Sudipto Sen Exclusive: ‘মমতাদি দ্য কেরালা স্টোরি দেখেননি তাই ব্যান করেছেন’, দাবি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের
The Kerala Story: পশ্চিমবঙ্গে এই ছবির ভবিষ্যত কী? ছবিটা দেখানোর কোনও ব্যবস্থার কথা ভাবছেন? জি ২৪ ঘণ্টার ডেপুটি এডিটর মৌপিয়া নন্দীর এই প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক জানান, ‘এক আমরা ছবিটা বানিয়েছি। দুই, ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড সার্টিফিকেট দিয়েছে। তিন, তিনটি আদালত বলেছে আমাদের ছবিতে দেখানোর অনুমতি দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি আমাদের কিছু করার নেই।’
The Kerala Story, West Bengal, Sudipto sen, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ছবির ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়ে 'দ্য কেরালা স্টোরি'। অভিযোগ, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে এই ছবি। এই ছবিটি এক বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষমূলক মানসিকতা ছড়াচ্ছে। এর বিরোধিতা করেছে কেরল সরকার, তামিলনাড়ু সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এমনকী ছবিটিকে 'প্রোপাগান্ডা ছবি' বলেও দাবি করা হয়েছে। এরপর ছবি মুক্তির পরেই এই ছবিকে পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার জি ২৪ ঘণ্টার আপনার রায় অনুষ্ঠানে ডেপুটি এডিটর মৌপিয়া নন্দীর মুখোমুখি হয়ে বেশ কিছু বিষয়ে মুখ খোলেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন।
পরিচালক সুদীপ্ত সেন বলেন, ‘এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমি কখনও ভাবতে পারিনি আমার ছবি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হবে। সিবিএফসির গাইডলাইনে বলা আছে, কোনও ছবি সিবিএফসি থেকে সার্টিফিকেট পাওয়ার পর কোনও রাজ্যের ক্ষমতা নেই সেই ছবিতে ব্যান করার। আদালতে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছিল, আমরা সেই মামলা লড়েছি। তামিলনাড়ু, কেরালার হাইকোর্ট সহ সুপ্রিম কোর্টও রায়ে বলে, একটা সিনেমার পিছনে অনেকের পরিশ্রম থাকে। শুধুমাত্র কিছু রাজনৈতিক দলের স্বার্থের জন্য সেগুলো উপেক্ষা করা যায় না আর এই ছবি কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আহত করে না। তাই এই ছবি নিষিদ্ধ করার কোনও কারণ নেই। এত ভালো ভালো রায় পেলাম। দুমাস ধরে সেন্সর বোর্ড খুঁটিয়ে দেখল। এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার যা করল তা খুবই অবাক করা কাণ্ড কারণ আমাদের কাছে এই রাজ্য হল বাকস্বাধীনতার রাজধানী, বাঙালিরা হল বাকস্বাধীনতার পথপ্রদর্শক। আমার মেন আছে পদ্মাবতের সময়ে বিতর্ক চলছিল সারা দেশে। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার সামনে এসে সেই ছবির পাশে দাঁড়ায়, আমরা বাহবা দিই। বিবিসির ছবির ক্ষেত্রেও তাই। গত তিন-চারদিন পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে হাউজফুল চলছিল আমার ছবি। কোথাও কোনও আইন শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়নি। দর্শক স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই ছবি দেখতে যায়। হঠাৎ জানি না কী হল, পুলিস ঢুকে সব শো বন্ধ করে দিল। আমার মনে হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবিটা দেখেননি, উনি দেখলে ভুলটা বুঝতে পারবেন’।
পরিচালক বলেন, ‘এটা কোনও প্রোপাগান্ডা ছবি নয়। আমরা সাত বছর ধরে এই ছবি বানিয়েছি। যে মেয়েরা এই ছবিতে রয়েছে তাঁরা কেরালার রাস্তায় নেমে চোখের জল ফেলে নিজেদের গল্প বলছে। এক সাংবাদিক কেরালার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আমার ছবির ইস্যুগুলো তদন্ত করেছে। এরপর ছবিটা তৈরি হয়, রিলিজ হল। যারা আসলে এই ছবিটি দেখেননি তাঁরাই বলছে প্রোপাগান্ডা ছবি। আমার কাছে কিছু টেস্টিমনি আছে, যেখানে তিনটি মেয়ে আমাকে ট্রেলার দেখেই গালিগালাজ করছিল। তাঁরা ছবি দেখে আমায় বলেছে, এই ছবিটা সব মা ও মেয়েদের দেখা উচিত। সেই কারণে আমার বলতে দ্বিধা নেই, এটার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই’।
আরও পড়ুন- Srabanti: লন্ডনে খুনের মামলায় জড়িয়েছেন শ্রাবন্তী, তারপর...
‘সত্য ঘটনা অবলম্বনেই এই ছবি তবে এখানে নম্বরটা ফ্যাক্টর নয়। যদি একটিও মেয়ে ম্যানিপুলেট হয়ে দেশের বাইরে চলে যায় তাহলেও সেটা লজ্জার। যাঁরা এই ছবি দেখেছেন তাঁরা বুঝবেন সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই ছবিটা এখনও ১ কোটি লোক দেখেছেন তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন। যাঁরা আগে সমালোচনা করেছেন তাঁরাই ছবিটা দেখে কাঁদছেন। আমি যদি বাড়িয়ে বলি তাহলে আমি ফের এই প্ল্যাটফর্মেই সরি বলব’ বললেন দ্য কেরালা স্টোরি ছবির পরিচালক।
পশ্চিমবঙ্গে এই ছবির ভবিষ্যত কী? ছবিটা দেখানোর কোনও ব্যবস্থার কথা ভাবছেন? জি ২৪ ঘণ্টার ডেপুটি এডিটর মৌপিয়া নন্দীর এই প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক জানান, ‘আমরা নেতা নই, আমরা ছবি বানাই। আমাদের সাহস হল, এক আমরা ছবিটা বানিয়েছি। দুই, ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড সার্টিফিকেট দিয়েছে। তিন, তিনটি আদালত বলেছে আমাদের ছবিতে দেখানোর অনুমতি দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি আমাদের কিছু করার নেই। ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন জমা দিয়েছি এই বেআইনি ব্যানের বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকার বলতে পারে, আইন শৃঙ্খলা ভাঙতে পারে কিন্তু গত চারদিনে তো এরকম কিছু হয়নি’।
বাংলা মুক্তিমননের জায়গা বলেই সবাই জানে। নানা বিষয়ে বুদ্ধিজীবীরা মুখ খোলেন। এই বিষয়ে আপনি কি বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের থেকে প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুদীপ্ত সেন বলেন, ‘কয়েকজন বলেছেন, তবে বাকিরাও বললে ভালো হয়। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই দেখেননি তাই কেউ কিছু বলতে পারছেন না। আপনারা ছবি দেখুন। আমার ছবি দেখে কেউ কমিউনিষ্ট বলে কেউ বিজেপি বলে কেউ কংগ্রেস বলে, একজন আর্টিস্টের জন্য এই ধরনের প্রতিক্রিয়া ভালোই। আপনারা সিনেমাটা দেখুন তাহলে আর কোনও বিতর্ক হবে না’।