কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হল বাংলা সাহিত্যে, মন খারাপ শীর্ষেন্দুর
শঙ্খ ঘোষ কবি হিসাবে কেমন ছিলেন সে কথা আজ থাক। মানুষ হিসাবে যেমন ছিলেন সেটা সকলের জানা দরকার। এমন প্রশান্ত, এমন স্থিতধী, অমায়িক মানুষ আজকাল দেখাই যায় না।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শঙ্খ ঘোষ কবি হিসাবে কেমন ছিলেন সে কথা আজ থাক। মানুষ হিসাবে যেমন ছিলেন সেটা সকলের জানা দরকার। এমন প্রশান্ত, এমন স্থিতধী, অমায়িক মানুষ আজকাল দেখাই যায় না। সমস্তরকম বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। মাঝে মাঝে একটু আধটু রাজনৈতিক মন্তব্য করতেন ঠিকই, কিন্তু নিজে ছিলেন খুব শান্ত, খুব সমাহিত মানুষ।
আরও পড়ুন:'অন্ধকার দিনে সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখতে পাওয়ার আশা হারিয়ে গেল', :শ্রীজাত
আমরা অভিভাবকের কথা বলি, শঙ্খ দা সেই সত্যিকারের অভিভাবক ছিলেন। প্রচুর তরুণ কবিদের তিনি সহায়তা করেছেন, সাহায্য দিয়েছেন। তাঁর নিজের ওই ছোট্ট ফ্ল্যাটটি ছিল অবারিত দ্বার। তরুণ সাহিত্যিকরা ভিড় করে শঙ্খদার কাছে যেত। এবং তিনি নিজের সময় নষ্ট করে তাঁদের সাহায্য করতেন। হয়ত অনেকে দক্ষ কবি নন, এমন সমস্ত কবির কবিতা শুনেও সংশোধন করে দিতেন, কীভাবে লিখতে হবে বোঝাতেন, শেখাতেন। খুব বেশি কথা বলতেন না, বলতে ভালবাসতেন না, শুধু মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। সবাই কথা বলেন, শোনে কজন। কিন্তু তিনি শুধু সব লক্ষ্য করতেন শুনতেন। বেশি কথা বলা পছন্দ করতেন না তাই চুপ থাকতেন।
আরও পড়ুন:'অভিভাবকহীন সাংস্কৃতিক জগত, শঙ্খ ঘোষই ছিলেন শেষ যবনিকা', প্রতিক্রিয়া বিশিষ্টজনদের
শেষ দশ বছর কোনও অনুষ্ঠানে গেলেও বসে থাকতেন, শুনতেন শুধু। তাঁর মধ্যে কোনও গাম্ভীর্য ছিল না, রসিকতা শুনলেই হাসতেন। এত সম্মান পেয়েছেন কিন্তু অহংকার স্পর্শ করে নি তাঁকে। বিলিয়ে দিতেন নিজের পুরস্কার। আমি মাঝে মধ্যে রসিকতা করে বলতাম এর পর আপনি পুরস্কার পেলে আমি বাড়ির নীচে অপেক্ষা করব। শূন্যতা অনুভব করছি। এ শূন্যতা যাওয়ার নয়, মনটা খুব খারাপ, কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হল বাংলা সাহিত্যে।
(অনুলিখন)