সব্যসাচী বাগচী: গত দুই মরসুম তিনি বাংলা (Team Bengal) দলের পরিত্রাতা। অথচ এই শাহবাজ আহমেদের (Shahbaz Ahmed) কেরিয়ার শুরু হওয়ার আগেই বারোটা বেজে গিয়েছিল! ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়ে কলকাতায় খেলে চলেছেন শাহবাজ, এই ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অথচ সেই ছেলেকে ছাড়া এখন বাংলার প্রথম একাদশ ভাবাই যায় না! চলতি সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি ট্রফিতে (Syed Mushtaq Ali Trophy) শক্তিশালী বরোদাকে ২ রানে হারানোর নেপথ্যে যে তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। প্রথমে চাপের মুখে ২৫ বলে ৩৪ রান করার পর বল হাতে বিপক্ষের দুই ওপেনারকে ডাগ আউটে পাঠালেন। তবে এমন জমকালো পারফরম্যান্সের পরেও নির্লিপ্ত ২৬ বছরের ছেলেটি। বরং এই উত্থানের জন্য রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (Royal Challengers Bangalore) 'তিন মূর্তি' বিরাট কোহলি (Virat Kohli), এবি ডিভিলিয়ার্স (AB de Villiers) ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (Gleen Maxwell) ধন্যবাদ জানালেন তিনি। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

জোড়া জয়ের শেষে টিম হোটেলে ফিরে জি ২৪ ঘণ্টাকে শাহবাজ বলেন, "গত দুই মরসুম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে থাকার জন্য ক্রিকেট নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা অনেক বেড়েছে। নিজের খেলাকে আরও ভালভাবে বুঝতে শিখেছি। আইপিএল-এ প্রতিটা দল খুবই শক্তিশালী। তাই সেই জায়গায় পারফর্ম করতে হলে নিজের ক্রিকেট বোধ বাড়ানোর সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফিটনেস ধরে রাখার পাশাপাশি মানসিক জোরও বাড়াতে হবে। ফিটনেস চর্চা রোজ বজায় রাখার সঙ্গে, শেখার আগ্রহ বাড়িয়েছি। এগুলো পেরেছি বলেই নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারছি। " 


আরসিবি-তে গত দুই মরসুম নিয়মিত এই তিন বিস্ফোরক ব্যাটারকে নেটে বোলিং করেন। এরপর নিজেদের দলের বোলার ছাড়াও অন্য প্রতিপক্ষের বোলারদের বিরুদ্ধে তিনি খেলছেন। এতেই কি তাঁর উন্নতি ঘটল? শাহবাজ যোগ করলেন, "বিরাট ভাই, ডিভিলিয়ার্স ও ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে নেটে বল করলে সে মার খাবেই। ওরা প্রথম বল থেকেই মারমুখী মেজাজে থাকে। আমিও অনেক বার ওদের কাছে মার খেয়েছি। কিন্তু এতে ঘাবড়ে চলবে না। আমি তো বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে যাইনি। বরং ওদের কাছে মার খেয়েও শেখার চেষ্টা করেছি। এতেই বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এগোতে চাই।" 


আরও পড়ুন: Syed Mushtaq Ali Trophy: দুরন্ত অলরাউন্ডার Shahbaz Ahamed, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বরোদাকে হারাল বাংলা



 


 এ দিন হাতে ছিল মাত্র ১৪৬ রান। এর মধ্যে আবার বিপক্ষের অধিনায়ক ক্রুনাল পান্ডিয়া। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ক্রুনাল ৫৭ রানে অপরাজিত থাকলেও মাথা নিচু করেই মাঠ ছেড়েছিলেন। মাঠের আত্মবিশ্বাস এ বার শাহবাজের মুখেও ঝরে পড়ল। ফের বললেন, "শুধু স্কোরবোর্ড দেখে বিচার করলে ১৪৬ রান কম। তবে এই পিচে কিন্তু ১৪৬ রান তোলা খুবই কঠিন ছিল। তাই কম রান তুললেও আমরা ভেঙে পড়িনি। বরং ফিল্ডিং করার সময় আরও সজাগ ছিলাম। সেই জন্য বিপক্ষে বড় নাম থাকলেও আমরাই জিতে মাঠ ছেড়েছি।" 


গত বছরের পর এ বারও আরসিবি-র হয়ে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তবে কোহলির দল তাঁকে ধরে রাখবে কিনা সেটা জানা নেই। আইপিএল নিয়ে ভাবতেও চাইছেন না। বরং বাংলাকে আরও অনেক ম্যাচ জেতানোই তাঁর লক্ষ্য। জুড়লেন, "আমার কাজ পারফরম্যান্স করা। সেটা করে যাচ্ছি। বাকিটা আমার হাতে নেই।" 


সেটাই তো স্বাভাবিক। ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়ে ময়দানে খেলার অভিযোগে একটা সময় তাঁকে নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। রীতিমতো হাতে গরম প্রমাণ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ক্লাব। হুগলির শ্রীরামপুরে যে বাড়িতে শাহবাজ থাকতেন, সেখানেও হানা দিয়েছিলেন পুলিশ কর্তারা। একজন উঠতি ক্রিকেটারের জীবনে এর চেয়ে বড় ধাক্কা আর কী হতে পারে? 


আলো জ্বলে ওঠার আগেই অন্ধকার নেমে এসেছিল শাহবাজের ক্রিকেট কেরিয়ারে। বড়িশার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ মাঠের বাইরেই বসে থাকতে হয়েছিল। সেই ম্যাচে হেরে যায় তপন মেমোরিয়াল। আজও শাহবাজের মনে আছে সেই কথা। তবে আর আলোচনা করতে চান না। তপন মেমোরিয়ালের কর্তারা অবশ্য খুব দ্রুত প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, শাহবাজের আধার সংক্রান্ত ব্যাপারে ভুয়ো কিছু নেই। 


তরুণ শাহবাজকে বাংলার ক্রিকেটে প্রয়োজন, এই ভাবনায় সিএবিও আর বিষয়টি নিয়ে বেশি জলঘোলা করেনি। তারপর থেকে শাহবাজ বাংলার অন্যতম ভরসা। রঞ্জি থেকে মুস্তাক আলি, অনেক ম্যাচই জিতিয়েই চলেছেন অলরাউন্ডার শাহবাজ। ফিল্ডিংটাও করেন দুর্দান্ত। ২০২০ সালে স্টিভ স্মিথের ক্যাচ বাউন্ডারি লাইনে অসাধারণ ভঙ্গিমায় উড়ে ধরেছিলেন শাহবাজ। এ বারও, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দু-দুটো ক্যাচ নিয়েছেন।  


অতএব, বিরাটের উচ্ছ্বাসে বাংলার ফ্লেভার! এই তো শুরু। ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায় দোস্ত’!


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)