WB Lightning Death: ভয়ংকর! ২০১৮ সালে থেকে রাজ্যে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা কত, শুনলে চোখ কপালে উঠবে
WB Lightning Death: এখন এত মৃত্যু কীভাবে ঠেকানো যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সেটি হল মানুষের প্রাণ ও বাড়ির ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বাঁচাতে বাড়িতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানো যেতে পারে। হাউজিং কমপ্লক্সেগুলিতেও একই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রসঙ্গত, ইএসই সার্টিফায়েড একটি লাইটেনিং অ্যারেস্টারের দাম পড়তে পারে ৩০ হাজার টাকা।
দেবারতি ঘোষ: গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যু যেভাবে বেড়েছে তা শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়। গ্রামের মানুষ কিছুটা হলেও এটা লক্ষ্য করছেন হাল আমলে। এ বছরই এখনওপর্যন্ত রাজ্য বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৩৯ জনের। ২০১৮ সাল থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৪৫৯ জনের। বিধানসভায় এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন-যাদবপুরের রেজিস্ট্রারকে হুমকি, অন্য মহিলাকেও শ্লীলতাহানি! গ্রেফতার অভিযুক্ত
রাজ্য সরকারের দেওয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেবার মৃতের সংখ্যা ছিল ৩০৪। এরপরেই ২০২০ সালে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৯৫ জন, ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ২৬৫ জনের, ২০২১ সালে প্রাণ হারান ২৬০ জন এবং ২০২২ সালে প্রাণ হারান ২২৯ জন। এবার এখনও বর্ষার বৃষ্টি চলছে। ফলে এই সংখ্য়াটা আরও বাড়তে পারে।
পরিবেশবিদরা অদ্ভূত একটা বিষয় লক্ষ্য করছেন। সেটি হল কলকাতার মতো শহরে হঠাত্ করেই বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালের আগে এমনটা চোখে পড়েনি। ফলে এনিয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেটি হল বেশিরভাগ মৃত্যুই হয়েছে জুন কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে। এই দুই মাস হল বর্ষা শুরু হওয়া ও বর্ষা চলে যাওয়ার সময়। এবছর সেপ্টেম্বর মাস সবে শুরু হয়েছে। ফলে পরিসংখ্যানের কথা মাথায় রাখলে আরও বজ্রপাতের একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
এখন এত মৃত্যু কীভাবে ঠেকান যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সেটি হল মানুষের প্রাণ ও বাড়ির ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বাঁচাতে বাড়িতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানো যেতে পারে। হাউজিং কমপ্লক্সেগুলিতেও একই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রসঙ্গত, ইএসই সার্টিফায়েড একটি লাইটেনিং অ্যারেস্টারের দাম পড়তে পারে ৩০ হাজার টাকা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ এ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালাচ্ছে। মূলত এই বজ্রপাত নিয়ে তারা বিগত আট বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে একটি যন্ত্র বসিয়েছেন। সে যন্ত্রের ক্রমাগত মনিটরিং হয় বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে আধ ঘন্টা আগে অন্তত বোঝা যায় ওই বাড়ির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কতটা বজ্রপাত হতে চলেছে। যার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে এই রিসার্চ প্রক্রিয়া চলছে সেই প্রফেসর সুব্রত মিদ্দা তিনি জানালেন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারিক কার্যকলাপ তারা করেন কিন্তু তার জন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকাঠামো তাদের নেই। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়েও তিনি বলছেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে সাময়িক সচেতন করা যেতে পারে কিন্তু গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীন সে কারণেই মানুষকে সচেতন করায় প্রশিক্ষণ দেওয়া একমাত্র রাস্তা।
কিন্তু কেন এমনটা ঘনঘন বজ্রপাত হচ্ছে? উত্তরে প্রফেসর মিদ্দা জানালেন, গোটা বিশ্বজুড়ে গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাব ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে উপরের মেঘপুঞ্জের তাপমাত্রার তারতম্য হচ্ছে অনেকখানি, বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হচ্ছে মাটির থেকে অনেক কাছাকাছি। সে কারণেই ক্লাউড টু গ্রাউন্ড এ ধরনের বজ্রপাত যা মানুষের মৃত্যুর কারণ তার সংখ্যা বাড়ছে অনেক। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে গোটা বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর বিবর্তন ঘটছে। যার ফলস্বরূপ বর্ষা শীত গ্রীষ্ম সবই উলটপালট হয়ে গিয়েছে। সাধারণত যে প্রকৃতির মেঘ সঞ্চার গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখীতে দেখা মিলতো তা এখন তথাকথিত ভরা বর্ষাতেও হচ্ছে।
শহরাঞ্চলে কেন এত বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়েছে? তাতে তাঁর দাবি ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে শহর। কংক্রিট এর জঙ্গলের তাপমাত্রা বাড়ছে অনেক বেশি দ্রুত। যে সমস্ত বহুতল বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে তা অধিকাংশই বিদ্যুৎ বা বজ্রবিদ্যুৎ নিরোধক নিয়ম মেনে হচ্ছে না। তাপমাত্রা হঠাৎই এতটাই বেড়ে যাচ্ছে সেখান থেকে হঠাৎ করেই বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হচ্ছে যাতে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে এবং বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে।
বজ্রপাত নিয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসী একমাত্র মানুষকে এই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে বলে তার মত।
সম্প্রতি ওডিশার একটি পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে কিছুটা বোঝা যাবে। গত শনিবার ওডিশাজুড়ে মাত্র ২ ঘণ্টায় মোট ৬১ হাজার বার বজ্রপাত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। আহত ১৪। আবহাওয়াবিদরা বলছেন বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ঝড়বৃষ্টির সময়ে বাড়িতে আশয় নিন, যে কোনও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকুন, কোনও গাছের নীচে দাঁড়াবেন না, বজ্রপাতের সময়ে ফাঁকা মাঠে দাড়ানো যাবে না, গাড়ি চালালে তা থামিয়ে কমপক্ষে রাস্তার ধারে ধাঁড়াতে হবে, নৌকোয় থাকলে সেটিটে দ্রুত তীরে ভিড়িয়ে দিতে হবে, বজ্রপাতে আহত হলে দ্রুত চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে হবে।