এটিকে মোহনবাগান: ২ (১৪’ , '৮৫ দিমিত্রি পেত্রাতোস )


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বেঙ্গালুরু এফসি: ২ ('৪৫ সুনীল ছেত্রী, '৭৮ রয় কৃষ্ণা ) 


এটিকে মোহনবাগান:  ( ১, ১,  ১, ১) = ৪


বেঙ্গালুরু এফসি: (১,  ১, ০, ১, ০) = ৩


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ফুটবলের মানের দিক থেকে আকাশ-পাতাল তফাত। বিশ্বকাপ ফাইনালের সঙ্গে আইএসএল-এর কোনও তুলনাই চলে না। তবে ১৮ ডিসেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স ফাইনালের সেই টাইব্রকারের সঙ্গে ১৮ মার্চ গোয়ার জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম একসূত্রে মিলে গেল। সেবার নীল-সাদা ব্রিগেডকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর এবার গোল পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে বেঙ্গালুরু এফসি-কে মেগা ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবার আইএসএল জিতল এটিকে মোহনবাগান। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের ফলাফল ৪-৩।  


মেগা ফাইনাল বলে কথা। টানটান উত্তেজনা থাকবে না, সেটা কী হয়! দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে চোরাগোপ্তা মারপিট, রেফারির বিরুদ্ধে মেজাজ গরম করা, সবকিছুরই সাক্ষী থাকল ফাইনালের ৯০ মিনিট। একইসঙ্গে চারটি গোলেরও সাক্ষী থাকল জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি দুই দলের সমর্থকরা। ডু অর ডাই ম্যাচে বলে কথা। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ম্যাচে দিমিত্রি পেত্রাতোস যেমন ত্রাতা হয়ে উঠলেন, ঠিক তেমনই বেঙ্গালুরুর দুই তারকা সুনীল ছেত্রী ও রয় কৃষ্ণা চোখে চোখ রেখে লড়াই করলেন। তবে শুধু সুনীল ও রয়ের কথা লিখলে ভুল হবে, সবুজ-মেরুনের কোচ জুয়ান ফেরান্দোর কাছে আর এক ব্রাত্য প্রবীর দাসও সর্বস্ব উজার করে পারফর্ম করলেন। ৯০ মিনিটে বাঁ পা বাড়িয়ে প্রবীর গোল লাইন সেভ না করলে, নির্ধারিত সময়ই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ত সবুজ-মেরুন। কিন্তু সেটা হল। আর তাই জোড়া গোল করেও চাপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ঠিক একই অবস্থা সুনীল ও রয় কৃষ্ণার। কারণ খেলা যে এক্সট্রা টাইমে গড়িয়ে যায়। যদিও এক্সট্রা টাইমের প্রথমার্ধেও ফলাফল ছিল অধরা। ক্লান্ত হয়ে গেলেও দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে জোর লড়াই চলছিল। তবে গোলের দেখা মিলছিল না। এক্সট্রা টাইমের দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য দুটি দলই গোলের জন্য ঝাঁপিয়ে ছিল। ১১০ মিনিটে পেত্রাতোসের ঠিকানা লেখা পাস চলে গিয়েছিল মনবীরের মাথায়। কিন্তু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করলেন মনবীর। সেই সুযোগ কাজে লাগালেই জয়ের দেখা পেয়ে যেত সবুজ-মেরুন। তবে সেখানেই কোনও ফলাফল এল। আর তাই খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। 


৩ মিনিটের মাথায় ধাক্কা খায় বেঙ্গালুরু। শিবা নারায়নন চোট পেতেই, 'সুপার সাব' হিসেবে মাঠে নামলেন বহু যুদ্ধের ঘোড়া সুনীল। সবুজ-মেরুন শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিল। আর ভারতীয় দলের অধিনায়ক মাঠে নামতেই খোলস বদলে ফেলল বেঙ্গালুরু। ম্যাচের ১০ মিনিটে রয় কৃষ্ণা অসাধারণ আক্রমণ তুললেও, শেষ পর্যন্ত এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ সেই আক্রমণ আটকে দেয়। 


সেই ফিজির তারকা তাঁর পুরনো দলের বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক ভুল করে বসবেন কে জানত! ম্যাচের বয়স তখন ১৪ মিনিট। কর্নার বাঁচাতে গিয়ে হাতে বল লাগিয়েছিলেন রয় কৃষ্ণা। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। দিমিত্রি পেত্রাতোস বিপক্ষের জালে বল রাখতে কোনও ভুল করেননি। গুরপ্রীত সিং সান্ধু পরাস্ত হতেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন। 



এরপর প্রথমার্ধের ৪৪ মিনিট পর্যন্ত সবুজ গালিচায় শুধুই সবুজ-মেরুন ঝড়। হ্যান্ডবলের আবেদন করলেও, রেফারি কান দেননি। তবে এতে সবুজ-মেরুনের আক্রমণের ঝাঁজ মোটেও কমেনি। তবে শুধু সবুজ-মেরুন নয়, বেঙ্গালুরুও রেফারির উপর চাপ বাড়াচ্ছিল। ৩৪ মিনিটে রয় কৃষ্ণাকে পিছন থেকে মারার দায়ে পেনাল্টি চেয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ফুটবলার। রেফারি সাড়া দিলেন না। ব্যাপক ক্ষোভ দেখাতে থাকেন সুনীলরা। 


আরও পড়ুন: Cristiano Ronaldo: ফের্নান্দো স্যান্টোসের 'বাতিল ঘোড়া' রোনাল্ডোকে দলে রেখে বড় বার্তা দিলেন রবার্তো মার্টিনেজ


আরও পড়ুন: Lionel Messi: লিওকে নিয়ে মিথ্যা খবর করলেই আইনি পদক্ষেপ! ভয় দেখালেন মেসির বাবা জর্জ


প্রথমার্ধ যখন প্রায় শেষ দিকে, ঠিক তখন মারাত্মক ভুল করে ফেললেন শুভাশিস বোস। বল ক্লিয়ার করতে বড্ড বেশি সময় লাগালেন। সোজা মারলেন রয় কৃষ্ণার পায়ে। বক্সের বাইরে রয় কৃষ্ণাকে অহেতুক ট্যাকেল করতে পেনাল্টি আদায় করে নেয় বেঙ্গালুরু। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে সমতা ফেরালেন সুনীল। 



সমতা ফেরানোর পর থেকে দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই নেমেছিল বেঙ্গালুরু। ৬০ মিনিটে ফের আক্রমণে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। তবে লিস্টনের শট দুর্দান্ত ভাবে বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত। যদিও গোল করার সুযোগ ছিল। লিস্টনের শট পোস্টে লেগে পেত্রাতোসের কাছে চলেও এসেছিল। কিন্তু চলতি বলে শট নিতে গিয়ে বাইরে মারেন তিনি। ফলে ফের একবার লিড নেওয়ার সুযোগ হেলায় হারায় এটিকে মোহনবাগান। আর সেটাই যেন সবুজ-মেরুনের মনোবলে বড় ধাক্কা দিল। সেই সুযোগে ৭৮ মিনিটে পুরনো দলের জালে বল ঢুকিয়ে বদলা নিলেন রয় কৃষ্ণা। তাঁর সেই গোলে বেঙ্গালুরু তো লিড পেলই, জুয়ান ফেরান্দোর কাছে অপমানিত হওয়ার শোধ সুদে-আসলে মিটিয়ে নিলেন ফিজির তারকা। তবে গোল করে কোনও উৎসব করলেন না তিনি।


এরপরেও অবশ্য চমক বাকি ছিল। তবে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। বক্সের বাইরে কিয়ান নাসিরিকে ফাউল করেছিলেন বেঙ্গালুরুর ফুটবলার। কিয়ান পেনাল্টি আদায় করলে, ৮৫ মিনিটে ফের গোল করে সবুজ-মেরুনকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ফলে ম্যাচ গড়ায় এক্সট্রা টাইমে। আর তাই খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে জিতল সবুজ-মেরুন। বেঙ্গালুরু এফসি-কে মেগা ফাইনালে হারিয়ে প্রথমবার আইএসএল জিতল এটিকে মোহনবাগান। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের ফলাফল ৪-৩।  


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)