সৌমিত্র সেন 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রায় এসেই গেল পুজো। ভাদ্রমাস শেষ হতে চলল। বাতাসে আশ্বিনের মেঘ-রোদ্দুরের গন্ধ। কাশ ফুটল বলে নদীতীরে। ঠিক এই আবহই প্রতি বছর মনে একটা আবেশ তৈরি করে দেয় আর বাঙালির মনটা পুজো-পুজো করে ওঠে।


পুজো নিয়ে বাঙালি অতি-উদ্দীপ্ত। কিন্তু এই দুর্গাপুজোর পিছনে কোন পৌরাণিক ঘটনার প্রবাহ কাজ করে, তা কি আমরা সব সময়ে মনে রাখি? আসুন, আমরা এ বছর অন্তত পুজো শুরুর আনন্দে মেতে ওঠার আগে একটু পুরাণের দিকে তাকাই।


আরও পড়ুন: Accusations of plagiarism: ছাত্র-শিক্ষক দ্বন্দ্ব গড়াল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত!
 
পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে সমগ্র স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অধিকার করল। মুনি-ঋষিরাও রেহাই পেলেন না তার অত্যাচার থেকে। দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলেন। জানা গেল, ব্রহ্মার বরে বলীয়ান মহিষাসুরকে ত্রিলোকের কোনও পুরুষই পরাভূত করতে পারবেন না। তাই সে অপরাজেয়। দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনি শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ক্রোধান্বিত হলেন। তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। তাঁদের ক্রোধাগ্নি এবং দেবতাদের তেজ সম্মিলিত হয়ে এসময়ে তৈরি হয়ে উঠলেন এক নারী। ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশের জন্য তাঁর আবির্ভাব। এজন্য তাঁর নাম-- দুর্গা। 


ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দশভুজা আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে দুর্গার আর এক নাম 'কাত্যায়নী'। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূতা হলেন এই দেবী। অমাবস্যা-পরবর্তী শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিথিতে ঋষি কাত্যায়ন দেবীর পুজো করেছিলেন। সমস্ত দেবতারা এই সময়ে তাঁদের শক্তি ও অস্ত্র দিলেন দেবীকে। ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, কুবের দিলেন গদা, বিষ্ণু চক্র, মহেশ্বর ত্রিশূল। হিমালয় দিলেন সিংহ। দেবী হলেন দশভুজা।


রণহুঙ্কারে কেঁপে উঠল দশদিক। যুদ্ধ শুরু হল। দুর্গার কাছে পরাজিত হল মহিষাসুরের সৈন্যসামন্ত। এরপর শুরু হল মহিষাসুর-দুর্গা যুদ্ধ। প্রবল যুদ্ধে কম্পিত হল ত্রিভুবন। মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে, নানা কৌশলে দেবীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহিষাসুর নিহত হল দেবীর হাতে। দেবীর ত্রিশূল বিদ্ধ করল মহিষাসুর-বক্ষ।


প্রসঙ্গত, কোনও কোনও পুরাণমতে, দেবী মোট তিনবার মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। আদি সৃষ্টি কল্পে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডী রূপে, দ্বিতীয় সৃষ্টি কল্পে ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে, তৃতীয় সৃষ্টি কল্পে দশভুজা দুর্গা রূপে। তৃতীয়বার দেবীর হাতে বধ হওয়ার পর দেবীর আশীর্বাদে মহিষাসুর চিরতরে দেবীর পদতলেই ঠাঁই পেলেন। মহামায়ার সঙ্গেই প্রচলিত হয়ে গেল  মহিষাসুরের পুজোও।


আর সত্য যুগেই প্রচলিত হয়ে গেল দুর্গা-আরাধনা। প্রথম দেবী আদ্যাশক্তি দুর্গার আরাধনা করেছিলেন রাজর্ষি সুরথ, তাঁর সঙ্গী ছিলেন সমাধি বৈশ্য। সময়টি ছিল বসন্তকাল। চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষ। এই পুজোকেই পরবর্তী কালে আমরা বাসন্তীপূজা বলে জানি। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও রাজা সুরথের চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী ও নবমী তিথিতে দুর্গাপূজার কাহিনি রয়েছে। বসন্তকাল উত্তরায়ণের অন্তর্গত। উত্তরায়ণে দেবতারা জাগ্রত থাকেন বলে বাসন্তীপূজায় বোধনের প্রয়োজন হয়নি।


এর পরবর্তী যুগে অর্থাৎ ত্রেতাযুগে চৈত্র মাসেই রাবণের দুর্গা-আরাধনার কথা জানা যায়। তবে রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আগে রামচন্দ্র দুর্গাপুজো করেছিলেন 'অসময়ে', আশ্বিন মাসে। সূর্য তখন দক্ষিণায়ণে। এ সময়ে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। ফলে অকালবোধনের প্রয়োজন পড়ল। দুর্গাকে জাগিয়ে তাঁকে পূজা নিবেদন করলেন রামচন্দ্র। সেই থেকেই ষষ্ঠীর দিনে বোধনের রীতি। শরৎকাল দেবীপূজার 'শুদ্ধ সময়' নয় বলে রামকর্তৃক দেবী দুর্গার বোধন-আরাধন 'অকালবোধন' নামেই পরিচিত হল। 


শাস্ত্রমতে বসন্তকালই দুর্গাপূজার জন্য প্রশস্ত সময় হলেও, আধুনিক যুগে কিন্তু শারদীয়া দুর্গাপূজারই প্রচলন।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Kaushiki Amavasya 2021: শুভশক্তির তরঙ্গ বয়ে চলে কৌশিকী অমাবস্যার 'তারা-রাত্রি' জুড়ে