ইদে বাজিমাত করতে ব্যর্থ সব ছবিই! কারণটা কী?
ইদে প্রকাশিত কোনও ছবিই সাড়া ফেলল না। বছরের অন্যতম বড় উত্সব ইদে বক্স অফিস খরাতেই কাটল। সলমন খান, দেব বা জিত্ কোনও ম্যাজিকই কাজে এল না। অথচ, বিষয়ের বিভিন্নতা, মেগাস্টারদের উপস্থিতি, হেভিওয়েট পরিচালকদের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন-বাকি ছিল না কিছুই। তাহলে গোলমালটা হল কোথায়?
ওয়েব ডেস্ক: ইদে প্রকাশিত কোনও ছবিই সাড়া ফেলল না। বছরের অন্যতম বড় উত্সব ইদে বক্স অফিস খরাতেই কাটল। সলমন খান, দেব বা জিত্ কোনও ম্যাজিকই কাজে এল না। অথচ, বিষয়ের বিভিন্নতা, মেগাস্টারদের উপস্থিতি, হেভিওয়েট পরিচালকদের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন-বাকি ছিল না কিছুই। তাহলে গোলমালটা হল কোথায়?
সলমন খান, দেব এবং জিত্-তিন স্টারই এই প্রথম স্বনামে এলেন প্রযোজনায়। এটা একটা নতুন ট্রেন্ড। আমির খান এই ট্রেন্ডে সফল হওয়ার পর বলিউড এবং টলিউডে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। প্রায় সব স্টারই ছবির প্রযোজনা নিজেরা করতে চাইছেন, যাতে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবির লভ্যাংশও তাঁদের পকেটেই ফেরে। এখন প্রশ্ন, এই সব স্টাররা ছবির ব্যবসা কতটা বোঝেন? এবং কীভাবে ছবির মার্কেটিং দিয়ে বক্স অফিসের নদীতে বান আনা যায়? ট্রেড অ্যানালিস্টদের মতে, মূল সমস্যা এখানেই। স্টারদের সেই অভিজ্ঞতা নেই এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইগো একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়।
টিউবলাইটের শুটিংয়ের সময় বারবারই খবর আসছিল যে, পরিচালক কবীর খানের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ছেন সলমন। অবাক করার মতই তথ্য, কারণ এর আগের দুটো ছবি টাইগার জিন্দা হ্যায় ও বজরঙ্গি ভাইজান বক্সঅফিসে খুবই সফল। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল যে, প্রযোজক সলমন খান নাকি বারবার নাক গলাচ্ছিলেন ছবির মেকিংয়ে। তাতে বিরক্ত কবীর খান নাকি মনস্থিরও করে নিয়েছেন যে, সলমনের সঙ্গে আর কাজ নয়। ছবিতেও টিউনিংয়ের অসুবিধাটা বারবার চোখে পড়েছে। শুধুমাত্র বিশ্বাসের জোরে পাহাড় সরানোর রূপকটা একবারের জন্যও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি। সলমন খানের অপরিণত অভিনয় এই ছবির মুখ থুবড়ে পড়ার অন্যতম বড় কারণ। পরিচালক কবীর খান সবসময়ই চেষ্টা করেন তাঁর ছবিকে একটা রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে পেশ করার। কিন্তু প্রেক্ষিতটা এতই দূরে থাকে যে, ছবিতে তা অনিবার্য হওয়ার বদলে তার প্রভাব প্রায় থাকেই না। একরাশ হতাশা নিয়ে ফেরত আসতে হয় দর্শকদের।
এবার আসি চ্যাম্পের কথায়। প্রযোজক দেবের আত্মপ্রকাশ চ্যাম্পের সঙ্গে। ছবির বিষয় নিয়ে আশাবাদী ছিলেন সকলেই। মনে হয়েছিল, চ্যাম্পের হাত ধরেই তিন বছর পর ফিরে আসবেন নায়ক দেব। তার ওপর পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, হিট মেশিন। কিন্তু প্রথাগত এই ধারণা চললই না। চ্যাম্পের গল্প বাঙালি দর্শকের কথা ভেরে তৈরি হলেও ছবির চিত্রনাট্যটি অত্যন্ত দুর্বল। গোটা ছবিতে কোনও সাবটেক্সট উঠে এল না, যা ছবিকে এদিয়ে দিতে সাহায্য করে। একটি সাধারণ ছেলের বক্সার হয়ে ওঠার রাস্তাটা এত মসৃণ ও এত তাড়তাড়ি যে ছবিটি দেখতে দেখতে তা খানিকটা অবাস্তব বলে মনে হয়। ছবির একমাত্র পাওনা দেবের পরিণত অভিনয়, কিন্তু ছবিটি দানা না বাঁধলে অভিনেতাদের পক্ষে ছবি টানা মুশকিল। সেক্ষেত্রে দায় রাজ চক্রবর্তীকে নিতেই হবে। শুধু মনে রাখার মত অভিনয় কমলেশ্বরের। আর তাতেই ঝলকের মত মাথায় খেলে যায়, ছবিটি কমলেশ্বর পরিচালনা করলে কী অন্যরকম হত? প্রযোজক দেবের কী আরও একটু বিচক্ষণ হওয়া উচিত ছিল না!
নিজের নামে এই প্রথম প্রযোজনা করলেও জিতের প্রযোজনার অভিজ্ঞতা আছে আগেও। বন্ধু বাবা যাদবের পরিচালনায় বস টু ও এখনও পর্যন্ত সেভাবে দাগ কাটল না বক্স অফিসে। অথচ, চার বছর আগে বসের সাফল্য এখনও সকলের মুখে মুখে ফেরে। নতুন গল্প, ঝকঝকে শুটিং, জিত্-শুভশ্রীর কেমিস্ট্রি, নুসরত ফারিয়া বিতর্ক, জিত্ গাঙ্গুলির সঙ্গীত পরিচালনা কোনোটারই প্রভাব পড়ল না। বাংলা ছবির দর্শক কী তাহলে এই ধরণের লার্জার দ্যান লাইফ ছবি পছন্দ করছেন না? নাহলে কেবল সৌমিত্র -যিশুর কম্বিনেশনে "পোস্ত' যদি প্রথম চারদিনে এক কোটি ও দশদিনের মাথায় আড়াই কোটি টাকা রোজগার করতে পারে, তাহলে জিত্-শুভশ্রী বা দেবের মত সুপারস্টারদের ছবি তার ধারেপাশেও পৌছতে পারছে না কেন? ১ জুলাই থেকে জিএস টি লাগু হওয়ার পর যে পরিস্থিতিটা আরও উদ্বেগজনক হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। (আরও পড়ুন- তাঁর গাওয়া গান হিন্দিতে 'লতাদিদি'কে দিয়ে গাওয়ানোয় রেগে যেতেন সলিল চৌধুরীর উপর)