ওয়ার্ল্ড ডিসেবিলিটি ডে: সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে!

আমরা নিশ্চয়ই হেলেন কেলার, মাসুদুর রহমান বৈদ্য, সুধা চন্দ্রন, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়দের লড়াইকে ভুলব না!

Updated By: Dec 3, 2020, 03:58 PM IST
ওয়ার্ল্ড ডিসেবিলিটি ডে: সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে!

সৌমিত্র সেন

আজকের দিনটিকে, মানে, এই ৩ ডিসেম্বর দিনটিকে বিশ্বে প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। 

এখনও অবশ্য বাসে 'হ্যান্ডিক্যাপড' লেখা থাকে। কোথাও কোথাও 'প্রতিবন্ধী' শব্দটিও লেখা থাকে। মুখের কথায় তো মানুষ হরবখত এগুলি উল্লেখ করেন। তবে, এখন আর এ দু'টির কোনওটিই ব্যবহার করা যথাযথ নয়।  এখন 'ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড' বা 'মেন্টালি চ্যালেঞ্জড' শব্দগুলি ব্যবহার করাই বিধেয়।    

রাস্তাঘাটে আমরা প্রায়শই এইরকম মানুষ দেখি। যাঁরা শারীরিক ভাবে চ্যালেঞ্জড, তাঁদের একরকম সমস্যা; আবার মানসিক ভাবে চ্যালেঞ্জড যাঁরা তাঁদের সমস্যাও আর একরকম। স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে অবশ্য সত্যিই বোঝা কঠিন, এই ধরনের মানুষের ঠিক কী কী অসুবিধা, কোথায় না-পাওয়া। যিনি দেখতে পান না, তাঁর না-দেখার অনুভূতি আমরা স্বাভাবিকেরা হাজার চেষ্টা করেও বুঝতে পারব না। আমরা যেটুকু পারি, সেটা হল সমানভূতি। এ ক্ষেত্রে সহানুভূতি শব্দটি ওঠারই কথা নয়। কিন্তু আমরা অনেক সময়েই এই সব মানুষের প্রতি সহানুভূতিই দেখাতে এগিয়ে যাই, যেটা একেবারেই সঠিক মনোভাব নয়। 

আসলে বিশ্ব জুড়ে এই তথাকথিত 'প্রতিবন্ধী' মানুষজন নানা কিছু অর্জন করেছেন। তাঁরা নকল পা লাগিয়ে নেচেছেন, রেসে ছুটছেন, পাহাড়ে উঠছেন, সাঁতার কাটছেন। হাত ছাড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ছবি আঁকা, পড়াশোনার মতো কাজকর্ম। অন্ধত্ব বা বধিরতা তাঁদের কোনও ভাবেই পিছনে ঠেলে দিতে পারেনি। তাঁরা জীবনে সমস্ত চ্য়ালেঞ্জ নিয়েছেন, বাধা জয় করে এগিয়ে গিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। এক হিসেবে বহু 'ডিসেবলড পার্সন'ই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাছে অনুপ্রেরণাস্বরূপ।

এ বছর এ দিনটির থিম-- 'বিল্ডিং ব্য়াক বেটার: টুওয়ার্ডস অ্যান ইনক্লুসিভ, অ্যাকসেসিবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল পোস্ট-কোভিড-১৯ ওয়ার্ল্ড বাই, ফর অ্যান্ড উইথ পার্সনস উইথ ডিসেবিলিটিজ'। খুব স্বাভাবিক যে, এ বারের ভাবনায় কোভিড-১৯-এর প্রসঙ্গ থাকবে। কোভিড-আবহে কোভিড-মুক্ত পৃথিবীর দিকে আমাদের যে-যাত্রা, সেখানে যেন 'ডিসেবলড' মানুষগুলির জন্যও অনেকটা স্পেস থাকে, এটা স্থির করাই এই ভাবনার লক্ষ্য।    

আমরা নিশ্চয়ই হেলেন কেলার, মাসুদুর রহমান বৈদ্য, সুধা চন্দ্রন, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, স্টিফেন হকিং, জন ন্যাশদের ভুলে যাইনি। এঁরা নানা রকম প্রতিবন্ধকতা নিয়েও জীবনের পথে ক্রমশ এগিয়ে গিয়েছেন। এবং চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন। তাঁদের আলোয় আলোকিত হয়েছি, তাঁদের সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ হয়েছি আমরা সাধারণ স্বাভাবিক মানুষজনও। তাঁরাই আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ যে কত বড় অ্যাচিভমেন্ট ভাবা যায় না!

এ দিনটিই যেন আমাদের নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়-- 'সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে'! 

আরও পড়ুন: ক্ষুধার্ত বানরদের পিয়ানো শোনালেন পিয়ানিস্ট পল

.