ফুটবল ক্রিকেটের দুই সেরার বাবা প্রয়াত, সহমর্মী ওঁদের জন্য
স্বরূপ দত্ত
ক্রিকেট এবং ফুটবলের সম্পর্কটা কোনওদিনই বন্ধুত্বের নয়। বরং, ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটো আলাদা জাত হলে, এই জাতপাতের ভেদাভেদ মানুষের মন থেকে কোনওদিনই উঠে যাবে বলে মনে হয় না। ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটো আলাদা বর্ণ হলে এই বর্ণ বিদ্বেষ এ ভারত কিংবা আমাদের গোটা পৃথিবী থেকেই কোনওদিন মুছবে বলে মনে হয় না। অথচ, দুটো খেলাই কত মানুষ পছন্দ করেন। একই মানুষ দুটো খেলাই কত পছন্দ করেন। তবুও ক্রিকেট-ফুটবলের এই ভেদাভেদ যাওয়ার নয় বোধহয় কোনওদিন।
একটা ছোট্ট ভূমিকা করে নিতেই হল। কারণ, ঘটনাটা যে বড়। ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের তালিকা করলে, সবসময় কোনও একটা নম্বরে ঠিক এই নামটা থাকবে। পাওলো মালদিনি। এই পৃথিবীর অনেক মানুষ তাঁকে খুব পছন্দ করেন। আর আজকের ক্রিকেটের কথা বললে, স্পিনারদের কথা হলে, নারিনের নাম করবেন না! হয় নাকি? পাওলো মালদিনি আর সুনীল নারিন, আপাতদৃষ্টিতে দুজনের কারও সঙ্গেই কোনও মিল নেই।
পাওলো মালদিনি ইতালির মানুষ। ফুটবলার ছিলেন। সুনীল নারিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষ ক্রিকেট খেলেন। দুজনের কেউ কাউকে চেনেন বলেও মনে হয় না। অথচ, আজ ওঁরা দুজনেই সমান দুঃখী। ওঁরা আজ পিতৃহারা। এই পৃথিবীর বহু মানুষের দুই হিরো ওঁরা দুজন। আজ ওদেঁর বাস্তব জীবনের হিরোরাও চলে গিয়েছেন এই পৃথিবীটা ছেড়ে। সহমর্মী হলাম। ওঁরা যে আজ অভিভাবকহীন।
পাওলোর বাবা সিজার মালদিনি নিজের গৌরবেই গৌরবান্বিত। আর নারিনের বাবা তো ভারতীয়দের প্রাণের মানুষ হয়ে থাকবেন। পাওলোর বাবা সিজার মালদিনি দেশের হয়ে চুটিয়ে ফুটবল খেলেছেন। দেশকে চুটিয়ে কোচিং করিয়েছেন। ক্লাবকে সাফল্য এনে দিয়েছেন। বিশ্বের কত তাবড় ফুটবলারের স্যার তিনি। আর নারিনের বাবা আমাদের সুনীল গাভাসকরের এতটাই ভক্ত ছিলেন যে, ছেলের নামটাও রেখেছিলেন সুনীল গাভাসকরের নামে! দুজনই পৃথিবীটা ছেড়ে চলে গেলেন। দুই খেলার দুই বরপুত্র পিতৃহারা হলেন। খারাপ লাগে বইকি।
আশা এবং প্রার্থনা, পাওলো শোক কাটিয়ে উঠবেন। তাঁর বংশ, পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইতালির ফুটবলের সেভাবে সেবা করে গিয়েছে, তেমনই থেকে যাবে চিরকাল। সিজারের আশা পূরণ করতে নিশ্চয়ই পাওলো আরও সচেষ্ট হবেন। আর নারিনও তাঁর বাবার জন্যই আরও ভালো বল করবেন। অ্যাকশনকে সন্দেহর আওতা থেকে বের করে এনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটকে অনেক সাফল্য এনে দেবেন। নারিনের প্রতিটা ম্যাচ দেখতে বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে হাজির থাকতেন তাঁর বাবা। এবার তাই সুনীল নিশ্চয়ই নিজের পারফরম্যান্সে বাড়তি মাত্রা যোগ করবেন। বাবার স্বপ্ন তিনি হয়তো ইতিমধ্যে পূরণ করেছেন। এবার বাবাকে আরও বেশি উপহার দেবেন। এটাই থাকলো প্রার্থনা, পাওলো আর নারিন তাঁদের পিতৃশোক কাটিয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি। আর হ্যাঁ, দুজনের বাবাই যেন যাওয়ার আগে এই পৃথিবীটাকে বলে গেলেন, ক্রিকেট-ফুটবল আসলে কোনও পিতার সন্তান। তাই সুনীল এবং পাওলো যেন ভুলে না যান, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।