নরওয়ে সরকার উদ্যোগী হলেও অনড় এজেন্সি

বাঙালি দম্পতির হাতে তাঁদের সন্তান ফিরিয়ে দিতে নরওয়ে সরকার উদ্যোগী হলেও তাতে বাধা দিল নরওয়ে চাইল্ডকেয়ার এজেন্সি। নিজেদের সন্তান সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে না পারার অভিযোগে বাঙালি দম্পতি-অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যর দুই সন্তানকে বেআইনি ভাবে আটকে রেখেছে এই চাইল্ডকেয়ার এজেন্সি।

Updated By: Jan 7, 2012, 07:50 PM IST

বাঙালি দম্পতির হাতে তাঁদের সন্তান ফিরিয়ে দিতে নরওয়ে সরকার উদ্যোগী হলেও তাতে বাধা দিল নরওয়ে চাইল্ডকেয়ার এজেন্সি। নিজেদের সন্তান সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে না পারার অভিযোগে বাঙালি দম্পতি-অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যর দুই সন্তানকে বেআইনি ভাবে আটকে রেখেছে এই চাইল্ডকেয়ার এজেন্সি। ভারত সরকারের তরফে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়ার পর শিশু দুটিকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরওয়ে সরকার। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর নরওয়ে সরকারের তরফে শিশুদের ছাড়ার ব্যাপারে ৫টি শর্ত দেওয়া হয়। সেই শর্ত অনুযায়ী নিজের আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে চাইল্ডকেয়ার এজেন্সির দফতরে যান ভূবিজ্ঞানী অনুরূপ ভট্টাচার্য। সেখানে তাঁকে নিজের এবং দুই সন্তান-অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্য্যর পাসপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। আগামী ১১ মার্চ অনুরূপ ভট্টাচার্যর ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই চাইল্ডকেয়ার এজেন্সি অনুরূপবাবুকে তাঁর দুই সন্তানের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বলে। অনুরূপবাবুর অভিযোগ, তিনি ভারতে ফিরতে চাইলেও, এরপর এজেন্সিটি তাঁকে পাসপোর্ট জমা রাখার জন্য জোর করে। এখানেই শেষ নয়, এজেন্সিটি হুমকি দিয়ে বলে, অনুরূপবাবু তাঁর সন্তানদের ভিসার মেয়াদ না বাড়ালে
তাঁরা নিজেরাই সেই উদ্যোগ নেবে। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞান এবং ঐশ্বর্য্য সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দায়িত্বেই রাখবে। অনুরূপবাবুর আইনজীবীর দাবি, অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্য ভারতীয় নাগরিক। মানবিক কারনে তাদের ভারতে ফিরতে দেওয়া উচিত্। তবে সেই দাবিকেও নাকচ করে দিয়েছে নরওয়ের এই চাইল্ডকেয়ার এজেন্সি।

গত বুধবার নরওয়ের স্ট্যভেঞ্জারে অনুরূপ ভট্টাচার্যের বাড়িতে গিয়ে বাঙালি দম্পতির সঙ্গে দেখা করেন অসলোর ভারতীয় দূতাবাসের মুখ্য সচিব পি বালাচরণ। তিনি আশ্বাস দেন, শিশুদুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি এজেন্সিটির কাছে সওয়াল করবেন। অনুরূপবাবু ইতিমধ্যেই পি বালাচরণের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দ্বারস্থ হয়েছেন ইউনিসেফেরও।

অনুরুপ ভট্টাচার্য এবং সাগরিকা ভট্টাচার্যের প্রথম সন্তান অভিজ্ঞানের জন্ম
হয়েছিল কলকাতাতেই। জন্মের কিছু সময় পর ২০০৯-এর ডিসেম্বরে অভিজ্ঞানকে সঙ্গে
নিয়ে অসলো চলে যান অনুরূপ ভট্টাচার্য। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন নরওয়ের অসলোরই
বাসিন্দা অনুরূপবাবু। এপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। সমস্যা শুরু হয়
অভিজ্ঞানকে যখন স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুল
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, অভিজ্ঞান নাকি বেশিরভাগ সময়ই ক্লাসরুমের এককোণে
চুপচাপ বসে থাকত। মাঝেমধ্যে তাঁকে মেঝেতে মাথা ঠুকতে দেখা যেত বলেও অভিযোগ।
অভিজ্ঞানের এই আচরণকে অস্বাভাবিক বলে আখ্যা দেয় ওই স্কুল। যদিও অভিজ্ঞানের
মা সাগরিকা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কিন্ডারগার্টেনে একমাত্র নরওয়েজিয়ান
ভাষায় পড়ানো এবং কথোপকথন হয়। আর সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া অভিজ্ঞানের কাছে
সেখানকার ভাষা বোঝাই দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। যেকারণে সে চুপচাপ থাকত। এরপর
থেকেই শুরু হয়ে যায় নরওয়ের এক শিশু অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত সংস্থার
সর্বক্ষণের হস্তক্ষেপ। এরই মধ্যে জন্ম হয় অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের
দ্বিতীয় সন্তানের। আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন তাঁরা ঐশ্বর্য। কিন্তু সেই
সুখের সময় বেশিদিন টেকেনি। দুই শিশুকে নিয়ে একই ঘরে থাকতেন সাগরিকারা।
সেদেশের সরকারি শিশু সংস্থার অভিযোগ, কেন শিশুদের আলাদা ঘরে রাখা হয়নি? কেন
হাত দিয়ে তাদের খাবার খাওয়ানো হয়? অতএব নরওয়ের আইন অনুযায়ী শিশুর অধিকার
লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দুই সন্তানকেই কেড়ে নেওয়া হয় বাবা-মার থেকে।

.