Jalpaiguri: দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, অথচ হৃদয়ে প্রবল শক্তি! অদম্য আশিসের এগিয়ে চলার গল্প...

Jalpaiguri: তাঁর বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সাথে জীবনযাপন করছেন। ছোট ভাই দেবাশীষও ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন, এবং চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাড়িতে থাকে। মেজো ভাই শুভাশিস সাহা, বাবার সঙ্গে চাষবাসের কাজে সহযোগিতা করে। আশিস পরিবারের বড় ছেলে, এবং বাড়ির সকল দায়িত্ব তাঁর উপরেই।

Updated By: Dec 5, 2024, 04:17 PM IST
Jalpaiguri: দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, অথচ হৃদয়ে প্রবল শক্তি! অদম্য আশিসের এগিয়ে চলার গল্প...

প্রদ্যুৎ দাস: শিশুর মতো নির্ভুল হাসি, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, অথচ হৃদয়ে অদম্য শক্তি এই হলো ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন আশিস সাহা। তিনি শুধু দৃষ্টিহীন নয়, বরং এক জীবন্ত উদাহরণ, যে কীভাবে অপ্রতিরোধ্য সংকল্প এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো মোকাবেলা করা যায়। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের ভক্তিনগর থানা অধিন ফুলবাড়ি এলাকার এই যুবক আশিস সাহা স্নাতকোত্তর এবং বিএড পাশ করেছেন। কিন্তু পরিশ্রমী যুবকটির জীবনে চাকরি আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করার পরেও সুযোগ মেলেনি। তবে, জীবনের কঠিন সত্যগুলোকে তিনি মেনে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।

আরও পড়ুন: South 24 Parganas: দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গোয়ালঘরেই 'আইসিডিএস' সেন্টার! স্মার্ট ক্লাসের আলোর যুগে এমন 'অন্ধকার' কোথায়?

দৃষ্টিহীনতা তাঁর স্বপ্নে বাধা তৈরি করেনি, বরং তার মনোবল আরও শক্তিশালী হয়েছে। ২০২২ সালে প্রাইমারি টেট পরীক্ষায় পাশ করার পরেও ইন্টারভিউয়ের জন্য দিন ডাক আসেনি বলে অভিযোগ আশিসের। তবুও দমে যাননি আশিস। তিনি জানালেন, কষ্ট তো আছেই, কিন্তু আমি লড়ে যাব। বর্তমানে জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়কের পাশে গোশালা মোর, বেলাকোবার শিকারপুর হাট, ফাটাপুকুর বিভিন্ন এলাকায় ধূপকাঠি বিক্রি করেন তিনি। শিলিগুড়ি মাটিগাড়া, নকশালবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা তিনি লাঠির উপর ভরসা করেই বাসে টোটো তে পায়ে হেঁটে ধূপকাঠি বিক্রি করেন কিছু উপার্জনের আশায়। যতটুকু আয় হয় সেটা দিয়ে তিনি চাকরির পরীক্ষার খরচ যোগান পাশাপাশি সংসারে সাহায্য করেন। এখান থেকে শুরু হয় তাঁর প্রতিদিনের সংগ্রাম। বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে ধূপকাঠি বিক্রি করে কোনোভাবে নিজের দিনযাপন করছেন। শিলিগুড়ি কোর্ট মোড়, শিলিগুড়ি জংশন, মাটিগাড়া, আমবাড়ি—এই সব জায়গায় তাঁর পায়ের চিহ্ন পাওয়া যায়। তবে, কষ্টের পাশাপাশি তাঁর মনে সবসময় থাকে সেই অদম্য স্বপ্ন, যে একদিন নিজের অবস্থান তৈরি করবেন। আশিসের পরিবারের অবস্থা একটু জটিল। 

তাঁর বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সাথে জীবনযাপন করছেন। ছোট ভাই দেবাশীষও ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন, এবং চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাড়িতে থাকে। মেজো ভাই শুভাশিস সাহা, বাবার সঙ্গে চাষবাসের কাজে সহযোগিতা করে। আশিস পরিবারের বড় ছেলে, এবং বাড়ির সকল দায়িত্ব তাঁর উপরেই।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে যেকোনো সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়তে পারতেন, কিন্তু আশিস সাহা আবার ভিন্ন। তিনি জানালেন, "জীবনের কঠিন সময়ের মধ্যে আমি ভাবি, একদিন তো একটা পথ খুঁজে পাবো। জীবনের সব বাধা কাটিয়ে আমাকে এগিয়েই যেতে হবে।"

আরও পড়ুন: Bardhaman: টিউবওয়েল চুরি! তা-ও কি সম্ভব? কীভাবে ঘটছে এমন ভূতুড়ে চৌর্যকাণ্ড? কেনই-বা?

তার সংগ্রামের গল্প শুধুমাত্র একটি জীবন্ত উদাহরণ নয়, বরং সমাজের সকলকে শেখানোর মতো একটি বার্তা। যে বাস্তবতা আমাদের সামনে আসে, তার মধ্যে থেকেও যদি ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রম থাকে, তবে সেই পথ কখনও বন্ধ থাকে না।
আশিস সাহার এই সংগ্রামী জীবনের গল্প সত্যিই এক অনুপ্রেরণা। বাসিন্দারা জানান, আমরা যদি কিছু শিখতে পারি, তবে সেটা হলো, জীবনের যে কোনো বাঁধাই বা প্রতিবন্ধকতা যদি আমাদের সামনে আসে, তাহলে আমরা এগিয়ে চলতে পারি, চাইলে কিছুই আমাদের থামাতে পারে না। আশীষ কে ধূপকাঠি বিক্রি করতে দেখে পথ চলতি অনেক মানুষই দাঁড়িয়ে পড়ে খুশী মনে তার কাছ থেকে ধুপকাঠি কিনে সকলেই আশীষ এর পাশে থাকার বার্তা দেন বহু মানুষ।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

.