মহসিন কাকুকে ছাড়তে নারাজ, পা ধরে কেঁদে ভাসাল ছোট্ট কৃষ্ণ
গাড়িতে উঠে ফের অন্য গন্তব্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিল কৃষ্ণ। ওকে ছাড়তে বোধহয় মন কেঁদেছিল 'মহসিন কাকুর'ও।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়েই ছোট্ট কৃষ্ণকে মায়ায় বেঁধে ফেলেছিল মহসিন। তাই শেষ দিনে ছেড়ে যেতে মন কেঁদেছিল দু-তরফেই। তবে আইনের বিধিনিষেধে শেষ পর্যন্ত দু-জনকেই ফিরতে হয়েছিল আপন গন্তব্যে। সে এক অন্য ভালবাসা আর ভাল রাখার গল্প। সব কিছুর ঊর্ধ্বে যেখানে রয়েছে যা কিছু মানবিক। যার ওপর ভর দিয়েই ছোট্ট কৃষ্ণকে উদ্ধারে তৎপর হয়েছিল পরিত্যক্ত সরঞ্জাম ব্যবসায়ী মহসিন।
সেদিন ইটভাটার কাজ শেষ করে মা-বাবার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল বছর সাতেকের কৃষ্ণর। তার দাবি অন্তত তেমনই। রানাঘাট স্টেশনে তাকে বসিয়ে টিকিট কাটতে গিয়েছিল বাবা-মা। তাদের ফেরার আগেই অজ্ঞাতপরিচয়ের কোনও এক ব্যক্তি জোর করেই টেনে নিয়ে চলে যায় কৃষ্ণকে। একাধিক হাত ঘুরে শেষে কৃষ্ণর ঠিকানা হয় কল্যাণীর ইটভাটায়। সেখানেই ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল কৃষ্ণর শৈশব।
আরও পড়ুন: ধাবায় বচসার জের, রাগে গাড়ির তলায় পিষে যুবককে খুন অ্যাপ ক্যাব চালকের
রুক্ষ্ম এলোমেলো চুল, মলিন শরীরে বাসন মাজা, কাপড় কাচা আর ফাইফরমাশ খেটে দিন কাটছিল খুদের। তখনই হাজির হয়েছিলেন 'মহসিন কাকু'। লোহা লক্করের ব্যবসায়ী চন্দননগরের বাসিন্দা মহসিন সেদিন গিয়েছিলেন ইটভাটায়, চোখে পড়েছিল কৃষ্ণর করুণ অবস্থা। এরপর কৃষ্ণর সঙ্গে কথা বলে সব কথা জানতে পারে মহসিন। সিদ্ধান্ত নেয় বাবা-মার কোলে খুদেকে ফিরিয়ে দেবেন তিনি। পরিকল্পনা-মাফিক রাস্তার মোড়ে মহসিনের জন্য অপেক্ষা করে কৃষ্ণ। সুযোগ বুঝে ছোট্ট কৃষ্ণকে নিয়ে উধাও হন 'মহসিন কাকু'।
এরপর চন্দননগরের বাড়িতে কৃষ্ণকে এনে চলছিল কৃষ্ণর পরিচর্যা। ছোট্ট জীবনে দুনিয়া দেখে বহুদিন পর পেট ভরে খেতে পেয়েছিল সে। এভাবেই মায়ার বাঁধন দৃঢ় হয়েছিল মাত্র কয়েকদিনেই। তবে বাধ সাধল আইনি বেড়াজাল। নিজের হাতে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি কৃষ্ণকে। প্রতিবেশীদের চাপে পুলিসের কাছে কৃষ্ণকে নিয়ে হাজির হতে হল। হাজির হলেন চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধি। তারা কৃষ্ণকে সরকারি হোমে পাঠাতে চাইলে বেঁকে বসল খুদে। মহসিন কাকুকে কিছুতেই ছাড়তে নারাজ কৃষ্ণ। কিন্তু আইন যে মানতেই হবে প্রশাসনের কর্তাদের। তাই জোর করতেই মহসিন কাকুর পা জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করে সে।
বিচ্ছেদের এই ছবিতে মন ভারাক্রান্ত চন্দননগর থানার কর্মী ও আধিকারিকদেরও। কিন্তু আইন মেনে তাকে ঘরে ফেরাতে যে উপায় নেই আর।