চুড়েইলের চচ্চড়ি, বুজরুকির আঁতুড়ঘর
ডাইনিতে বিশ্বাস করেন? নাক কুঁচকে বলছেন- না! ধরুন যদি কখনও জানতে পারেন, আপনার ছোট্ট বাচ্চাটির গভর্নেস আসলে রাত কি রানি, থুড়ি ডাইনি। তার নামও ডায়না। আপনার ছেলেটি, যে গবগব করে গেলে ডাইনিবিদ্যার বই সেই বুঝতে পেরেছিল উনি আসলে চুড়েইল। রহস্যময় লিফটে চড়ে নরক থেকে উঠে আসেন (গল্পে গরু গাছে চড়ে, ডাইনি চড়ে লিফটে!)। বাবাকে পটিয়ে পাটিয়ে গভর্নেস সেজে বসেন।
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- এক থি ডায়ান
রেটিং- **
ডাইনিতে বিশ্বাস করেন? নাক কুঁচকে বলছেন- না! ধরুন যদি কখনও জানতে পারেন, আপনার ছোট্ট বাচ্চাটির গভর্নেস আসলে রাত কি রানি, থুড়ি ডাইনি। তার নামও ডায়না। আপনার ছেলেটি, যে গবগব করে গেলে ডাইনিবিদ্যার বই সেই বুঝতে পেরেছিল উনি আসলে চুড়েইল। রহস্যময় লিফটে চড়ে নরক থেকে উঠে আসেন (গল্পে গরু গাছে চড়ে, ডাইনি চড়ে লিফটে!)। বাবাকে পটিয়ে পাটিয়ে গভর্নেস সেজে বসেন। একরত্তি বোনকে কায়দা করে বড় লোহার বাক্সে পুরে মেরে ফেলেন। কেন না, বইতেই তো লেখা আছে ডাইনির শক্তি অটুট রাখার জন্য একটি ছোট্ট শিশুর প্রাণ দরকার হয়। তারপর সেই শক্তিকে চটপট বিনুনিতে বেঁধে ফেলে আর দরকারমতো টিকটিকি হয়ে লেজ নাড়তে থাকে।
এই টিকটিকির কথা কোনও বইতে লেখা আছে কিনা জানা নেই। ভূতের বই পড়তে ছোটবেলা থেকেই বড় ভয় করে। তবে অন্যান্য বিশ্বস্ত সূত্র থেকেও তেমন কোনও ইনফর্মেশন পাইনি। তবে এ ছবিতে দেখতে মজা লাগল। টিকটিকির লেজনাচুনির সঙ্গে বিনুনির এমন সাযুজ্য না দেখলে মজাটা বুঝবেন না। আরও একটা ব্যাপার মন দিয়ে লক্ষ করলাম, টিকটিকির চোখ অবিকল ডাইনির মতন! চোখের ডিমের বেশিরভাগটাই কালচে মণি। ওরে বাবা! এবার বাড়ির আনাচে কানাচে টিকটিকি টিকটিক করে উঠলে কি ভাবতে হবে যে, ডাইনি এসেছে!
একতা কপূরের সঙ্গে নাকি ছবি শুরুর আগে ডাইনিবিদ্যা পারদর্শী ঈপ্সিতা রায় চক্রবর্তীর খুব বড়সড় মনোমালিন্য হয়ে গিয়েছিল। ছবি দেখার পর কারণটা বুঝলাম। ডাইনি নিয়ে যত রকমের অপসংস্কৃতি চালু আছে, তার প্রায় সবকটিই একটা ছবির মধ্যে বাজেয়াপ্ত করেছেন। স্পেশাল এফেক্টস দেখে তেমন উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু পেলাম না। যদিও জানা ছিল যে, অস্কারজয়ী ছবি লাইফ অফ পাই-এর স্পেশাল এফেক্টস নাকি একই স্টুডিয়ো থেকে করা হয়েছিল। আপনারা যাঁরা হলিউডি হরর ছবি দেখেন, তাঁরা নতুন কিছু পাবেন না। যাঁরা বলিউডি হরর নিয়মিত দেখেন, তাঁরাও পাবেন কিনা সন্দেহ। ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে ডাইনি কঙ্কণার সঙ্গে পিশাচ ইমরানের ঝাড়পিট দেখলে গা শিরশিরানির চেয়ে পেটে সুড়সুড়িটাই বেশি মনে হবে।
এতদসত্ত্বেও, একটা বিষয় কিছুতেই মেলাতে পারছি না। কঙ্কণা না হয় আবেগের কারণ আছে। বাবা মুকুল শর্মার গল্প থেকেই বানানো এ ছবির গল্প। হুমা কুরেশিও এমন ডাইনির চরিত্র করতে রাজি হয়ে গেলেন কী করে! নির্ঘাত্, পরিচালক ব্ল্যাক-ম্যাজিক করেছিলেন। যুক্তির যুদ্ধে না গিয়েই বলতে হয়, দুজনের জন্যই ঢের ভাল ছবির অফার ছিল। কিসিং কিং ইমরান হাশমিও বেশ অবাক করেছেন, ইদানীং ভূতনি-পেতনি ছাড়া নায়িকাই পাচ্ছেন না! রাজ থ্রি-তে দেখুন। অমন হট অ্যান্ড সেক্সি বিপস কি না ভূত! অমন দীর্ঘাঙ্গী, তন্বী, শিখরীদশনা হুমাও কি না চুড়েইল... পরের দিকে অবশ্য জানা গেল যে তিনি নিজেও পিশাচ। মনুষ্যরূপ ধরে পৃথিবীতে আসার পর গজনি কেস হয়ে গিয়েছিল, মানে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন যে কাজ শেষ করে আবার নরকে ফিরতে হবে। তবে পিশাচ হলেও স্বভাব-টভাব এর ভালই। দোষের মধ্যে এক, লম্বা বিনুনি দেখলেই তিনি চাকু দিয়ে কেটে নেন ডাইনি সন্দেহে।
অনেক কথাই হজম হয় না, তবু সিনেমাটিক লাইসেন্সের খাতিরে হজম করে নিতে হয়। মানা যেত, এটি একটি ভয় তৈরির গল্প। কীভাবে শিশুর মনে ছোট থেকেই ফিয়ার সাইকোসিস-এর সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কীভাবে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে গিয়ে এইসব অদ্ভূতুড়ে জগতে আটকে যায় তারা। তবু পরিচালক কানন আইয়ার সেই ব্যাপারে জাস্টিস করতে পারেননি। মোটা মোটা দাগে ভয় দেখিয়েছেন। ছোট বাচ্চাদের নেহাত খারাপ লাগবে না এ ছবি। ঘণ্টা দুই চুপ করে চোখ ছানাবড়া করে চুড়েইল দেখাতে পাঠিয়ে দিলে তাদের দুষ্টুমির হাত থেকে খানিক নিশ্চিন্তি মিলবে। সাউন্ড ডিজাইনিং দেখার মতো! মনে রাখার মতো। বিশাল ভরদ্বাজের স্ক্রিপ্ট আর গুলজারের লিরিকস-এর যুগলবন্দি। ইয়ারম-এই গানটিও স্মৃতির পাতায় লেগে থাকবে। ছবির জন্য বরাদ্দ দুটি স্টার এইজন্যেই।
তবু, সবার শেষে একটি সাবধানবাণী। মহিলাদের উদ্দেশ্যে। যাঁরা এ যুগেও লম্বা চুলের ফ্যাশন ফিরিয়ে এনেছেন, তাঁরা খবরদার পাবলিক প্লেসে চোটি করে, মানে বিনুনি করে যাবেন না। কে জানে কখন আপনার পেছন থেকে পিশাচ চড়াও হয়ে আপনার সাধের বেণী কুচ করে কেটে দেয়!