Malda Child: সরকারি হাসপাতালেই মিলল সাফল্য, দীর্ঘ ৯ বছর পর নিজের পায়ে হাঁটল শিশু
মা রুনা পারভিন বলেন, মেয়ে হাঁটতে পারবে এই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়ঝাঁপ করেও মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারিনি
রনজয় সিংহ: জন্মের ৯ বছর পর নিজের পায়ে হাঁটা শুরু করল আজমিরা পারভিন। সৌজন্যে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। মেয়েকে হাঁটতে দেখে কেঁদে ফেললেন মা।
সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে নানান অভিযোগ উঠলেও আজমিরার কাহিনী বলে অন্য কথা। মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে ২ টাকার টিকিট কেটে পরিবারের মুখে ফুটল অনাবিল হাসি। দীর্ঘ ৯ বছর পর পায়ে হাঁটতে শুরু করল দিনমজুর পরিবারের সন্তান আজমিরা পারভিন।
মালদহের চাঁচল-১ নং ব্লকের মকদমপুর পঞ্চায়েতের ইসমাইলপুরের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি আসাদ আলি। তার পরিবারে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছোটো মেয়ে আজমিরা জন্মের পর থেকেই পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। দীর্ঘ ৯ বছর বাবা-মায়ের কোলেই বড় হয়েছে আজমিরা। কখনও বিছানায় কখনও বা মায়ের কোলেই আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। হেঁটে চলার ক্ষমতা তার ছিল না। যত দিন যাচ্ছিল,ততই জটিল হচ্ছিল রোগ। রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল নুন আনতে পান্তে ফুরোনোর সংসারে। কীভাবে এই জটিল রোগের চিকিৎসা করাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন দিনমজুর পরিবারের কর্তা। সংসারের সঞ্চিত অর্থ খরচ করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েও সুফল মেলেনি। নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় গ্রামে।
তাদের সন্তান কোনদিনও আর নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে না। এইভাবেই নিরাশ হয়ে মেয়েকে বাড়িতেই শয্যাসায়ী করে রেখেছিলেন বাবা-মা।
অবশেষে প্রতিবেশীদের পরামর্শে স্থানীয় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে ছুটে গেলেন আজমিরার বাবা-মা। সেখানে ফিজিওথেরাপি বিভাগে শুরু হয় তার চিকিৎসা। টানা একবছর চিকিৎসা চলার পর উঠে দাঁড়াল আজমিরা। চিকিৎসকদের পরামর্শে 'ক্যালিপার শ্যু' পরিয়ে তাকে হাঁটান হল। উদ্যম জেদ ও ইচ্ছে শক্তির জেরে গুটি গুটি পায়ে হাটতে শিখল বিছানায় বন্দি আজমিরা। এই দৃশ্য দেখে আনন্দে আত্মহারা পরিবার থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আজমিরার মা রুনা পারভিন বলেন, মেয়ে হাঁটতে পারবে এই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়ঝাঁপ করেও মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারিনি। কিন্ত বাড়ির পাশে সরকারি চাঁচল হাসপাতালেই যে মিলবে রোগ নির্ণয়ের বিকল্প সুরাহ, তাও আবার নিখরচায়,ভাবতেই অবাক লাগছে।
হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিষ্ট সুনির্মল ঘোষ বলেন,আমরাও উচ্ছসিত যে দিনমজুরের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম।বছর খানেক আগে সংকল্প নিয়েছিলাম। ছোট্ট আজমিরাকে পায়ে হাঁটাব। স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ব্যয়বহুল বিশেষ সু দেওয়া হয়েছে। তা পরেই হাঁটছে আজমিরা। শুধু আজমিরাই নয়, এইভাবে এবছর প্রায় ১০ শিশুকে আমরা হাঁটার পথ খুঁজে দিয়েছি।
চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারি সুপার শান্তনু কর্মকার জানান, তিনবছর আগে হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করা হয়। এখানে মহকুমার শতাধিক বিকালাঙ্গ শিশু চিকিৎসা করিয়েছিল। সিংহভাগই সুস্থ হয়েছে।