Vladimir Putin-Alina Kabaeva: যুদ্ধের আবহে ভালবাসার গল্প! 'প্রেমিক' পুতিনের অলিম্পিয়ান 'প্রেমিকা'
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ( Russia-Ukraine War) আবহে ভ্লাদিমির পুতিন ও এলিনা কাবায়েবার (Vladimir Putin-Alina Kabaeva) প্রেমপর্ব নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে বেশ কয়েকদিন।
শুভপম সাহা: তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাংগুলি বেরদিমুহামেদভ (Gurbanguly Berdimuhamedow) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin) একটি শেফার্ড ব্রিডের (Central Asian Shepherd Dog) কুকুরছানা উপহার দিয়েছিলেন জন্মদিন উপলক্ষ্যে। ২০১৭ সালে সোচির ব্ল্যাক সি রিসর্টে সেদিন সাক্ষাৎ হয়েছিল দুই প্রেসিডেন্টের। বেরদিমুহামেদভ প্রথমে কুকুরের ঘাড় ধরে ওপরের দিকে তুলে ধরেছিলেন। তারপর তিনি তা পুতিনের হাতে তুলে দেন। প্রকৃত কুকুরপ্রেমী পুতিনের এহেন আচরণ মোটেই ভাললাগেনি। তিনি কুকুরটিকে হাতে নিয়েই ছোট্ট ছানাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদরে ভরিয়ে দেন। পুতিনের এই ভিডিওটি আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়। যাঁরা পোষ্য় ভালবাসেন তাঁরা এই ভিডিওটি শেয়ার করে বুঝিয়ে দেন যে, কুকুরকে এভাবেই ভালবাসতে হয়।
দোর্দণ্ড প্রতাপ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কুকুরের প্রতি ভালবাসার কথা সারা বিশ্ব জানে। তাঁর হৃদয়ে পোষ্যের জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা। তবে পুতিনের আরেক ভালবাসার কথা আজও অনেকেরই অজানা। গুপ্তচর সংস্থা ‘কেজিবি’-র (KGB) সিক্রেট সুপার এজেন্ট হিসাবে একসময় ঝড় তুলেছিলেন পুতিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলাকালীন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে দুরন্ত সফলতা পেয়েছিলেন পুতিন। এমন'লৌহমানব'-এর মনে ভালবাসার সুনামি যিনি এনেছিলেন তিনি বিশ্ববন্দিত অলিম্পিয়ান এলিনা কাবায়েবা (Alina Kabaeva)। ১৭ বছর গুপ্তচর সংস্থায় কাজ করা পুতিন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে আনতে একদমই পছন্দ করেন না। প্রেম জীবনও রাখতে পছন্দ করেন অত্যন্ত গোপনে। একবার এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেছিলেন, "আমার একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। সেখানে হস্তক্ষেপের অনুমোদন আমি কাউকে দিই না। সেই জীবনের সম্মান করতে হয়। আমি সবসময় তাঁদের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই থাকে, যাঁরা তাঁদের নোংরা নাক এবং কামোত্তেজক কল্পনা নিয়ে অন্যের জীবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করে।"
শুধু রাশিয়াতেই নয়, বহু দেশেই পুতিনকে একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নয়, 'আলফামেল' বা 'সেক্স গড' হিসাবেও দেখা হয়। বিশ্বের অন্য়তম প্রভাবশালী মানুষের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বয়স নির্বিশেষে মহিলাদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। তবে পুতিনের হৃদয় রাঙিয়েছেন শুধুই কাবায়েবা। জোড়া অলিম্পিক পদক (ব্রোঞ্জ ও সোনা) জয়ী কাবায়েবা রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের ইতিহাসে অন্যতম বর্ণাঢ্য চরিত্র। ১৪ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া কন্যা ২১বার ইউরোপ সেরাও হয়েছেন। পুতিনের সঙ্গে কাবায়েবার বয়সের ফারাক ৩০ বছরের। এখন পুতিনের ৬৯, কাবায়েবার ৩৯। সেই ২০০৮ সাল থেকেই পুতিন-কাবায়েবার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন। সে বছর রাশিয়ান দৈনিক মস্কোভস্কি করেসপনডেন্ট (Moskovsky Korrespondent) খবর করেছিল যে, পুতিনের সঙ্গে নাকি তাঁর স্ত্রী লুদমিলা আলেকসানদ্রোভনা ওচরেতনায়ার (Lyudmila Aleksandrovna Ocheretnaya) বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কারণ কাবায়েবা! রুশ সরকার শুধু এই খবর অস্বীকারই করেনি, ওই সংবাদপত্রও বন্ধ করে দিয়েছিল। মনে করা হয় পুতিন-কাবায়েবার চার সন্তান রয়েছে। সাত বছরের যমজ কন্যাও রয়েছে তাঁদের।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া আক্রমণ হানার আগেই পুতিন নাকি কাবায়েবাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের এক বিলাসবহুল শ্যালেতে (কাঠের তৈরি বিশেষ বাড়ি, যা সুইজারল্যান্ডের বাড়ির নির্মাণশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য)। কাবায়েবার সুরক্ষার রয়েছেন পুতিনের নিরাপত্তারক্ষীদেরই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এমনই রিপোর্ট একাধিক মিডিয়ার। কাবায়েবা ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিক্সে সোনা জিতেছিলেন। কিন্তু তারপর আর অলিম্পিক্সে অংশ নেননি তিনি। ২০০৭ পর্যন্ত জিমন্যাস্টিক্স চালিয়ে কেরিয়ারে ইতি টানেন। ২০১৪ সালে পুতিন তাঁর দীর্ঘ ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে ইতি টানেন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন কাবায়েবার জন্যই পুতিনের বিয়ে ভেঙেছে। রুশ সুন্দরী রূপে হাবুডুবু খেয়েছেন পুতিন। কাবায়েবা একাধিক ম্যাগাজিনের বোল্ডশুটেই নিজেকে মেলে ধরেননি, তিনি বিখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও আসেন।
২০০৫ সাল থেকেই কাবায়েবা রাজনৈতিক জীবনে পথচলা শুরু হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সৌজন্যে পুতিন। পাবলিক চেম্বার অফ রাশিয়ার (Public Chamber of Russia) সদস্য় হন তিনি। ২০০৮ সালে ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কাবায়েবাকে পাওয়া গিয়েছে রাশিয়ার সংসদেও। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল রাশিয়া পার্টির (Russia party) সংসদ হয়ে সাংসদে ডুমা রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাজনৈতিক ও মিডিয়াতে অভিজ্ঞতা অত্যন্ত কম থাকা সত্ত্বেও কাবায়েবার বেতন ছিল মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। যা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। পুতিনের ঘাড়েই ঘুরিয়ে পড়েছিল সেই দোষ। ২০১৪ সালে কাবায়েবা সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মিডিয়া গোষ্ঠী ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের অন্যতম বোর্ড অফ ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। পুতিন-কাবায়েবাকে প্রকাশ্যে একাধিকবার দেখা গিয়েছে। পুতিন দ্বিতীয়বার আর কাউকে বিয়ে করেননি ঠিকই। তবে রাশিয়ায় কান পাতলে শোনা যায় যে 'প্রেমিকা' কাবায়েবার সঙ্গেই সুখে শান্তিতে আছে 'প্রেমিক' পুতিন।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine War, James Blunt: গিটার নিয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া মানুষটা যুদ্ধ নয়, শান্তি চেয়েছিলেন কসোভোয়
আরও পড়ুন: Russia Ukraine War: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত 'Z' চিহ্নটির অর্থ কী? জেনে নিন