আত্মসমর্পণ করেই জামিন পেলেন তিলক চৌধুরী
রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনার দু'দিন পর আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী। আর এজলাসে দাঁড়ানোর চার ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেলেন তিনি।
রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনার দু'দিন পর আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী। আর এজলাসে দাঁড়ানোর চার ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেলেন তিনি।
অধ্যক্ষ নিগ্রহ কাণ্ডের অন্য কুশীলব, জেলা স্তরের ৩ তৃণমূল নেতা এখনও রয়ে গিয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে তিলক চৌধুরী জামিন পাওয়ার পর তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করা কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। শুক্রবার ওই ঘটনায় যে ৯ জনকে পুলিস গ্রেফতার করে তারা নেহাতই তৃণমূলের নীচুতলার কর্মী। ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগও আনা হয় জামিন যোগ্য ধারায়। তাঁরা জামিনও পেয়ে যান। তবে রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ প্যাটেল আগামী শুক্রবারের মধ্যে ওই ঘটনার সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন রাজ্য সরকারকে।
রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে মারধরের সময় তৃণমূলের ৪ জন জেলাস্তরের নেতা হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। একাধিক ভিডিও ছবিতে দেখা গেলেও তাঁদের কাউকেই গ্রেফতার করার হিম্মত দেখাতে পারেনি জেলা পুলিস। তবে শেষ পর্যন্ত দলের নির্দেশে তিলক চৌধুরীর আদালতে আত্মসমর্পণের ফলে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে প্রশাসন।
তৃণমূলের নীচুতলার যে নয় জন কর্মীকে পুলিস গ্রেফতার করেছিল, তাঁদের জামিন যোগ্য ১৪৩, ৩২৫ ও ৪২৭ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। ফলে তাঁরা শুক্রবারই জামিন পেয়ে যান। ইতিমধ্যে ঘটনার জেরে রায়গঞ্জ থানার আইসি জ্যোতিষচন্দ্র রায়কে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ ঘটনার সময় স্ত্রী বিয়োগের কারণে ছুটিতে ছিলেন তিনি।
তাই প্রশ্ন উঠছে, মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে কেন এই ভাবে লোকদেখানো গ্রেফতারির পথে হাঁটল পুলিস প্রশাসন। এই গ্রেফতারি নিয়েও শুক্রবার দিনভর নাটক হয়। সকাল দশটা পর্যন্ত পুলিসের দাবি ছিল, কেউই গ্রেফতার হয়নি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ২ জনের গ্রেফতারির কথা জানায় পুলিস। তারপরেই বলা হয় গ্রেফতার হয়েছে ১০ জন। এরপরে আবার নতুন হিসেব দিয়ে পুলিস জানায় অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে ৯ জন। আর বুধবার মনোনয়ন জমা দেওয়া ঘিরে গণ্ডগোলের জেরে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে।
রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কারা তার প্রমাণ খোঁজার দরকার নেই। রয়েছে, প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ। যাঁদের নাম তালিকার একেবারে শীর্ষে, তাঁরা সকলেই জেলা রাজনীতিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তারপরও কিন্তু পুলিসের কাছে অভিযুক্ত 'গ্যাং অফ ফোর' এখনও অধরাই। কেন তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না? কোথায় চাপ? কাদের চাপ? এই অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখলে হয়তো অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে এর উত্তর।
তিলক চৌধুরী। অধ্যক্ষ নিগ্রহ ঘটনার মূল অভিযুক্ত। তিলকবাবু উত্তর দিনাজপুর জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রথম সারির নেতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়েরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শুধু মুকুল বাবু কেন। মুখ্যমন্ত্রীরও ঘনিষ্ঠ তিলক বাবু। বিরোধী নেত্রী থাকার সময় এই জেলায় এসে বহুবার তিলকবাবুর বাড়িতেই থাকতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রিয়ব্রত দুবে। তিলক চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী। তৃণমূলের রাজ্যনেতারা জেলায় আসলে প্রিয়ব্রত বাবুর ওপরেই দেখভালের দায়িত্ব থাকত। সেই সুবাদে তৃণমূলের বহু প্রথম সারির নেতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায়। একসময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির অনুগামী এই নেতা বর্তমানে তৃণমূলের কাউন্সিলর। তিলক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ প্রিয়তোষ বাবু বহুবারই জড়িয়ে পড়েছেন নানা বিতর্ক ও কেলেঙ্কারিতে।
খলিলুদ্দিন সরকার। জেলার তৃণমূলের যুব সভাপতি। রাজনীতিতে তিলক চৌধুরীর হাত ধরেই উত্থান। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ এই নেতা বহুবার বহু গণ্ডগোলে জড়িয়েছেন।
সঙ্গত কারণেই পরিবর্তনের বাজারে নব্য শাসক দলের এই হাই প্রোফাইল অভিযুক্তদের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করে উঠতে পারেনি উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিস। দোষীদের 'রাজনৈতিক রঙ না দেখার' সরকারি আশ্বাসের পরও তিলক চৌধুরিদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ করেই দায় সারেন জেলা পুলিস সুপার। শেষ পর্যন্ত সেই 'অনুরোধের অঙ্ক' মেনে শনিবার রায়গঞ্জে জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিলক চৌধুরি। সব মিলিয়ে, রায়গঞ্জ কাণ্ডে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি দেখছে রাজনৈতিক মহল।