Wriddhiman Saha: `কানপুর টেস্টের পরেই ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা ছিল`! বিস্ফোরক ঋদ্ধি
অবসর বিতর্কে স্টেপ আউট করলেন ঋদ্ধি।
সব্যসাচী বাগচী: দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতা নয়, বরং এই মুহূর্তে ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে তোলপাড় ভারতীয় ক্রিকেট। টিম ইন্ডিয়ার থিঙ্কট্যাঙ্ক নাকি পাপালির জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল টিম ম্যানেজমেন্টের এক সিনিয়র সদস্য নাকি ঋদ্ধিকে যাবতীয় ব্যাপারটা বুঝিয়েও বলেছেন! তাঁকে নাকি বলে দেওয়া হয়েছে যে 'বয়স বড় বালাই'। তাই এ বার সরে যেতেই হবে!
তবে যাকে নিয়ে এত আলোচনা, ভারতীয় ক্রিকেট যাকে নিয়ে তোলপাড়, তিনি নির্লিপ্ত। তবে বিস্ফোরকও বটে। অনেক কষ্টে টেলিফোনের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত তাঁর মুখ খোলানো গেল।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা সিরিজে আপনাকে ভাবা হচ্ছে না। টিম ম্যানেজমেন্ট কি সেটা জানিয়ে দিয়েছে?
ঋদ্ধি: আমি আজ পর্যন্ত দলের নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও কাজ করিনি। ড্রেসিংরুমের কথা আমি পরিবারের সঙ্গেও আলোচনা করি না। তাই এই বিষয় নিয়েও কোনও মন্তব্য করব না। তবে আপনার মতো আমার কানেও এই কথাটা এসেছে।
প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কানপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসের পরেই নাকি আপনাকে ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল? এটা কি সত্যি?
ঋদ্ধি: আমি যে বেশি সুযোগ পাব না সেটা কেরিয়ারের শুরু থেকেই জানতাম। সুযোগ পেলে সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পারফর্ম করা আমার দায়িত্ব। এরপরেও যদি আমাকে অগ্রাহ্য করে তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমার কিছু বলার নেই। এই বিষয়ে একটা উদাহরণ দেওয়া জরুরি। কানপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১ রান না করলে মুম্বই টেস্টে কোনা ভারতকে খেলিয়ে দেওয়া হত। সেটা নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ দেখে সেটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। আসলে সবার কপাল তো সমান হয় না!
প্রশ্ন: প্রথমে আপনার ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা হত। এখন আপনার বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কতটা বিরক্ত?
ঋদ্ধি: আমি মোটেও বিরক্ত নই। কারণ গত ১০-১১ বছর ধরে এগুলো নিয়েই খেলে যাচ্ছি। তাই যে কিংবা যারা এই খবরগুলো বাজারে রটিয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করুন। আমার বয়সের অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। এমনকি সম বয়সী খেলোয়াড় ভারতীয় দলেও আছে। তাই নিয়ম তো সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। আর যদি আমার বয়স এত সমস্যা হয় তাহলে জানিয়ে রাখা ভাল যে আমাদের টেস্ট দলে বিরাট কোহলি ও রবীন্দ্র জাদেজা-র পর সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড় আমি।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে বয়স ছাড়াও আপনাকে ছেঁটে ফেলার বড় কারণ হল বিদেশে পারফর্ম করতে না পারা। আপনার প্রতিক্রিয়া?
ঋদ্ধি: আমি কেরিয়ারের ১০ শতাংশ ম্যাচ সেনা কন্ট্রিতে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) খেলেছি। পরিসংখ্যান বলছে আমি মাত্র চারটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছি। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি ও অস্ট্রেলিয়ার তিনটি টেস্ট খেলেছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা একটি টেস্টে ১০টি ক্যাচ নিয়েছিলাম। এই তথ্যগুলো মনে রাখা উচিত।
প্রশ্ন: সব বুঝলাম। কিন্তু এ বার রঞ্জি ট্রফি কেন খেললেন না?
ঋদ্ধি: সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি যে এ বার রঞ্জি খেলব না সেটা কয়েকদিন আগেই সিএবি-তে গিয়ে জানিয়ে এসেছিলাম।
প্রশ্ন: গত দুই বছরের বেশি সময় জৈব বলয়ে কাটিয়েছেন। আপনার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। ঘরে দুটি ছোট সন্তান। এটা কি রঞ্জি না খেলার কারণ?
ঋদ্ধি: এই মরশুমে রঞ্জি না খেলার এটা অবশ্যই বড় কারণ। রঞ্জি খেলার জন্য একাধিক জৈব বলয়ে থাকতে হবে। পরিবারকে পাশে পাব না। তাই এ বার সরে দাঁড়ালাম।
আরও পড়ুন: Wriddhiman Saha: অচিরেই থমকে গেল ঋদ্ধিমান সাহার আন্তর্জাতিক কেরিয়ার! কিন্তু কেন?
আরও পড়ুন: Wridhhiman Saha: টিম ম্যানেজমেন্ট মুখ ফিরিয়ে নিলেও 'সুপারম্যান'-এর পাশে একাধিক প্রাক্তন
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি ঋদ্ধি: খেলার সময় ওপেনিং করা নিয়ে আপনার সঙ্গে অরুণ লালের মন কষাকষি হয়েছিল। এটা কি রঞ্জি না খেলার আরও একটা কারণ?
ঋদ্ধি: এগুলো একেবারে বাজে খবর। গত ১৩-১৪ বছরে বাংলার হয়ে সীমিত ওভারের কটা ম্যাচে আমি ওপেন করেছি? আমি তো বেশিরভাগ সময় মিডল অর্ডারেই ব্যাট করে গিয়েছি। তখন কি কেউ আমার অভিমানের কথা শুনেছে! তাহলে এই প্রশ্নগুলো এখন কেন উঠছে!
প্রশ্ন: মনে করুন আপনার জন্য জাতীয় দলের দরজা আর খুললো না। সেক্ষেত্রে কি আপনি আগামী মরশুমে বাংলার হয়ে খেলবেন?
ঋদ্ধি: সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ আগামী বছর রঞ্জির আগে সীমিত ওভারের খেলা হবে। যদি সিএবি ও বাংলা টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে আমার প্রয়োজনীয়তা আছে, তাহলে আমি প্রস্তুত।
প্রশ্ন: কানপুর টেস্টের পর রাহুল দ্রাবিড় আপনার প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ওঁর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে?
ঋদ্ধি: সেই টেস্টের পর রাহুল ভাই ও দলের সবাই আমার প্রশংসা করেছিল। রাহুল ভাই পিঠ চাপড়ে বেশ কয়েকবার বলেছিল, 'ওয়েল প্লেইড'। তবে এরপর ওঁর সঙ্গে আমার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনা করেই বা কি লাভ! কারণ কানপুর টেস্টের পর দলের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর সাংবাদিক সম্মেলনে আমার তারিফ করলেও, ঋষভ পন্থকে দলের এক নম্বর উইকেটকিপার বলেছিলেন। এখানেই পরিষ্কার যে পন্থ দল ঢুকলে ওই খেলবে।
প্রশ্ন: এই কথাগুলো কতটা আঘাত দেয়?
ঋদ্ধি: একদম আঘাত দেয় না। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আমি চোট পাওয়ার পর পন্থ দলে আসে। এবং অনেক সুযোগ পেয়ে জায়গা পাকা করে নেয়। আসলে সবাই তো সমান সুযোগ পায় না! কেউ চারটি পায়। কেউ আবার ১০টা সুযোগ পায়। পন্থ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে। তাই আমার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
প্রশ্ন: আপনার রঞ্জি না খেলা নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
ঋদ্ধি: আসলে আমার যে কিছু ইচ্ছা আছে সেটা অনেকেই মানতে পারে না। এই যে বেন স্টোকস বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়াল। বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে দলের একাধিক ক্রিকেটার বিশ্রাম নিলে কেউ মাথাঘামায় না। তবে আমি রঞ্জি না খেললে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আসলে আমাকে সবাই 'দাস' মনে করে!