WB assembly election 2021 : 'বোরখা' বিতর্কে বিশ বছরের বেশি ভোট দেয় না বাংলার এই গ্রামের মহিলারা
WB assembly election 2021 : মোট মহিলা ভোটার রয়েছেন ৯০০ জন। কিন্তু গ্রামের পুরুষ ভোটাররা ভোট দিলেও, মহিলারা আর ভোট দেন না।
বাসুদেব চ্যাটার্জি
এ এক আজব গ্রাম, আর তেমনই তার তাজ্জব করা রীতি! বাংলায় প্রথম দফার ভোটগ্রহণের দিন যখন আট থেকে আশি, ছেলেবুড়ো, নারী-পুরুষের দল যখন ভোট দিতে ব্যস্ত, তখন বাংলার এই গ্রামে তার বিপরীত ছবি। এই গ্রামের কোথাও কোনও ভোটের লাইনে দেখা যায় না কোনও মেয়ে বা মহিলাকে। এই গ্রামের মহিলারা ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। এমনটাই হয়ে আসছে বিগত বিশ-বাইশ বছর ধরে। এটাই রীতি, এটাই রেওয়াজ! গ্রামের নাম হরিহরপুর...
পুরুলিয়ার পারা বিধানসভায় কেন্দ্রের অন্তর্গত হরিহরপুর গ্রাম। মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস এই গ্রামে। গ্রামে বুথও রয়েছে দুটি। কিন্তু না, গ্রামের মহিলারা এখানে ভোট দিতে যান না। ভোটার কার্ড রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে কার্ড গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে কোনও কাজে লাগে না! বছরের পর বছর ধরে প্যাকেটবন্দি হয়ে অথবা না হয়ে হয়তো ঘরের কোনও কোণায় বা দেরাজে পড়ে রয়েছে। কিন্তু কেন? কোনও কুসংস্কার? সামাজিক অনুশাসন? খোঁজ করেছিলাম আমরা Zee ২৪ ঘণ্টা। আর তাতেই উঠে এল অজানা এক গল্প।
যে গল্পের নেপথ্যে কুশীলব দুটি বিষয়। এক বোরখা, দুই গ্রামের মোড়ল। হরিহরপুর গ্রামেরই বাসিন্দা বেনিয়ান কাজির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, "বছর ২০-২২ আগে গ্রামের মহিলারা ভোট দিতে যেতেন। কিন্তু সেইসময়ই একটা অশান্তি হয়। এক মহিলা ভোটার বোরখা পরে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক ছড়ায়। তিনি সত্যিই মহিলা ভোটার নাকি ভুয়ো ভোটার? প্রশ্ন ওঠে। সেই ঘটনার পর থেকেই গ্রামের মহিলাদের ভোটদানে দাঁড়ি পড়ে যায়। তারপর থেকেই গ্রামের মোড়লরা সিদ্ধান্ত নেন যে, কোনও মহিলা আর বুথে গিয়ে ভোট দেবে না।"
বেনিয়ান গাজি আরও বলেন, " গ্রামে দুটি বুথ রয়েছে, ২১৮ ও ২১৯। ২১৮ নম্বর বুথে ৬৫০ জন ও ২১৯ নম্বর বুথে মোট ১০৪৬ জন ভোটার রয়েছে। আর দুই বুথ মিলিয়ে মোট মহিলা ভোটার রয়েছেন ৯০০ জন। কিন্তু গ্রামের পুরুষ ভোটাররা ভোট দিলেও, মহিলারা আর ভোট দেন না।" তিনি জানান, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সময় সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছিল বটে যে মহিলা ভোটাররাও যেন ভোট দিতে যান! কিন্তু সে চেষ্টা কাজে আসেনি। এবারও চেষ্টা হয়েছে..."
কিন্তু পরিস্থিতি যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। ২১৮ ও ২১৯ নম্বর বুথ ছাড়া ওই এলাকায় আরও ৪টি বুথ রয়েছে। এখন মোট ৬টি বুথের ৪টিতে গুটিকতক মহিলা ভোট দিতে গেলেও হরিহরপুর গ্রামের ছবিটা বদলায়নি একুশের ভোটেও। ২১৮ ও ২১৯ নম্বর বুথে কোনও মহিলা ভোটদান করবে না বলে সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন গ্রামের মোড়লেরা। যদিও, গ্রামের বাসিন্দারা চাইছেন যেভাবেই হোক এই রীতি-রেওয়াজ বন্ধ হোক। মহিলারাও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটদান করুক। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক। Zee ২৪ ঘণ্টাকে এমনটাই জানালেন হরিহরপুরবাসী।