সাত রঙের রামধনু, বর্ণহীন ছোটবেলার গল্প

শর্মিলা মাইতি ছবির নাম: রামধনু রেটিং: **1/2

Updated By: Jun 19, 2014, 05:11 PM IST

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম: রামধনু

রেটিং: **1/2

ফুল, প্রজাপতি, পাখি আঁকার ছেলেবেলা। আকাশে ঘুড়ি গোনার ছোটবেলা। শিশুশিল্পী আকাশনীলের কথাই মনে গেঁথে থাকে ছবি শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক পরেও। বাড়ির কার্নিশে বাসা বেঁধেছে যে পায়রারা, তাদের সঙ্গে ভাব, সারাদিন কথা বলে তাদের সঙ্গেই। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের রামধনু রং অবলম্বনে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির এই ছবি, একেবারে মধ্যবিত্তের বাসনা থেকে টেক অফ পয়েন্ট বেছে নিয়েছেন। মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা নিয়ে এই মুহূর্তে সুচিত্রার সব লেখাই সমাদৃত। সন্তান জন্মানোর পর থেকেই মধ্যবিত্ত দম্পতির মধ্যে যে রামধনুর সঞ্চার হয়, ক্ষণস্থায়ী অথচ স্বপ্নের আঁতুড়ঘর, সেই প্রহেলিকা নিয়েই ছবি বানালেন পরিচালকদ্বয়। বড় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তির ঘোড়দৌডে সামিল বাবা ও মা। প্রায় প্রতিটি ঘরের একসময়ের কাহিনি। দুর্নীতির পেছন-দরজা যে শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রায় কণ্ঠরোধ করতে বসেছে। চুরি করে নিয়েছে শৈশব। ছোট থেকেই যে সিস্টেমের থাবায় গুঁড়ো হতে চলেছে ছোটদের মেরুদণ্ড। নড়ে যাচ্ছে অপত্যস্নেহের ভরকেন্দ্র।

মায়ের ভূমিকায় গার্গী রায়চৌধুরী। গোগোলকে ঘিরে যার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। ইচ্ছে ছবিতে যে মাকে দেখেছিলাম, নিজের না-পাওয়া ইচ্ছেগুলো জোর করে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ক্রমে ক্রমে নিজের সৃষ্টিরই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে, সেই মাকেই পেলাম। আরও একটু আগে থেকে। যখন তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তির জন্য এক জীবনসংগ্রামে নেমেছে সেই মা। স্বপ্নের সিঁড়ির প্রথম ধাপ স্পষ্ট হচ্ছে সবে। মেঘ সরিয়ে। বাংলা মিডিয়ামে পড়া, মফসসলে পড়া সেই মা, যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে সন্তানকে কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করার জন্যে উন্মাদ। সন্তানের মনোজগতের সঙ্গে দূরত্বটা ঠিক যেখান থেকে শুরু হচ্ছে...

তবে ইচ্ছে ছবির মতো মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নামছেন না মা ও ছেলে। কারণ, তাদের মনোজগতের দূরত্ব বহু যোজন। ছেলেটি শুধুই মাকে অসহায়ভাবে খুশি করার চেষ্টা করে চলে। স্বল্পশিক্ষিত বাবা এই জাঁতাকলের শিকার। গার্গীর অভিনয় হৃদয়স্পর্শী। জেদ, যণ্ত্রণা, অসহায়ত্ব, ভেঙে পড়া, সন্তানকে বুকে জড়িয়ে বুক-ভাঙা কান্না, প্রতিটি অভিব্যক্তিই অসাধারণ। মেক-আপের অতিরঞ্জন নেই। আড়ম্বরহীন ফ্ল্যাটের অন্দরে সহজ সাদাসিধে জীবনে এই অপূর্ণ স্বপ্নের হাতছানি। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের ভাঙা-গড়া। পড়শির জিতে-যাওয়ায় ঈর্ষা, সব কটি অভিব্যক্তিই খুব স্পষ্ট।

হেরে-যাওয়া বাবার ভূমিকায় শিবপ্রসাদ। হাসির মোড়কে ঢেকে রাখে তার না-পাওয়াগুলোকে। না-পাওয়ার পেছনে দৌড়নোর তাগিদ নেই। কিন্তু আত্মবিশ্বাসহীন, ভঙ্গুর এক মানুষের নিজেকে জোড়া দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। ইংরেজি না-জানার ফাঁকটাকে কমেডি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ার দৃশ্যতেও অভিনয় দারুণ। তবে কখনও কখনও সেটা মাত্রাছাড়াও বটে। এরই মধ্যে শিক্ষিকার ভূমিকায় রচনা ব্যানার্জির অবতরণ।

যে-চরিত্রটি রচনা ব্যানার্জি করেছেন, হাল আমলে কোনও নায়িকাই এই চারিত্রিক ব্যক্তিত্ব দেখাতে পারতেন না। দিদি নাম্বার ওয়ান-এ যে তিনি কী জন্যে সফল হয়েছিলেন, সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন। মিষ্টি হাসি, অথচ দৃঢ়। পেরেন্ট-টিচার মিটিং-এর গ্রুমিং ক্লাসে অনায়াসে বকেঝকে দিতে পারেন “বড়”দের।

রচনা এই ছবিতে আরও একবার প্রমাণ করলেন, বড় পর্দায় এখনও তাঁর কিছু দেওয়ার বাকি। উপযুক্ত পরিচালকের ডাক পেলেই হল।

সপরিবারে দেখার ছবি। সপরিবারে শেখার ছবি। কিন্তু ইচ্ছে-র মতো ধাক্কাটা নেই। বড়ই গোল-গোল এন্ডিং। বড্ড সহজসরল, সোজা।

.