বাঙালি দম্পতির সন্তান ফেরাতে উদ্যোগী হল নরওয়ে সরকার
নরওয়েতে এক বাঙালি দম্পতির দুই সন্তানকে আটকে রেখেছে একটি সংস্থা। ভারতের তরফে এ ব্যাপারে কড়া চিঠি দেওয়ার পর অবশেষে দুটি শিশুকে মুক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে নরওয়ে সরকার। গতকাল এবিষয়ে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও হয় নরওয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের।
নরওয়েতে এক বাঙালি দম্পতির দুই সন্তানকে আটকে রেখেছে একটি সংস্থা। ভারতের তরফে এ ব্যাপারে কড়া চিঠি দেওয়ার পর অবশেষে দুটি শিশুকে মুক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে নরওয়ে সরকার। গতকাল এবিষয়ে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও হয় নরওয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের। শিশুদের দেখেও আসেন ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকরা। তবে শিশুদের ছাড়ার ব্যাপারে পাঁচটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। বাঙালি দম্পতির সঙ্গে সেই শর্তগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে দূতাবাসের আধিকারিকদের। অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে এবার সরব হয়েছে নাগরিক সমাজও। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী নয়ই জানুয়ারি একটি প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রসদন থেকে শুরু হবে মিছিল। শুধু নরওয়ে নয়, যে কোনও দেশেই শিশুদের এইভাবে আটকে রাখার প্রতিবাদে এই মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।
অনুরুপ ভট্টাচার্য এবং সাগরিকা ভট্টাচার্যের প্রথম সন্তান অভিজ্ঞানের জন্ম হয়েছিল কলকাতাতেই। জন্মের কিছু সময় পর ২০০৯-এর ডিসেম্বরে অভিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে ওসলো চলে যান অনুরূপ ভট্টাচার্য। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন নরওয়ের ওসলোরই বাসিন্দা অনুরূপবাবু। এপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। সমস্যা শুরু হয় অভিজ্ঞানকে যখন স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, অভিজ্ঞান নাকি বেশিরভাগ সময়ই ক্লাসরুমের এককোণে চুপচাপ বসে থাকত। মাঝেমধ্যে তাঁকে মেঝেতে মাথা ঠুকতে দেখা যেত বলেও অভিযোগ।
অভিজ্ঞানের এই আচরণকে অস্বাভাবিক বলে আখ্যা দেয় ওই স্কুল। যদিও অভিজ্ঞানের মা সাগরিকা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কিন্ডারগার্টেনে একমাত্র নরওয়েজিয়ান ভাষায় পড়ানো এবং কথোপকথন হয়। আর সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া অভিজ্ঞানের কাছে সেখানকার ভাষা বোঝাই দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। যেকারণে সে চুপচাপ থাকত।
এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় নরওয়ের এক শিশু অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত সংস্থার সর্বক্ষণের হস্তক্ষেপ। এরই মধ্যে জন্ম হয় অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় সন্তানের। আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন তাঁরা ঐশ্বর্য। কিন্তু সেই সুখের সময় বেশিদিন টেকেনি। দুই শিশুকে নিয়ে একই ঘরে থাকত সাগরিকারা।
সেদেশের সরকারি শিশু সংস্থার অভিযোগ, কেন শিশুদের আলাদা ঘরে রাখা হয়নি? কেন হাত দিয়ে তাদের খাবার খাওয়ানো হয়? অতএব নরওয়ের আইন অনুযায়ী শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দুই সন্তানকেই কেড়ে নেওয়া হয় বাবা-মার থেকে।