ভোটের আগে "অনুব্রত মডেল", হুমকি আর মামলায় বিজেপিকে শক্তিহীন করার পরিকল্পনা তৃণমূলের
হুমকি আর মামলার ভয় দেখিয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি। বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিকে যতটা সম্ভব শক্তিহীন করে দেওয়ার ছক। বীরভূমে চলছে অনুব্রত মডেল।
হয় শাসক শিবিরে থাকো না হলে বন্ধ রাখো মুখ। বীরভূম সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চলছে এমনই অঘোষিত কার্ফু।
পঞ্চায়েত ভোটের সময় অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক বক্তৃতা। আর তারপরই সাগর ঘোষ খুন। বাবার খুনের সিবিআই তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ছেলে হৃদয় ঘোষ। এতদূর এগিয়েও গত শুক্রবার শীর্ষ আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন তিনি।
সাত্তোরের নির্যাতিতা মহিলাও সিবিআই তদন্ত চেয়ে গিয়েছিলেন হাইকোর্টে। সতেরোই জানুয়ারি রাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতেই পুলিস তাঁর ওপর অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলার পর এখন সেই দলেই নাকি যোগ দিতে চলেছেন নির্যাতিতা মহিলা।
প্রবল চাপের মুখেই যে মাথা নোয়াতে হচ্ছে তা দু-জনের কথাতেই স্পষ্ট। কিন্তু, এতদিন প্রতিবাদ করার পর এখন পিছু হঠতে হচ্ছে কেন?
উত্তর খুঁজতে বীরভূমে অনুব্রত মডেলের সফল প্রয়োগ দেখছে রাজনৈতিক মহল। দু-হাজার এগারোয় পালাবদলের সময় বীরভূমের পাড়ুই, সাত্তোর, মাখড়া, চৌমণ্ডলপুরের মতো এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন নিমাই দাস, সদাই শেখরা। পঞ্চায়েত ভোটের সময় তৃণমূল ছেড়ে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেন। বীরভূমে ঘাসফুলের চোখে চোখ রাখতে শুরু করে পদ্মশিবির। আরম্ভ হয় দু-দলের সংঘর্ষ। বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে শুরু করেন। কিন্তু, মণ্ডল ভার্সেস মণ্ডল বেশিদিন টেকেনি। দলীয় নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে দুধকুমার পদ ছাড়তেই বীরভূমে ক্রমশ শক্তিহীন হতে শুরু করেছে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে নিমাই দাস, সদাই শেখদের দলে ফেরানোর ছক কষে ফেলেছেন অনুব্রত মণ্ডল। বিজেপি রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে না পারায় তাঁদের শাসকদলে যাওয়া ছাড়া গতি নেই।
নেতারা দল ছাড়তে বাধ্য হলে হৃদয় ঘোষ বা সাত্তোরের নির্যাতিতার পক্ষেও বিজেপিতে থাকা কঠিন। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে বিজেপি কর্মীদের দল ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
মামলার ভয়ে বিজেপি কর্মীরা আগের মতো প্রতিরোধের রাস্তাতেও যেতে পারছেন না।
বিধানসভা ভোটের আগে দলের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা কাজল শেখের সঙ্গেও মিটমাট করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন অনুব্রত মণ্ডল। নিজের ঘর অটুট রেখে এখন বিজেপিকে ক্রমশ শক্তিহীন করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে বীরভূমে বিজেপির গ্রাফ এমনিতেই নিচের দিকে নামতে শুরু করায় অনুব্রতর কাজটা আরও সহজ হয়ে গেছে।
হৃদয় ঘোষের পর এবার সাত্তোরের নির্যাতিতা। চাপের মুখে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মামলা তোলার জন্য নির্যাতিতার আইনজীবী ড্রাফটও পাকা করে ফেলেন। কিন্তু এই খবর চব্বিশ ঘণ্টায় আগাম সম্প্রচার হওয়ায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এর পরেই চব্বিশ ঘণ্টাকে দেওয়া ফোনে ঢোঁক গেলেন নির্যাতিতা।
তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে তাঁর বক্তব্যে স্ববিরোধিতা স্পষ্ট। চব্বিশ ঘণ্টাকে দেওয়া ফোনেই তাঁর সেই স্ববিরোধিতা স্পষ্ট । একবার ফোনে তিনি বলেন, এখনই তিনি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন না। তবে সাত্তোরের নির্যাতিতা । তৃণমূলের প্রবল চাপে অবশেষে রফায় রাজি নির্যাতিতা। আইনি পথে আর লড়াই নয়, তাই অবিলম্বে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন নির্যাতিতা। এবছর শুরু দিকে সাত্তোরের এক মহিলাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিস নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ। থানায় অভিযোগ জানিয়েও কিছু হয়নি। এরপর সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই নির্যাতিতা। পরে অভিযুক্ত পুলিস অফিসারকে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করে আরও একটি মামলা করেন তিনি। সাত্তোরের নির্যাতিতা এই দুই মামলা থেকেই আপাতত সরে দাঁড়াতে চাইছেন।