নিজস্ব প্রতিবেদন:   হাতে বইপত্র, কিছু নোটস, পকেটে মোবাইল। ইতিহাসের শিক্ষক রোজ বাড়ি থেকে বেরোন, তারপর উঠে পড়েন অদূরেই একটি নিমগাছে! না, ভুল পড়লেন না। সত্যি, ইতিহাসের শিক্ষক উঠে পড়েন নিমগাছে।  কারণ জানেন? লকডাউনেও অনলাইন শিক্ষকতা করতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু নিম গাছের মাথায় চড়ে কেন? প্রশ্ন তো এটাই আসছে মনে? আসলে 'মহান' মোবাইল নেটওয়ার্কের সৌজন্যে তাঁকে এখন ছাত্র পড়াতে হচ্ছে গাছের মাথায় চড়েই।  বিষয়টা এবার খোলসা করা যাক।
লকডাউনে আমাদের প্রায় প্রত্যেককেই ওয়ার্ক ফর্ম হোম করতে হচ্ছে। যাঁরা শিক্ষকতা করেন, অনলাইনে ছাত্র পড়াচ্ছেন তাঁরা। বাঁকুড়ার বছর পঁয়ত্রিশের সুব্রত পতিও শিক্ষকতা করেন।  কলকাতার একটি চাকরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ান তিনি। কিন্তু লকডাউনে বন্ধ সেই দুটি প্রতিষ্ঠানও। অগত্যা ছাত্র পড়াতে হবে বাড়ি থেকেই। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম অহন্দতে থাকেন তিনি। ব্রডব্যান্ড কানেকশন তো দূরের কথা, মোবাইলের নেটওয়ার্কটাও ঠিকঠাক ধরে না সেখানে।
সেই নেটওয়ার্কে ফোনে কথা বলতে গেলেই জ্যোতিচিহ্ন টানতে হয় বারবার, তাতে নাকি আবার 'হটস্পট' অন করে 'ওয়াইফাই'  কানেক্ট করে অনলাইন ক্লাস! নিতান্ত দেহাতি সেই গ্রামে গোটা বিষয়টিই বড্ড গোলক ধাঁধাঁর মতো ।
কিন্তু পেশা আর তার থেকেও বড় কথা কর্তব্য- এই দুইয়ের পিছুটানের কাছে ফোনের নেটওয়ার্ক তুচ্ছ বটে! তাই প্রতিষ্ঠান থেকে যখন নির্দেশ এসেছিল, বাড়ি বসেই কাজ করতে হবে, তখন এক দু'বার নেটওয়ার্কের কথা মাথায় এলেও 'ম্যানেজ' করে নেবেন বলেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন তিনি।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আতঙ্কের মধ্যেই খানিক স্বস্তি আনল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল ও কাঁথির নার্সিংহোমের খবর
ঘরে বসে চেষ্টা করেছিলেন ক্লাস নেওয়ার।  হয়নি। আশেপাশের এলাকা যেখানে অন্তত নেটওয়ার্কের প্রত্যেকটা কাঁটা দণ্ডায়মান, সেখানে বসেও চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হন।  তাই বাড়ির সামনের নিমগাছের ডগাটাই শ্রেয়! যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিমগাছের মাথায় উঠে বানিয়ে ফেললেন মাচা। খোলা আকাশ, ফুরফুরে হাওয়া, চড়া রোদ কিংবা ঝিরঝিরে বৃষ্টি, ঝরে পড়া নিমপাতা আর ইতিহাসের নোটস, মোটা দিস্তা খাতা- যেন অনবদ্য মেলবন্ধন! ভালোই জমে উঠেছে সুব্রতর ক্লাসরুম!
শিক্ষকের কর্তব্যপরায়ণতা দেখে কার্যত মোহমুগ্ধ ছাত্ররাও।
বুদ্ধদেব মাইতি নামে তাঁর এক ছাত্রের কথায়, "আমরা স্যারের কোনও ক্লাসই মিস করি না। এতটা যেখানে উনি আমাদের জন্য করছেন, আমাদের তো শুধু এটাই দেওয়ার আছে। প্রথমদিন থেকেই স্যার নিজের কাজের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল।"
বাঁকুড়ার গরম, সে তো বলাই বাহুল্য! চড়া রোদে পোড়ে পিঠের চামড়া কিন্তু ক্লাস নেওয়ার পর তৃপ্তির হাসি থাকে সুব্রত মুখে। এদিনও তাঁকে ক্লাস নিতে দেখা গেছে নিমগাছের মাথাতেই। সেখান থেকেই বললেন, "সমস্যা হচ্ছে বইকি! গরমের সঙ্গে আপোস করে নিচ্ছি কিন্তু বৃষ্টি হলে তো ক্লাস বন্ধ।  পরেরদিন আবার সেখান থেকেই শুরু করছি। ছাত্ররা অত্যন্ত সহযোগিতা করছে, তাই পারছি।"


‘মুখ্যমন্ত্রী কতদিন লুকিয়ে রাখবেন, এভাবে চললে রাজ্যে ভয়ঙ্কর আকার ধারন করবে করোনা’
সুব্রত পারছেন, তিনি করিয়ে দেখিয়ে দিলেন।  কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে। মোবাইলের মোটা টাকার রিচার্জ কিংবা প্রি পেড প্ল্যান নিলেও কেন এখনও গ্রামের বাড়িতে বসে কাজ করতে পারবেন না এই সুব্রতরা? কেন তাঁদের এই ভাবে 'অ্যাডজাস্ট' করে নিতে হচ্ছে?
প্রশ্ন রয়েছে আরও একটা। 'ওয়ার্ক ফর্ম হোম' করার নির্দেশ তো দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলি, কিন্তু একবারও কি তাঁরা ভেবে দেখছেন, বাড়িতে বসে কাজ করার মতো পরিকাঠামো আদৌ তাঁদের রয়েছে কিনা? জীবিকার মোহে করতে হচ্ছে সব্বাইকে, তা না করলে যে এই দুর্দিনের বাজারে বেসরকারি কর্মচারীরা একটাই ভয় পাচ্ছেন, "অ্যাডজাস্ট না করলে যদি হাতে চিঠি চলে আসে!"