দ্বিতীয় পুরুষ রিভিউ: শেষ বাজি জিতলেন সৃজিতই

শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায় 

Updated By: Jan 23, 2020, 09:35 PM IST
দ্বিতীয় পুরুষ রিভিউ: শেষ বাজি জিতলেন সৃজিতই

শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায় 

পরিচালক- সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়- পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, আবীর চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, গৌরব চক্রবর্তী, ঋদ্ধিমা ঘোষ ও বাবুল সুপ্রিয়। 
সংগীত পরিচালনা- অনুপম রায়। 
সিনেমাটোগ্রাফি-সৌমিক হালদার।
সম্পাদনা- প্রণয় দাশগুপ্ত।
পার্শ্ব সংগীত -ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। 

পরিচালক আগেই বলেছিলেন,‘দ্বিতীয় পুরুষ’ তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর স্পিন অফ। আসলে বাইশে শ্রাবণ যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই শুরু দ্বিতীয় পুরুষের গল্প। কলকাতা পুলিসের দুঁদে অফিসার অভিজিত্‍ পাকড়াশি (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)অনেকটাই শান্ত ও পরিণত। ব্যক্তিগত জীবনে চড়াই উত্‍রাই সামলাতে স্ত্রী অমৃতা (রাইমা সেন) তাঁকে মনস্তত্তববিদের কাছে নিয়ে য়েতে চান। কিছুতেই পেরে ওঠেন না অভিজিত্‍। কিন্তু তিনি যাবেন না, এমনটাও বলেন না। এদিকে শহরে ২৫ বছর পর আবার একই ভঙ্গিতে পরপর খুন। রাইভ্যাল গ্যাংয়ের নেতা, পুলিসের খোচর, তারপর পুলিস অফিসার। নৃশংস খুনের পরে কপালে ক্ষুর দিয়ে লেখা ‘খোকা’-তকমা সিরিয়াল কিলিংয়ের। এমন এক কেস আসে অভিজিতের হাতে। অভিজিত্‍ কিছুতেই বিশ্বাস করেন না যে এটা সিরিয়াল কিলারের কাজ। সহকর্মী রজতকে (গৌরব চক্রবর্তী)তিনি বলেন,''সব খুনের পিছনেই থাকে মোটিভ কিন্তু সিরিয়াল কিলিংয়ের পিছনে থাকে একটা মানসিক বিকৃতি। সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে সিরিয়াল কিলিং বলা যায় না।''

এদিকে অভিজিত্‍-অমৃতার জীবনের ক্রাইসিস সামলাতে চিত্রনাট্যে পরিচালক নিয়ে আসেন সম্পর্কের ‘বিরিয়ানি’ সূর্যকেও (আবীর চট্টোপাধ্যায়)। অভিজিত্‍-অমৃতার সম্পর্ককে তিনি কতটা স্থিতিশীলতায় পৌঁছতে পারলেন, তা দর্শক বরং হলে গিয়ে দেখুন, কিন্তু এই কেসের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ অভিজিতের হাতে দিয়ে তিনি রহস্যভেদে অনেকটা এগিয়ে দেন ছবির গল্পকে।

দ্বিতীয় পুরুষের নিউ এন্ট্রান্ট খোকা চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এই চরিত্রটিতে কোনও ‘গ্রে-জোন’ই রাখেন নি পরিচালক। খোকা সম্পূর্ণ ডার্ক, ঘোরতর অন্ধকারে থাকা একটি চরিত্র, হার্ডকোর ভিলেন। চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ওজন বাড়িয়েছেন অনির্বাণ। চিত্রনাট্যের সহযোগিতায় চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন তিনি। কিন্তু এই চরিত্রেই আছে ফিল্মের সবথেকে বড় চমক। ক্লাইম্যাক্সে এসে এমন টুইস্ট আনেন পরিচালক যে দর্শক চমকাতে বাধ্য। তবে ক্লাইম্যক্স সিনের শুটিং, পরম-অনির্বাণের অভিনয় এই ছবির সবথেকে বড় প্রাপ্তি।

অভিনয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অসাধারণ। এত সাটল, পরিণত সিনেম্যাটিক অভিনয়, যা অনেকদিন মনে থাকবে। রাইমাও অমৃতা চরিত্রটিতে যথাযথ। পরমব্রতর পাশাপাশি তাঁর সহয়োগী জুনিয়র পুলিস অফিসারের চরিত্রে গৌরব পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। বিশেষত, স্ত্রীর কাছে অভিজিতের ফিরে যাওয়ার ঠিক আগের দৃশ্যে গৌরব অপূর্ব।একটি ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে চোখ টানবেন বাবুল সুপ্রিয়ও।

ছবির মিউজিক ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং সবই প্রশংসা পাবে, তবে এই ম্যাচে যিনি জিতলেন এবং আবারও প্রমাণ করলেন বাংলায় থ্রিলার বানানোয় তিনিই অন্যতম সেরা, তিনি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।৯ বছর পর আবারও এক অন্ধকার ছবি তৈরি করার কাজটা সহজ ছিল না। এক অচেনা অন্ধকারকে মুন্সিয়ানার সঙ্গে এঁকেছেন তিনি। সিনেমার সবথেকে বড় সম্পদ ছবির সংলাপ। অত জোরদার সংলাপে খারাপ অভিনয় সম্ভবই নয়।‘বাইশে শ্রাবণ’-এর থ্রিল এবং ফিল দুই-ই ফেরাল ‘দ্বিতীয় পুরুষ’।ক্লাইম্যাক্সের টুইস্ট সামলে হল থেকে বেরোতে বেরোতে দর্শক কতটা বাইশে শ্রবাণের সঙ্গে তুলনা টানবেন জানি না, তবে আমি নিশ্চিত হল থেকে বেরিয়ে দর্শক চিকেন চাউমিন আর চিলি ফিশটা বোধকরি এড়িয়েই চলবেন।আর অবশ্যই ‘ফালতু’কে  ইংরাজির এফ-এর মত উচ্চারণ না করে পিএইচের মত করে বলতে শিখবে বাঙালি।

আরও পড়ুন- কঙ্গনার ছেলে পৃথিবী? সন্তানকে বোনের হাতে দিতে ভয় পান অভিনেত্রীর দিদি!

.