Accusations of plagiarism: ছাত্র-শিক্ষক দ্বন্দ্ব গড়াল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত!

মোকদ্দমার সম্মানজনক নিষ্পত্তি ঘটে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে।

Updated By: Sep 5, 2021, 06:17 PM IST
Accusations of plagiarism: ছাত্র-শিক্ষক দ্বন্দ্ব গড়াল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত!

নিজস্ব প্রতিবেদন: দুই দার্শনিকে লড়াই। আসলে বলা উচিত-- এ বড় কঠিন ঠাঁই/গুরুশিষ্যে দেখা নাই! কেননা, এ তো গুরুশিষ্যেরই সংঘাত। ছাত্র-শিক্ষকে মামলা-মোকদ্দমা। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের নিষ্কলুষ কেরিয়ারে একটিই কলঙ্কদাগ-- তাঁর ছাত্র তাঁরই বিরুদ্ধে 'চৌর্যবৃত্তি'র অভিযোগ এনেছিলেন! যদিও সর্বপল্লী সে অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছিলেন। পরে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে চলতে থাকা মামলা-মোকদ্দমার সম্মানজনক নিষ্পত্তি ঘটে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে।

সর্বপল্লীর সঙ্গে সংঘাত বেধেছিল যদুনাথ সিংহের। কে এই যদুনাথ সিংহ? যদুনাথ বীরভূম জেলার কুরুমগ্রামে ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আগাগোড়া একজন ব্রিলিয়ান্ট স্কলার যদুনাথ ১৯১৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক হন এবং 'ফিলিপ স্যামুয়েল স্মিথ' ও 'ক্লাইন্ট মেমোরিয়াল' পুরস্কারের জন্য আবেদন করেন। ১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এম.এ. করেন। পরে ১৯৩৪ সালে কলকাতা থেকেই পিএইচডি। বিভিন্ন প্রখ্যাত প্রকাশনা থেকে তাঁর বই প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর লেখা দু'টি বই লন্ডনের এক প্রখ্যাত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়। ড. সিংহ ক্রমে ভারতীয় দর্শনের একজন কাল্ট ফিগারে পরিণত হন।

রও পড়ুন:  Bhupendranath Datta: স্বামী বিবেকানন্দের কনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রনাথ আজ এক বিস্মৃতপ্রায় নাম

এ হেন যদুনাথ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের বিরুদ্ধে তাঁর Indian Psychology of Perception থিসিস থেকে চুরির অভিযোগ আনেন। কলকাতা হাইকোর্টে এ নিয়ে মামলাও করেন তিনি। যদুনাথ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তির জন্য 'ইন্ডিয়ান সাইকলজি অব পারসেপশন' গবেষণাপত্রটির প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড জমা (সম্ভবত ১৯২২-২৩ সালে) দিয়েছিলেন। যদুনাথের দাবি, তাঁর সেই গবেষণাপত্র থেকেই নাকি ব্যাপকভাবে 'টুকেছিলেন' রাধাকৃষ্ণণ। প্রসঙ্গত, যদুনাথের এই Indian Psychology of Perception বইটি কিন্তু প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে।

রাধাকৃষ্ণণের কোন বইটির ব্যাপারে এই অভিযোগ এনেছিলেন যদুনাথ? 

১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল রাধাকৃষ্ণানের সাড়া জাগানো 'ইন্ডিয়ান ফিলজফি'র দ্বিতীয় খণ্ড। যদুনাথের দাবি, রাধাকৃষ্ণণের ওই বইটি কার্যত তাঁর গবেষণাপত্রটির (যেটি ১৯২৫ সালে ছাপা হয়েছিল) পুনর্মুদ্রণ। যদিও ড. সিংহ তাঁর বই ঘিরে রাধাকৃষ্ণণের এই 'প্লেজিয়ারিজমে'র বিষয়টি নাকি জানতে পারেন ১৯২৮ সালে, যখন রাধাকৃষ্ণণের 'দ্য বেদান্ত অ্যাকর্ডিং টু শংকর অ্যান্ড রামানুজ' বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইটিই আসলে ছিল রাধাকৃষ্ণণের 'ইন্ডিয়ান ফিলজফি'র দ্বিতীয় খণ্ডের অষ্টম ও নবম অধ্যায়ের স্বতন্ত্র এক পুনর্মুদ্রণ। সেই বইটিতেই যদুনাথ সবিস্ময়ে লক্ষ্য করেন, তাঁর গবেষণাপত্রের প্রথম দু'টি অধ্যায় থেকে বেশ কিছু অনুচ্ছেদ হুবহু নিয়েছেন তাঁর একদা-অধ্যাপক তথা প্রথিতযশা দার্শনিক রাধাকৃষ্ণণ! অথচ কোনও 'ঋণস্বীকারে'র ব্যাপারই নেই! তখনই তিনি 'মর্ডান রিভিউ' পত্রিকায় রাধাকৃষ্ণণের এই 'চৌর্যবৃত্তি'র ঘটনা প্রকাশ করেন। কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করেন। যদিও কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলাটির রায় বের না করেই মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়ে দেয় বলে জানা যায়।

কিন্তু গোটা বিষয়টিতে কি বরাবর চুপ করেই ছিলেন সর্বপল্লী?

না! তিনি প্রথমেই তাঁর একদা-ছাত্র তথা অন্যতম বিশিষ্ট দার্শনিক যদুনাথ সিংহের এই অভিযোগ সম্পূর্ণত অস্বীকার করেছিলেন। এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর যে বইটি (Indian Philosophy II) নিয়ে এই অভিযোগ, সেই বই ১৯২৪ সালেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। যদিও এটি প্রকাশনা-সংক্রান্ত গড়িমসির কারণে ৩ বছর পরে, অর্থাৎ, ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়।

অর্থাৎ, সর্বপল্লীর দেওয়া তথ্য ঠিক হলে যদুনাথের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলেই প্রতিপন্ন হয়। কেননা, তাঁর যে বই থেকে সর্বপল্লীর 'টোকাটুকি'র অভিযোগ তুলেছিলেন যদুনাথ, সেই বইটি প্রকাশই হয়েছিল ১৯২৫ সালে, সর্বপল্লীর রচনার ১ বছর পরে!

শোনা যায়, পরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে বিষয়টির একটি সম্মানজনক নিষ্পত্তি ঘটে।

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Teachers Day 2021: শিক্ষক দিবসে স্মরণ জাতির অন্যতম শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণকে

.