বামেদের ডাকে রাজ্য জুড়ে সর্বাত্মক কৃষি ধর্মঘট
গত সাত মাসে রাজ্যে দশজন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে কৃষি বনধের ডাক দিয়েছে বামেরা। বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, সরকারকে উপযুক্ত সহায়ক মূল্য দিয়ে ধান কিনতে হবে।
গত ৭ মাসে রাজ্যে ১০ জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বুধবার রাজ্যজুড়ে বামেদের ডাকা কৃষি বন্ধে ব্যাপক সাড়া পড়ে। চারটি বামপন্থী কৃষক সংগঠনের ডাকা কৃষি ধর্মঘট সফল করার জন্য গ্রামবাংলার কৃষক সমাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিপিআইএমের কৃষক নেতা মদন ঘোষ।
একই সঙ্গে আজ ধর্মতলায় এর প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভে বসে কংগ্রেস। বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, সরকারকে উপযুক্ত সহায়ক মূল্য দিয়ে ধান কিনতে হবে। সংগঠনের ডাকে রাজ্য জুড়ে কৃষি বনধে সামিল হন কৃষকরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার ধান কেনা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। যে অল্প পরিমাণ ধান সরকার কিনছে, তাতেও তাঁরা সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না। মহাজনী ঋণ নিয়ে চাষ করতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হচ্ছে। আর্থিক সঙ্কট থেকে অব্যাহতি পেতে কৃষকদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, চলতি আর্থিক বছরে তারা ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনবে। আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাত্র ৩ মাস বাকি। অথচ এখনও পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে রাজ্য সরকার মাত্র দেড় লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
অন্যদিকে বেড়েছে ডিজেলের দাম, আগের চেয়ে সারের দামও বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। ফলে ফসলের উত্পাদন খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তবু বিক্রি না হওয়ায় মাঠেই পড়ে থাকছে ধান। মহাজনী ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিচ্ছেন কৃষকরা। যদিও ইতিমধ্যেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে কৃষকদের আত্মহত্যার দায় অস্বীকার করে পুরো ঘটনার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য সরকারের দাবি, অর্থের অভাবে তারা ধান কিনে উঠতে পারছে না। এমনকি বেনফেড, কনফেডের মতো সংস্থার মাধ্যমে সরকারের ধান কেনার প্রক্রিয়াও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একই দুরবস্থা আলুর ক্ষেত্রেও। হিমঘর থেকে বেরিয়ে ১০ থেকে ২০ পয়সা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা এসেছে। প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছে বামেরা। বাম দলগুলির অভিযোগ, সরকার কৃষকস্বার্থের প্রতি উদাসীন। তাঁদের দাবি, কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সরকারকে উপযুক্ত কৃষিনীতি গ্রহণ করতে হবে।