Bangladesh: প্রায় ১ কোটি জাল ভারতীয় টাকা উদ্ধার বাংলাদেশে! ছ`বার জেল-খাটা `মাজার জাকির`-সহ গ্রেফতার ৪...
Fake Indian Currency Trade in Bangladesh: ঢাকায় ভারতীয় রুপি, জাল টাকা-সহ গ্রেফতার ৪! যাত্রাবাড়ির কদমতলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরি চক্রের মূল হোতা-সহ এই চারজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিস।
সেলিম রেজা: রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ির কদমতলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরি চক্রের মূল হোতা-সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিস। গ্রেফতার করা হয়েছে লিয়াকত হোসেন জাকির, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম, লিমা আক্তার রিনা ও সাজেদা আক্তারকে। শনিবার মধ্য রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দুটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: Bengal Weather Update: গরম, আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিই বহাল তবে রবিবিকেল থেকেই পরিবর্তন! ঘন মেঘের আড়াল হতে...
ওই দুটি বাসাবাড়ি থেকে প্রায় সোয়া এক কোটি জাল ভারতীয় টাকা উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি, আরও প্রায় তিন কোটি বাংলাদেশি জাল টাকা তৈরির মতো বিশেষ কাপড়/কাগজ, বিশেষ ধরনের কালি, ল্যাপটপ, চারটি প্রিন্টার, বিভিন্ন মাপের কয়েক ডজন স্ক্রিন/ডাইস, সাদা কাগজ, হিটার মেশিন, নিরাপত্তা সুতা-সহ জাল টাকার হরেক মাল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত জাল টাকার মধ্যে বাংলাদেশি ২০০, ৫০০, ১০০০ জাল নোট ও ভারতীয় ৫০০ টাকার জাল নোট রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিস জানায়, বাজারে পাওয়া ২২ এমএম সাদা কাগজ, সাধারণ রং ও প্রিন্টার দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জাল টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা তৈরি করে আসছিল এই চক্রটি। চক্রের মূল হোতা জাকির ১২ বছর ধরে ভারতীয় ৫০০ ও বাংলাদেশি ১০০০ হাজার টাকার জাল নোট তৈরি করে আসছিল। তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের যাতে সন্দেহ না হয়, সেজন্য ১০০ ও ২০০ টাকার নোটও সে জাল করত। আসন্ন ঈদ এবং দুর্গা পুজোকে টার্গেট করে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কাগজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের কালি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাকির প্রতিটি ১০০০ টাকার একশোটি নোটের এক বান্ডিল ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। গত ১২ বছরে জাকির কখনও জাল টাকা খুচরোয় বিক্রি করেনি। নারী-পুরুষ মিলে তার প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন কর্মচারী। জাল টাকা তৈরির কাজে সহযোগিতা করার কারণে যাঁদের সে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন দিত!
ব্যক্তি পর্যায়ে জাল টাকা বিক্রি করলে গ্রেফতার হতে পারে তাই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অনলাইনে (বিশেষত ফেসবুক ও মেসেঞ্জার) বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে জাল টাকা বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত জাকির।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিস জানায়, জাল টাকা তৈরির কালে জাকিরের সহযোগীরা গ্রেফতার হলে জাকির বাংলাদেশের বিভিন্ন মাজারে-মাজারে অবস্থান করে কখনও কচ্ছপ, কখনও শোল মাছকে 'তবারক' (কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যে খাবার তৈরি করা হয়) খাওয়াতে ব্যস্ত থাকত বলে তাকে 'মাজার জাকির'ও বলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জাল টাকা তৈরির ছোট ছোট ঘরোয়া কারখানা স্থাপনকারীরা জাকিরের কাছ থেকে কারিগর, সফট কপি, পরামর্শ এমনকি মডেল জাল রুপি নিয়ে থাকত বলে জাকিরকে লোকে 'গুরু জাকির' বলেও চেনে।
বাংলাদেশে জাল টাকার মামলার বিচারের জন্য দ্রুত বিচার আদালত নেই। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকাজ চলে এবং অভিযুক্তেরা কারাগার থেকে জামিন পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। চক্রের মূল হোতা জাকির রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ছ'বার গ্রেফতার হয়েছে। তার পরেও সে একই কাজ চালিয়ে আসছিল!