আশিতে আসিও

শর্মিলা মাইতি ছবির নাম- রামাইয়া ভস্তাভাইয়া রেটিং- **1/2

Updated By: Jul 22, 2013, 11:45 PM IST

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- রামাইয়া ভস্তাভাইয়া
রেটিং- **1/2
একশ বছর পার করল ভারতীয় ছবি, তবু আশির দশকটা কেমন যেন দুধেভাতে হয়ে থেকে গেল। গ্রাম-শহরের তুমুল গরমিলটা মিলিয়ে দেওয়ার ফর্মুলা এখানেই তৈরি হয়েছিল বটে, তখন বেশ মারমার কাটকাট হিট করত সেসব ছবি। শহরের পড়িলিখি বাবু এসে গ্রামের মাসুম লেড়কির প্রেমে পড়ছেন, বহু কান্না-হাসি-ঝাড়পিটের পর বিয়ে হচ্ছে। মেয়েটিরও হিল্লে হয়ে যাচ্ছে, গ্রামে পড়ে থাকতে হচ্ছে না। ছেলেটিও মনের মতো বউকে কাঁধে করে নিয়ে চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বেশ জমাটবাঁধা ছবি। এইরকমই একটা সোজাসাপটা ফর্মুলা নিয়েছেন পরিচালক প্রভু দেবা। ওয়ান্টেড আর রাউ়়ডি রাঠোর দুটোই একশো কোটি ক্লাব কাঁপিয়েছে। এ ছবির প্রত্যাশা কাজেই একটু মগডালেই ছিল। স্ট্র্যাটেজি হিসেবে এই ফর্মুলাকে বাণিজ্যিক ছবির বাজারে গরমাগরম ছাড়াটা বোধহয় ততটা জোরদার নয়। বিশেষ করে নায়ক গিরীশ তউরানি যখন এক্কেবারে নতুন। এবং ফর্মুলা ফিল্মের যুগ তিরোধানের সময় গুনছে, তখন। আর তৃতীয়ত, আশির দশকের ছবির কপি বা রিমেক কোনওটাই যখন দর্শক খাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় উদাহরণ, সাজিদ খানের হিম্মতওয়ালা।

পরিচালক হিসেবে প্রভু দেবা তাক লাগিয়েছেন অন্যখানে। এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম আপারহ্যান্ড নেওয়ায় বহুদিনই কমার্শিয়াল ছবির পৃথিবী থেকে গ্রাম ব্যাকসিটে চলে যাচ্ছিল। শুধুই শহরজীবনের উত্থানপতনের ছবিই ডানা মেলছিল। এইখানে প্রভু বেশ যত্নবান হয়ে গ্রামের ফোটোগুলো ফিরিয়ে আনলেন। প্যাঁচহীন সহজ-সরল গল্প। আম-আদমিকে মাথা খেলাতে হবে না। নিজেও আইটেম নাচলেন জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের সঙ্গে। সহজ স্টেপস। কিছুটা গণেশ আচারিয়ার স্টাইলও লক্ষ করা যায়। সোনাক্ষি সিংহের সঙ্গে গো গো গোবিন্দা আর জাদু কি ঝাপ্পি-তে জ্যাকলিন, দুটোর তুলনা টানলে অবশ্য প্রথমটাই বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করবে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই প্রভুর আইটেম, শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। দর্শকও যে উপভোগ করলেন, সিটি-তালি থেকে ভালই বোঝা গেল।
মন ভাল করে দেবে শ্রুতি হাসানের সারল্য। স্ক্রিন জুড়ে ঝিলিক দেয় তাঁর সৌন্দর্য। খুব সাধারণ সংলাপও সুন্দর হয়ে ওঠে তাঁর চলনে-বলনে। এই কবছরে নিজের গ্রুমিং পর্ব সেরে নিয়েছেন ভালভাবেই। গিরীশের প্রতিভা নিয়ে তেমন কোনও উপপাদ্যে এখনও আসা যায় না। এইধরণের ফর্মুলা চরিত্রে যতটুকু পারেন চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি তো সলমন, হৃতিক কিংবা অক্ষয়কুমার নন। কাজেই শুধু ম্যানারিজমের জোরে দর্শক টানার ক্ষমতা তাঁর নেই।

সাদামাটা গল্পের স্বল্পপরিসরেই আবার নিজের ক্ষমতা চিনিয়ে দিলেন সোনু সুদ। বহু দিন ধরেই চেনাচ্ছেন, তবু কেন যে তাঁর কেরিয়ারগ্রাফে তেমন কোনও বাঁক-ঢাল হচ্ছে না, সেটাই আশ্চর্ষের। অমিতাভ বচ্চনের অ্যাংরি ইয়ং ম্যান চেহারাটাই আবার দেখা গেল যেন, বহু দিন পর।
আশির দশকটা আসলে বড় অপয়া। কেউ কিছু ধার নিতে গেলেই মুখ থুবড়ে পড়ে। সমালোচকেরা হাত খুলে নিন্দে করেন। হলে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে কিন্তু তেমনটা মনে হল না। বেশ হাসিমুখেই বেরতে দেখলাম। আড়াইটে স্টার দিলাম বটে, কিন্তু সমালোচক হিসেবে এখনও ঠিক বুঝতে পারিনি, প্রভুদেবা আশিতে আসিয়া হাসিলেন, নাকি ফর্মুলার বস্তা ভাসাইলেন!
নাঃ, ট্রেড রিপোর্টটার জন্য এই হপ্তাটা অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

.