দূর্ঘটনায় হারিয়েছেন ডান পা, মেলেনি সরকারি সাহায্য; ছাতা তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন গণেশ
গণেশ জানিয়েছেন, ঘাটালের রাধানগরের ঈশ্বরপুরে এক মহাজনের কাছ থেকে ছাতা তৈরির সব সামগ্রী নিয়ে আসেন তিনি এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০০ ছাতা বানিয়ে আবার দিয়ে আসতে হয়
নিজস্ব প্রতিবেদন: দূর্ঘটনায় বাদ গেছে ডান পা,মেলেনি সরকারি কোনও সাহায্য। দাবদাহে ছাতা তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন চন্দ্রকোনার গণেশ।
রাজ্যজুড় চলছে তীব্র দাবদাহ। এই সময় গরমের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ নানা পন্থা অবলম্বন করছে। ফলত এই মরসুমে ছাতার চাহিদাও তুঙ্গে। তাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দরবস্তি বালা গ্রামের ২৭ বছরের যুবক গণেশ শাল ব্যস্ত একচিলতে বাড়িতে ছাতা তৈরিতে।
সংসারের কাজ সামলে গণেশের এই কাজে সঙ্গ দিয়েছেন তার স্ত্রী মালা। গণেশ ও মালার একটি ৩ বছরের কন্যা সন্তানও রয়েছে। প্রচন্ড দাবদাহে মাটির বাড়ির উঠানে স্বামী স্ত্রী মিলে ছাতা তৈরির কাজে ব্যস্ত। ছাতার চাহিদা তুঙ্গে থাকে গ্রীষ্ম ও বর্ষার মরসুমে। একপায়ে ভর করেই ছাতা তৈরি করে সংসারের হাল ধরেছে গণেশ শাল।
জানা গেছে,বছরখানেক আগে কোভিড কালে বাদ গেছে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী গণেশের ডান পা। আগে মার্বেল পাথর বসানোর মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করতেন গণেশ। অন্যের বাড়িতে মার্বেল পাথর বসানোর কাজ চলাকালীন পড়ে গিয়ে ডান পায়ে চোট লাগে। বহু ডাক্তার দেখিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। একসময় ডাক্তারের পরামর্শে বাদ যায় ডান পা। তারপর বাড়িতেই দিন কাটছে গণেশের। ছাতা তৈরির কাজ রপ্ত করে বাড়িতেই তা বানিয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে দিয়ে আসতে হয় মহাজনের কাছে।
গণেশ জানিয়েছেন, ঘাটালের রাধানগরের ঈশ্বরপুরে এক মহাজনের কাছ থেকে ছাতা তৈরির সব সামগ্রী নিয়ে আসেন তিনি এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০০ ছাতা বানিয়ে আবার দিয়ে আসতে হয়। এই এক পায়ের সাহায্যে টোটো নিয়ে সপ্তাহে দুবার যাতায়াত করতে হয়।
আরও পড়ুন: Weather Today: রাজ্যে দাবদাহের মাঝে স্বস্তি, বৃষ্টির পূর্বাভাস রাজ্যজুড়ে
সপ্তাহের শেষে মহাজনের থেকে মজুরি হিসাবে ১০০০-১২০০ টাকা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন গণেশ শাল। এই সময় তীব্র দাবদাহে ছাতার চাহিদা থাকায় স্বামী স্ত্রী মিলে জোরকদমে চলছে ছাতা তৈরির কাজ। গণেশ ও তার পরিবারের আক্ষেপ,ডান পা বাদ পড়ার পর স্থানীয় বিধায়কের থেকে পাওয়া গেছে একটি হুইলচেয়ার। তা ছাড়া সরকারি আর কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। ডান পা বাদ পড়ার পর প্রতিবন্ধী তালিকায় নাম তোলার জন্য সরকারি দপ্তরে জানিয়েও কোনও সুফল হয়নি বলে অভিযোগ গণেশের। এতেও দমে না গিয়ে এই গরমের মরসুমে এক পায়ে ভর করে ছাতা তৈরি করে স্বনির্ভরতায় দৃষ্টান্তস্থাপন করেছেন চন্দ্রকোনার যুবক গণেশ।