বক্সিং রিং-এ শেষ হাসি মাধবনেরই!
শর্মিলা মাইতি
রেটিং: ***1/2
মন্তব্য- নিশ্চয়ই দেখবেন
আশ্চর্য! এঁর নামের পেছনেও একশো কোটি ছবির সারি। থ্রি ইডিয়টস থেকে তন্নু ওয়েডস মন্নু.. তবু কীভাবে ব্রাত্য থেকে যান? এ কী দর্শকের দোষ, না ভাগ্যের খেলা। বোধহয় দরকার ছিল এমনই একটি ছবির, যাতে সব জমে থাকা ক্ষোভ, সব না-মেলা অঙ্ক, বার বার ভিকট্রি স্ট্যান্ডে উঠেও মেডেল না পাওয়ার যন্ত্রণার পাঞ্চিং ব্যাগটায় সজোরে ঘুঁষি মারা যায়। হ্যাঁ, মাধবনের কেরিয়ারে দরকার ছিল এমনই একটা ছবি, যা মিষ্টি হাসির ম্যাডির অন্দর থেকে রগচটা, প্রতিভাবান বক্সারকে বের করে আনবে। সালা খাড়ুস, সেই ছবিটাই। যে ছবির প্রযোজক আর কেউ নন, রাজু হিরানি।
জীবনের রাজনীতিতে বার বার হারতে থাকা এক বক্সার। সে সফল কী নিষ্ফল, সে জবাব কোনও জানা অঙ্কেই মিলবে না, কারণ প্রতিভা বিচারের কোনও মাপকাঠি নেই। মাধবনের কাছে এটাই- দি ক্যারেকটার। হার বলে কিছু নেই, থাকলে সেটা কবেই উড়িয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেরা বক্সার হয়ে সে সফলতার ট্র্যাকে দৌড়য় না, প্রবল ঘৃণায় দেখে এই রাজনীতিসর্বস্ব স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনকে।
জনসংখ্যার দৌড়ে যে ভারত সর্বাগ্রে, বিশ্বের সঙ্গে খেলার প্রতিযোগিতায় এত পিছিয়ে কেন? সালা খাড়সকে শুধুই স্পোর্ট্স ফিল্ম ক্যাটাগরিতে ফেলাটা আমাদেরই দুর্ভাগ্য। শাহরুখের চক দে ইন্ডিয়া থেকে প্রিয়্ঙ্কা চোপড়ার মেরি কম, সব ছবির চেয়ে এই ছবিকে অন্য ঘরানায় ফেলা যায়। উদ্দীপনার লেকচার নয়, আবেগের বন্যায় ভেসে যাওয়া নয়, একেবারে অন্তঃস্তল থেকে প্রতিভাকে ভূমিষ্ঠ করালেন ভদ্রলোক। মাস্টার মাধবন।
এই প্রতিভার নাম ঋতিকা সিং। চেন্নাইয়ের মাছবাজারের মেছুনি। দিদি (মুমতাজ সরকার) বক্সিং শিখে পুলিশের চাকরি পেয়ে সংসারটাকে দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু বক্সিং নামের প্লেটলেটটি যে তারই ধমনীতে। এই স্ফূলিঙ্গ আবিষ্কার করলেন দিল্লি থেকে বিতাড়িত বক্সিং কোচ মাধবন। ঋতিকা সিং যে এ বছর নবাগতা হিসেবে ভালই নামডাক পাবেন, সে কথা না বললেও চলে। জীবনের কঠিন পর্বগুলো পেরনোর আগে একটা ড্রাই রান হয়ে গেল তাঁর। তীব্র তীক্ষ্ণ, ধারালো সংলাপ আরও বেশি শান দিয়ে বলার টেকনিকটা কীভাবে, কোন স্কুল থেকে শিখলেন, জানতে ইচ্ছে করে।
দাগ কাটলেন মুমতাজ সরকারও। বক্সিং তাঁর ছোটবেলার খেলা। কাজেই চরিত্রের জন্য একেবারে ফিট টু দ্য টি। অল্প মেক-আপ আর আন্ডারটোনড অ্যাক্টিং, দুটোই তাঁকে এগিয়ে রাখবে। বলিউডে সঠিক সুযোগ পাওয়া যে শুধুই সময়ের অপেক্ষা, সেটা প্রায় বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনে মুমতাজকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতেই পারেন পরিচালকেরা।
স্পোর্টস ফিল্মের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যাঁর কাঁধে, তিনি ডিওপি। ম্যাচের দৃশ্যগুলো এতটাই নিপুণভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যে এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল না। তবে অতিনাটকীয়তার ফাঁদ কেটে বেরোতে পারেনি এই ছবিও। পরিচালকের কাছ থেকে আর একটু বেশি সংযম আশা করাই যায়।
কম বাজেটের ছবি। কিন্তু এমন ছবি বানাতে বাজেট কোনও কনস্ট্রেনই নয়। অভিনেতা মাধবন যে সেল্ফ-ডেস্ট্রাকটিভ অ্যাটিটিউড দেখালেন, তাতে আগামী দিনে তাবড় স্টারের ত্রাস হবেন সহজেই। সালা খাড়ুস, বার বার দেখার ইচ্ছে উর্দ্রেক করবে এঁর জন্যেই।