি গোল বাতিলের পরেও বিরতিতে যাওয়ার সময় এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের বাঁশি বাজতেই এ যেন এক অন্য সৌদি আরব! দুর্বল ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে ৪৮ মিনিটে সমতা ফেরালেন সালে আল-শেহরি (Saleh Al-Shehri)। ম্যাচে এটাই ছিল সৌদি আরবের প্রথম শট অন টার্গেট। আর সেখান থেকেই গোল করে সমতা ফেরান সৌদি। তবে উত্তেজনার আরও বাকি ছিল। সৌদির আক্রমণে ফের কেঁপে গেল আর্জেন্টিনার ডিফেন্স। ৫৩ মিনিটে সালেম আলদসরি (Salem Al Dawsari ) দুরন্ত গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। এতক্ষণ নীল-সাদা জার্সি সমর্থকরা করছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল গ্যালারির মেজাজ। 


ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে সৌদি আরব অনেক পিছিয়ে। কিন্তু কাপ যুদ্ধের প্রথম ম্যাচ বলে কথা। একটা বাড়তি চাপ তো থেকেই যায়। ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে সেটা স্বীকার করে নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। এরমধ্যে আবার তাঁর চোট, একা অনুশীলন নিয়ে কত প্রশ্নই না উঠেছিল। সবাই ধন্দে ছিলেন 'এল এম টেন' আদৌ প্রথম ম্যাচে খেলবেন তো! 


তবে তিনি যে বহু যুদ্ধের নায়ক লিও মেসি। বাংলা ভাষা জানেন না। তাঁর জানার কথাও নয়। তবে মঙ্গলবার মাঠে নামার পর থেকেই তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝিয়ে দিচ্ছিল 'খেলা হবে'। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ২ মিনিট। বিপক্ষের গা গরম হয়নি। ঠিক এমন সময় আর্জেন্টাইন অধিনায়কের সৌদি আরবের বক্সে হানা। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার মাটি ছুঁয়ে যাওয়া পাস থেকে বাঁ পায়ের শট মারেন মেসি। কোনও রকমে গোল বাঁচালেন বিপক্ষের মহম্মদ বিন খালিল বিন ইব্রাহিম আল-ওয়েস।



রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা তখন প্রথম গোলের খোঁজে। শুরু থেকেই মেরে খেলছিলেন সৌদি ফুটবলাররা। যদিও ঠিক সেই সময় খেলা ঘুরে গেল। ৮ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে (Leandro Paredes) বক্সের মধ্যে ফাউল করেন আল-বুলাইহি। পেনাল্টি পায় নীল-সাদা ব্রিগেড। ভিএআর-চেক করে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি রেফারির। লিও মেসি প্রস্তুত এবং অতি সহজেই বিপক্ষের জালেও বল জড়িয়ে দেন তিনি। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো-আলেজান্দ্রো গোমেজরা। একইসঙ্গে এই গোলের সৌজন্যে আর্জেন্টিনার প্রথম ফুটবলার হিসেবে চারটি আলাদা বিশ্বকাপে গোলের নজির গড়লেন লিওনেল মেসি। 


কিন্তু সেই গোলের পর প্রথমার্ধের বাকি সময় এত মহা-নাটক মঞ্চস্থ হবে সেটা কেউ ভাবতেও পারেননি। আর্জেন্টিনা আগাগোড়া দাপট দেখালেও তিন-তিনটি গোল অফসাইডের জন্য বাতিল করে দেওয়া হল। সেটা না হলে স্কোরলাইনটা ৪-০ হতে পারত। এরমধ্যে মেসি একবার ও লাউতারো মার্টিনেজ দু'বার জালে বল জড়ালেন। ২২ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত আর্জেন্টিনা। সৌদির জালে বল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মেসি। প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে গিয়ে দুরন্ত গোল করেছিলেন মেসি। কিন্তু সহকারী রেফারি অফসাইডের ফ্ল্যাগ তোলেন। বাতিল হয়ে যায় গোল। মেসির চোখেমুখে হতাশা ছিল স্পষ্ট। কারণ ভার-এর (Video Assistant Referee) সাহায্যে সেই গোল বাতিল হয়। কারণ মেসি অফ সাইডে ছিলেন। এর ঠিক ছয় মিনিট পর ফের গোল বাতিল হল। ২৮ মিনিটে আরও একটি গোল বাতিল হয় অফসাইডে। এবার লাউতেরো মার্টিনেজ (Lautaro Martinez)। গোলকিপারকে কাটিয়ে বল জালে জড়ান মার্টিনেজ। এবার মার্টিনেজ অফসাইড হয়ে ছিলেন। ৩৫ মিনিটে আবার একই ঘটনার রিমেক। ৩৫ মিনিটে মেসির দুরন্ত পাস থেকে ফের অসাধারণ গোল মার্টিনেজ। গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে জালে বল জড়ান তিনি। কিন্তু তৃতীয় বারও অফসাইড। ফলে গোল বাতিল হয়ে যায়।


আরও পড়ুন: FIFA World Cup 2022, ARGENTINA vs SAUDI ARABIA: ড্রাগ, অস্ত্র চোরাচালান, পতিতাবৃত্তির অপরাধে গ্রেফতার মেসিদের ম্যাচ রেফারি! তিনি কে?


আরও পড়ুন: FIFA World Cup 2022: স্টেডিয়ামের আবর্জনা পরিষ্কার করে বিশ্বকাপের মঞ্চে ফের শিরোনামে জাপান, ভিডিয়ো ভাইরাল



জোড়া গোল হজম করার পরেই তিনটি বদল করেন হেড কোচ লিওনেল স্কালোনি। রোমেরো, গোমেজ এবং পারেদেসের পরিবর্তে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, আলভারেজ এবং ফার্নান্ডেজ মাঠে নামেন। কিন্তু এতে লাভ হয়নি। প্রথমার্ধে সৌদি গোলকিপার মহম্মদ আল ওয়েসমহম্মদ বিন খালিল বিন ইব্রাহিম আল-ওয়েস পারফর্ম করতে না পারলেও, দুই গোলে এগিয়ে থাকার পর তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। অনায়াসে একের পর এক সেভ দিয়ে গেলেন। আরে সেটাই হয়ে গেল মেসিদের 'কাল'। একটা সময় মনে হচ্ছিল তিন পয়েন্ট নিয়ে মেসির আর্জেন্টিনার মাঠ ছাড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের ধারণাকে বদলে দিয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল সৌদি। 


লুসাইল স্টেডিয়ামের সিংহভাগ গ্যালারি নীল-সাদা জার্সির সমর্থকরা ম্যাচ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ভিড় বাড়িয়েছিলেন। অনবরত গেয়ে যাচ্ছিলেন স্প্যানিশ ভাষায় গান। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, 'আমরা আবারও লড়াই করব। আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। যেভাবে আমরা '৮৬-তে হয়েছিলাম। এসো, আমাদের সঙ্গে গান গাও। তুমি বন্ধু খুঁজে পাবে। এবং লিও মেসির হাত ধরে। আমরা সমস্ত মাঠে রাজত্ব করব।' ম্যাচ রিপোর্ট লিখতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিল একনাগাড়ে ঢাক, ঢোল পিটিয়ে যাওয়া ওই পাগল সমর্থকরা শুধুই কি লিওনেল মেসির জন্য এসেছেন! নাকি তাঁরা কাতারে এসেছেন তাঁদের 'ফুটবল দেবতা' দিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona) বিশেষ বার্তা নিয়ে। কিন্তু সেই উৎসব, উচ্ছ্বাসে লাভ হল না। কারণ গ্যালারিতে থাকা সমর্থকরা তো আর মাঠে নেমে ফুটবল খেলেন না। ৯০ মিনিটের যুদ্ধে পারফর্ম করতে হয় ফুটবলারদের। মেসিরা না পারলে অঘটন তো ঘটবেই। 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)