টলিপাড়ায় নতুন যুগ

বাংলা সিনেমায় নগরায়নের জোর উড়ান। গ্রামের মেঠো পথ, পুকুর পারকে পিছনে ফেলেছে টলি।

Updated By: Sep 28, 2012, 01:54 PM IST

বাংলা সিনেমায় নগরায়নের জোর উড়ান। গ্রামের মেঠো পথ, পুকুর পারকে পিছনে ফেলে বাংলা ছবির প্রেক্ষাপট এখন শহরের ধোঁয়া, ধুলো মাখা রাস্তায়। বেশ কয়েক বছরের খরা কাটিয়ে বাংলা ছবির টানে বঙ্গ সন্তানরা আবার হলমুখী। উঁহু, একটু ভুল হল। বলা ভাল মাল্টিপ্লেক্স মুখী। বাণিজ্যিক থেকে ভিন্ন ধর্মী, সব রকম ছবির গায়েই `হাউস ফুল` স্টিকার সাঁটা। এই তো কিছু দিন আগেও যে `বাংলিশ` জেন- ওয়াই-র দল বাংলা সিনেমার নাম শুনলেই নাক কুঁচকে চরম উপেক্ষায় `রাবিশ` বলত, তারাও এখন বাংলা গানের ছন্দে ডিস্কোথেক-এ কোমর দোলাচ্ছে। মোদ্দা কথায় বাংলা ছবির গায়ে এখন ভীষণ রকম এলিট এলিট গন্ধ।

স্মার্ট ঝরঝরে গল্প। স্মার্ট নির্দেশনা। স্মার্ট শিল্প নির্দেশনা। এই ত্রয়ীর কল্যাণে টলিউডে এখন সুখী আবহাওয়ার আপাত বাস। বিশ্বায়নের হাওয়ায় বজবজের গঙ্গা পার ছেড়ে বাংলা ছবির লোকেশন আইস ল্যান্ডের ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপাকাঁপি করতে করতে লন্ডনের ওলি গলিতে ঘোরা ঘুরি করছে। লাল ফিতে দিয়ে বেণী বাঁধা হিরোইনরা তো এখন বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি। পোষাকে আশাকেও শহুরে আধুনিকতার ছোঁয়াচ। প্রযোজকরা এগিয়ে আসছেন নতুন লগ্নি নিয়ে। আসলে এক ঝাঁক নতুন বাঙালি পরিচালকরা বাংলা সিনেমার ভোল পাল্টে দিয়েছেন। তাঁরা সত্যিই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রস্তুত। ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, অঞ্জন দত্ত আগেও ছিলেন। কিন্তু কোথায় যেন হরনাথ চক্রবর্তী, স্বপন সাহা, অঞ্জন চৌধুরীদের সঙ্গে তাঁদের ছবির ভীষণ রকম মূলগত পার্থক্য ছিল। হিট বাংলা ছবি আগেও হচ্ছিল। কিন্তু কোথায় যেন ছবি গুলোর মধ্যে গ্রাম এবং শহরের দর্শকদের জন্য একটা সুস্পষ্ট সীমারেখা থেকে যাচ্ছিল। রাজ চক্রবর্তী, সৃজিত, আনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, অনীক দত্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গাঙ্গুলীর মত পরিচালকরা কোথাও গিয়ে এই বাংলার বাণিজ্যিক আর ভিন্ন ধারার ছবির মধ্যেকার এই বিভাজিকাটাই মুছে ফেলতে সফল হয়েছেন। আর এই খানেই
লুকিয়ে আছে বাংলা ছবির বর্তমান সাফল্যের ইউএসপি। এঁদের ক্রমাগত এক্সপেরিমেন্টের ফসল ভূতের ভবিষ্যত, অনুরণন, বাইশে শ্রাবন, চ্যালেঞ্জ, আর একটি প্রেমের গল্প, ইচ্ছের মতো ছবি। এর সঙ্গেই এক ঝাঁক অত্যন্ত গুনী চরিত্রাভিনেতারা বাংলা ছবির মান উন্নয়নের অন্যতম কারিগর। যার কল্যাণে বলিউডি ছবিকে পিছনে ফেলে শুক্রবার বাংলা ছবি দেখার জন্য হলের বাইরে লাইন দিয়ে বাঙালি। শেষ কতদিন আগে তার বুকে এরকম দৃশ্য দেখেছিল শহর কলকাতা? তবে টালিজঞ্জ পাড়ার এই নবজাগরণের পিছনে কিন্তু বিশাল অবদান বাংলা গানের। জিৎ গাঙ্গুলি, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, নীল দত্ত, অনুপম রায়ের মতো সুরকার। সঙ্গে শ্রীজাত, অনুপম প্রমুখের মতন লিরিসিস্টের সৌজন্যে বাংলা গানের ব্যাপ্তি এখন লোকের মুখ ছাপিয়ে মোবাইলের রিং টোনে পর্যন্ত।

বাংলা ছবির এই উত্তরণ সত্যিই আশার, আনন্দের। কিন্তু ইদানিং দক্ষিনী ছবির বারংবার টুকলি আর কিছু অনাবশ্যক গবেষণা বাংলা ছবির এই উড়ানকে কিছুটা হলেও শ্লথ করেছে। একঘেয়েমি আসতে শুরু করেছে গানেও। এই সিঁদূরে মেঘ দেখে নিজেদের ছোটো খাটো ঘাটতি গুলো সামলে নিলে টলি পাড়ার সাফল্য দৌড় আটকায় কার সাধ্যি!

.