জিটিএ রিপোর্ট প্রকাশ করল সরকার, মানছি না, জানিয়ে দিল মোর্চা

জিটিএ এলাকার মধ্যে তরাই ও ডুয়ার্সের কিছু অংশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করল রাজ্য সরকার। শনিবার মহাকরণে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির ৫টি মৌজাকে জিটিএ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে উচ্চপর্যায়ের কমিটি।

Updated By: Jun 9, 2012, 04:06 PM IST

জিটিএ এলাকার মধ্যে তরাই ও ডুয়ার্সের কিছু অংশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করল রাজ্য সরকার। শনিবার মহাকরণে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির ৫টি মৌজাকে জিটিএ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে উচ্চপর্যায়ের কমিটি। যদিও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবি ছিল, দুটি জেলা মিলিয়ে ৩৯৮টি মৌজা প্রস্তাবিত জিটিএ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রিপোর্ট তারা মেনে নেবে না বলে এদিন বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছে মোর্চা। পথে নেমে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
 
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ক্ষমতায় আসার দুমাসের মাথাতেই জিটিএ চুক্তি করেছিল তৃণমূল সরকার। গত বছর ১৮ জুলাই পিনটেল ভিলেজে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও মোর্চা নেতৃত্বের মধ্যে ওই চুক্তি স্বাক্ষরকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তরাই ও ডুয়ার্সের মৌজা জিটিএতে অন্তর্ভুক্ত করার মোর্চার দাবি খতিয়ে দেখতে গড়া হয় উচ্চপর্যায়ের কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্টই শনিবার প্রকাশ করলেন মুখ্য সচিব সমর ঘোষ। স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, দার্জিলিংয়ের ৩টি ও জলপাইগুড়ি জেলার ২টি মৌজা মিলিয়ে মোট ৫টি মৌজাকে জিটিএ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি।
রিপোর্ট পেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে সব পক্ষকে রিপোর্ট মেনে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, "সরকার এই রিপোর্ট মেনে নিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সব পক্ষকে রিপোর্ট মেনে নিয়ে শান্তি বজায় রাখা উচিত।" যদিও মোর্চা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়, রিপোর্ট তারা মানছে না। রিপোর্টের বিরুদ্ধে মোর্চা আন্দোলনে নামবে বলেও জানানো হয়েছে। ওদিকে সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। পরিষদের পক্ষে জানানো হয়েছে, রিপোর্ট সম্পর্কে এখনই কোনও কথা বলবে না তারা। এজন্য রবিবার বৈঠকে বসবেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। রিপোর্টের বিরোধিতা করেছেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বহিষ্কৃত নেতা জন বার্লা।
আটের দশকে পাহাড়ে সুবাস ঘিসিংয়ের আন্দোলনের পর গড়া হয় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল। মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের আন্দোলনের ফল হিসেবে গড়া গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে অবশ্য তার চেয়ে বাড়তি কিছু ক্ষমতা দিয়েছে রাজ্য সরকার। জিটিএ এলাকায় ৩৯৮টি মৌজার অন্তর্ভুক্তির জন্য দাবি জানিয়েছিল মোর্চা। সেই দাবি খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫০ শতাংশ গোর্খা জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস রয়েছে কিনা। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট এলাকার যোগাযোগের মাধ্যম ও বাস্তব পরিস্থিতি কী? এবং তৃতীয়ত, ওই এলাকার মানুষের চাহিদা ও বক্তব্য কী? এই তিনটি বিষয় খতিয়ে দেখে উচ্চপর্যায়ের কমিটি পাঁচটি জাকে জিটিএর অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দার্জিলিংয়ের এমএম তরাই, পূর্ব কড়াইবাড়ি ও গুলমাখারি এবং জলপাইগুড়ির সামসিং ও চালৌনি, এই পাঁচটি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। জিটিএ চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে গত প্রায় একবছর তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল পাহাড়। দীর্ঘদিন পর ভাল ব্যবসার মুখ দেখেছেন পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কমিটির এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর ফের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। আন্দোলন ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে তরাই ডুয়ার্সেও।

.