ক্রিকেট বলের ‘রাজা’ কেন ডিউক?
কেন ডিউক বল-কেই প্রাধান্য দেয় ক্রিকেট আবিষ্কারক দেশ? সহজ উত্তর, সুইং সহায়ক পরিবেশে ডিউক বলের জুড়ি মেলা ভার। দ্বিতীয়ত এই বলের সিম এবং গুণগত মানও বাকি প্রতিযোগিদের তুলনায় বেশ ভাল।
সৌরভ পাল
ডিউক, কোকাবুরা, এসজি, এই তিন বলই মূলত এখন ক্রিকেট শাসন করছে। যার মধ্যে উপমহাদেশের ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলোতে রাজ করছে এসজি। বিশেষ করে ভারতে সব ধরনের ক্রিকেটেই ব্যবহার করা হয় এসজি বল। অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়া বিগত কয়েক দশক ধরে কোকাবুরা বলেই ক্রিকেট খেলে। আর এ সবের বাইরে ডিউক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে ইংল্যান্ডে। আন্তর্জাতিক যে কোনও ম্যাচ তো বটেই রানির দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রথম পছন্দ সবসময়ই ডিউক। অ্যাসেজ সিরিজে লাল বল হোক কিংবা ন্যাটওয়েস্টে সাদা বল, অথবা গোলাপি বলের ক্রিকেটেও শাসন করেছে ডিউক।
এখন প্রশ্ন, কেন ডিউক বল-কেই প্রাধান্য দেয় ক্রিকেট আবিষ্কারক দেশ? সহজ উত্তর, সুইং সহায়ক পরিবেশে ডিউক বলের জুড়ি মেলা ভার। দ্বিতীয়ত এই বলের সিম এবং গুণগত মানও বাকি প্রতিযোগিদের তুলনায় বেশ ভাল।
প্রসঙ্গত, ডিউক কোম্পানি তৈরি হয় ১৭৬০ সালে। বিগত সাড়ে তিন দশকেই ৫০ হাজার ক্রিকেট বল তৈরি করেছে এই ব্রিটিশ কোম্পানি। আর যার হাত দিয়ে এই বলগুলো ক্রিকেট মাঠ পর্যন্ত গড়াচ্ছে তিনি হলেন দিলীপ জাজোদিয়া। ৭২ বছরের এই ভারতীয় ব্যবসায়ী-ই ব্রিটিশ ক্রিকেট বলস লিমিটেডের কর্ণধার। ইনিই ক্রিকেট বল নির্মাতা ডিউকস সংস্থার নেপথ্য নায়ক।
ক্রিকেট বল নির্মাতা হিসেবে অন্যতম প্রাচীন সংস্থা হল অস্ট্রেলিয়ার কোকাবুরা। আরফ্রেড গ্রেস থমসন ১৮৯০ সালে এই সংস্থা তৈরি করে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নিউ জিল্যান্ড, ব্রিটেন, বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই সংস্থা ক্রিকেট বল সরবরাহ করে। অন্য দিকে, এসজি ভারতের নিজস্ব ক্রিকেট সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড। কেদারনাথ এবং দ্বারকানাথ আনন্দের মস্তিষ্ক প্রসূত স্যানসপেরিয়েলস কোম্পানি (১৯৩১) এবং গ্রিনল্যান্ড নামক এক সংস্থার (১৯৪০) যৌথ উদ্যোগেই এসজি-র জন্ম। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর আনন্দ পরিবার আগ্রা চলে আসে এবং মেরঠেই তাঁদের ব্যবসা শুরু করে। এ দিক থেকে বিচার করলে ডিউক সবথেকে প্রাচীন। বয়স ২৫৮।
দিলীপ জাজোদিয়া জানাচ্ছেন, যে চামড়া দিয়ে ডিউক বল তৈরি হয় এবং যে ধরনের সেলাই এই বলের উপর থাকে, সেটাই একে বিশ্বমানের করে তুলেছে। যেখানে এসজি-তে ২ থকে ৩ এমএম চামড়া দিয়ে বল তৈরি হয়, সেখানে ডিউক বল তৈরি হয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ এমএম চামড়া দিয়ে। এরপর সেলাইয়ের বিষয়টিও ডিউক-কে সর্বোত্কৃষ্ট করতে সাহায্য করেছে।
দিলীপ জাজোদিয়া এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন, “ডিউক বলের সিম পজিশনের কারণে পেস বোলাররা বিশেষ সহায়তা পায়। বল খুব সহজেই বোলারদের গ্রিপে চলে আসে।” একই সঙ্গে ব্রিটেনের পরিবেশে সিম বোলারদের কারসাজির কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আরও একটি বিষয়, যা কোকাবুরা এবং এসজি-র থেকে ডিউক-কে আলাদা করেছে তা হল বলের রঙ। ডিউক বল বাকি বল নির্মাতা সংস্থার বলগুলোর তুলনায় একটু গাঢ় রঙের হয়। এর কারণ বেশি পরিমাণ গ্রিসের (তৈল জাতীয় দ্রব্য বিশেষ) ব্যবহার। জল থেকে বলের ত্বককে বাঁচাতেই গ্রিসের ব্যবহার করা হয়। আর সে কারণেই ‘ইংলিশ লেদার’ আরও গাঢ় হয়ে যায়। এরপর বলের উপর প্রয়োগ করা হয় ট্যানিং প্রক্রিয়াও (কাঁচা চামড়া পাকা করার পদ্ধতি)। সবশেষে ফাইনাল টাচ্ হিসেবে ১৫৬ থেকে ১৬২ গ্রামের বলের উপর পলিশ করে তা বাজারজাত করা হয়। চকচকে ভাবের জন্য কোনও রকম ‘লিকার’ এতে ব্যবহার হয় না। আর এসবের কারণেই বিশ্বের সেরা বল ডেলিভার করতে সক্ষম হয়েছে ডিউক।