নিও নর্মালে ই-বুকই ভরসা, বাড়ছে ডিজিটাল পাঠক আড্ডায় সুজয়প্রসাদ

কুশল মিশ্র

Updated By: Oct 10, 2020, 07:28 PM IST
নিও নর্মালে ই-বুকই ভরসা, বাড়ছে ডিজিটাল পাঠক আড্ডায় সুজয়প্রসাদ

কুশল মিশ্র

তাড়া খেয়ে ঢুকে পড়েছি ঘরে। ভয়ে ভয়ে বেঁচে আছি। সব অভ্যেসের বাইরে,ঘুরছি নিজেরই গোলকধাঁধায়। চেনা পরিসর অচেনা মনে হয়,মুখোশে মুখোশে ছয়লাপ। আগে অনেক মুখই মুখোশ মনে হত। এখন মুখোশই মুখ হয়ে গেছে।চেনা মানুষ কথা বলছে অচেনা স্বরে। প্রিয়জন দূরভাষে জানতে চাইছে কেমন আছি,বলছি ঠিক আছে এখনও, ভালো আছি। 
এরকমই একটা সময়ের মধ্যে আমরা বন্দি। চারদিকে শুধু আতঙ্ক। ঘরে বাইরে  সসবসময় তাড়া করে বেড়াচ্ছে এক অদৃশ্য হানাদার। এ পৃথিবী যুদ্ধ দেখেছে। প্রথম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি গোটা দুনিয়া।  অতিমারির এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এর আগে চাক্ষুষ করিনি আমরা।

এমন একটা সময়ে কেউ যদি আপানকে জিজ্ঞেস করেন কেমন আছেন? কীভাবে দেবেন তার উত্তর? ভাল অথবা খারাপ এই দুই উত্তরের বাইরে কী আর কোনওভাবে নিজের অস্তিত্বকে প্রকাশ করা যায় না? এসব নিয়েই শহরেরই এক প্রেক্ষাগৃহে বসেছিল জমাটি আড্ডা। আড্ডার মধ্যমণি অভিনেতা,গায়ক সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। বই প্রকাশ অনুষ্ঠান একটু দেরিতেই শুরু হয়েছে সুজয়ের অপেক্ষায়। প্রায় মিনিট চল্লিশেকের অপেক্ষা।  ট্যালেন্ট আর্টস পাবলিকেশনের কর্ণধার প্রীতমের কপালে তখন বিন্দু বিন্দু চিন্তার ঘাম।তারপর হন্তদন্ত হয়েই মঞ্চে প্রবেশ। আড্ডায় হাজির নবাগত ছয় লেখক অরিন্দম আচার্য, দেবারতি ভৌমিক,অর্পিতা সরকার,ঐশিক মজুমদার,অতনু প্রজ্ঞান। লেখকদের মননে এই করোনা সময় কতটা ধরা দিচ্ছে, লেখার মধ্যেও কী উঠে আসছে আতঙ্কের এই রোজনামচা? আড্ডার শুরুতেই লেখকদের মনোজগতের খবর নিলেন সুজয়।

অরিন্দম আচার্য পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত কর্মী। পেশার প্রয়োজনে দেশবিদেশেও ঘুরতে হয় বিস্তর। অরিন্দম বলছিল, লকডাউনে কাজের চরিত্রে ঘটে গেছে বড় বিপ্লব। ওয়ার্ক ফর্ম হোম। মাস্ক,স্যানিটাইজারের মতোই জুড়ে গেছে রোজকার জীবনে। বাড়িতে কাজ করলেও কাজের পরিধি বেড়েছে। একহাতে সংসার,একহাতে অফিস,এভাবেই চলছে নিও নর্মাল লাইফ।  এই বাস্তবতাও ধরা পড়েছে তার আগামী উপন্যাসে। রহস্য উপন্যাস লিখতেই ভালবাসেন দেবারতি ভৌমিক। দেবারতি আবার একটু অন্যপথের পথিক। আতঙ্কের এই জীবন থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য। দেবারতি হাসতে  হাসতে জানাল, মাস্ক পরছি নানা রঙের, এটাই এখন চলতি ফ্যাশন। স্যানিটাইজার ম্যানিয়ায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। এসব ভুলতে চাই।

আড্ডার একটা বড় পরিসর ছিল বইপাড়াকে ঘিরে। লকডাউনের সময় থেকেই ঝাঁপ বন্ধ বইপাড়ায়। ছোট বড় অনেক প্রকাশকেরই রুটিরুজিতে টান পড়েছে। লকডাউনের মন্দার সঙ্গে লড়াই করে এখন কেমন আছে সেই বইপাড়া? বই বিক্রির হালচালই বা কী? আড্ডায় ছিলেন ট্যালেন্ট আর্টস পাবলিকেশনের কর্ণধার প্রীতম মুখার্জি। তাঁর দাবি, লকডাউনের কোপে খুব একটা মুখ থুবড়ে পড়তে হয়নি কলেজস্ট্রিট বইপাড়াকে। বরং বই পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন পাঠক। শুধু এ রাজ্য নয়, অন্যান্য রাজ্যের প্রবাসী বাঙালিদের থেকে এসেছে বইয়ের অর্ডার। অনলাইনে বই পড়ার অভ্যাস,ই বুকের বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ। এই ডিজিটাল পাঠকরাই লাভের মুখ দেখাচ্ছেন প্রকাশকদের।
গান-কবিতা বা অভিনয় তিন দিকেই সাবলীল সুজয়প্রসাদ। সুজয়ও জানাল, লকডাউনে কাজের চরিত্র বদলে গেছে। বেড়েছে সোশ্যাল সাইটে অনুষ্ঠানের সংখ্যা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে হাতিয়ার করেই অতিমারির মোকাবিলায় নামতে হবে প্রকাশক-পাঠক দুপক্ষকেই। তার সঙ্গে সুজয়ের জরুরি সংযোজন, বই বের করলেই হল না, বিপনন নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। প্রকাশকের ওপর বিপননের দায়িত্ব ছেড়ে লেখকদের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বিপননের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে লেখকদেরও। ফেসবুক লাইভ করে অনেক সহজেই এখন পৌঁছনো যায় পাঠকদের কাছে।প্রচারের বড় হাতিয়ার হতে পারে সোশ্যাল সাইট। দায়িত্ব তুলে নিতে হবে সবাইকেই। শুধু বইয়ের স্টলে নয়,বইকে পৌঁছে দিতে হবে কফি ক্যাফে, চায়ের আড্ডার স্টলেও। পাঠকের কাছে পৌঁছনোর পথ খুঁজতে হবে নতুনভাবে।

আলোচনায় সময় গড়িয়েছে। অনুষ্ঠানের মধ্যেই নীরবে ছবি আঁকছিলেন এক মানুষ। হাতে নয়, পা দিয়ে। দুটি হাতই অকেজো,কিন্তু ছবি আঁকা থেমে থাকেনি রঞ্জন কুর্মির। পা দিয়েই তুলি ধরেন। অনুষ্ঠান শেষে রঞ্জন কুর্মির পায়ে আঁকা ছবিকে দর্শকদের কাছে মেলে ধরলেন সুজয়প্রসাদ।বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই লেগে গেল কয়েক মুহূর্ত। পা দিয়ে এমন অপূর্ব ছবি আঁকা যায়? ছবিতে মায়ের মুখে মাস্ক, হাতে ত্রিশুল নয়,স্যানিটাইজার। করোনাসুরকে বধ করার অমোঘ অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন বরাভয়ী উমা।  সুজয়ের শেষ কথা ছিল, রঞ্জনদা শেখালেন যুদ্ধের ভাষা। মানসিক প্রতিবন্ধকতা জয় করার মন্ত্র।

আরও পড়ুুন- মা হলেন বাঙালি অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুজোর আগেই এল নতুন অতিথি

.