Durga Puja 2023: মেঘনাদ, কুম্ভকর্ণের পর এবার দশানন! রাবণকাটা নাচে মত্ত মল্লভূম...
Durga Puja 2023: সন্ধে হলেই শিল্পীরা হাজির হন শহরের একপ্রান্তে। সেখানে দশমীর দিন বধ করা হয়েছে ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদকে, একাদশীতে বধ হয়েছে কুম্ভকর্ণ, এবার দ্বাদশীর সন্ধ্যায় রাবণবধ। রাবণবধ করে তবে শেষ হয় নাচ।
মৃত্যুঞ্জয় দাস: পুজো মিটলেও আপাতত উৎসবের রেশ কাটছে না মল্লগড় বিষ্ণুপুরে। সুপ্রাচীন রীতি মেনে আজও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে দশমী থেকে শুরু হয়েছে রাবণকাটা নাচ। চলবে আজ, দ্বাদশী পর্যন্ত। সেই নাচেই আপাতত মাতোয়ারা গোটা মল্লভূম। রাবণকাটা নাচের পাশাপাশি দশমীর দিন বধ করা হয়েছে ইন্দ্রজিৎ তথা মেঘনাদকে, গতকাল একাদশীতে বধ করা হয়েছে কুম্ভকর্ণকে আর দ্বাদশী অর্থাৎ, আজ সন্ধ্যায় রাবণবধের মাধ্যমেই শেষ হবে এই রাবণকাটা নাচ।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর প্রাচীন মল্লরাজাদের রাজধানী। এই শহরের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজারো ইতিহাস আর গল্পকথা। যার সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ভিন্নধারার সংস্কৃতি। রাজ-আমলে জন্ম হলেও সেই সব সংস্কৃতির ধারা আজও অব্যাহত বিষ্ণুপুরে। রাবণকাটা নাচ তেমনই এক সংস্কৃতি। যা যুগ যুগ ধরে দিব্যি টিকে রয়েছে বিষ্ণুপুরে।
কথিত আছে, রামের হাতে রাবণ নিহত হওয়ার পরে বানরসেনারা যে বীররসের নাচে মেতে উঠেছিল তাকে স্মরণ করেই একসময় বিষ্ণুপুরের বুকে জন্ম নিয়েছিল এই রাবণকাটা নাচের। এই নাচের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল-- চার জন নৃত্যশিল্পী যথাক্রমে হনুমান, সুগ্রীব, জাম্বুবান ও বিভীষণ সেজে কাড়া-নাকাড়া-সহ বিভিন্ন প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নাচ পরিবেশন করে বেড়ান বিষ্ণুপুরের পথে পথে। একসময় মল্লরাজাদের উৎসাহে এই নৃত্যশিল্পীরা মল্ল রাজধানীর রাজপথে পথে নাচ দেখিয়ে মানুষকে বিনোদন জোগাতেন। খুশি হয়ে রাজা শিল্পীদের হাতে তুলে দিতেন মোহর ও অন্যান্য উপঢৌকন।
সেই রাজারা এখন নেই। নেই তাঁদের রাজত্বও। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিষ্ণুপুরে একদল শিল্পী টিকিয়ে রেখেছেন এই নাচ। এখন রাবণকাটা নাচের শিল্পীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষকে বিনোদন দিয়ে বেড়ান। বিনিময়ে গৃহস্থের সদস্যরা যা তুলে দেন তাই সংগ্রহ করেন। দশমী থেকে দ্বাদশী এই তিনদিন দিনভর বিষ্ণুপুরের পাড়ায় পাড়ায় নাচ দেখানোর পর সন্ধ্যা হলেই শিল্পীরা হাজির হন শহরের একপ্রান্তে থাকা অস্থল নামের এক জায়গায়। সেখানে দশমীর দিন বধ করা হয় ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদকে। একাদশীতে হয় কুম্ভকর্ণবধ এবং দ্বাদশীর সন্ধ্যায় রাবণবধ। রাবণবধ করে শেষ হয় নাচ।
আরও পড়ুন: Jalpaiguri Durga Puja Carnival: কার্নিভালের প্রস্তুতি তুঙ্গে, শেষে করলানদীর ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন...
এই নৃত্যশিল্পীদের দাবি, বহু কষ্টে এই শিল্পকে তাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিনিময়ে যা মেলে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। তারপরও শুধুমাত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে আজও তাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টেনে নিয়ে চলেছেন এই সংস্কৃতিকে।