বিশ্ব অ্যালজাইমার'স দিবস, চাই আপনার সহমর্মিতা

Updated By: Sep 21, 2015, 02:20 PM IST
বিশ্ব অ্যালজাইমার'স দিবস, চাই আপনার সহমর্মিতা

প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রেখেছেন ভুলে যাওয়া, পরিচিতদের নাম ভুলে যাওয়া, জরুরি কাজ ভুলে যাওয়া, সবথেকে বড় কথা 'ভুলে যাবো' এই উত্কণ্ঠায় ভোগা। আমরা প্রত্যেকেই পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখেছি। তারা কি বয়সজনিত কারণে ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন? নাকি সমস্যা আরও ভয়াবহ অ্যালাজাইমারের দিকে এগোচ্ছে? আজ, ওয়ার্ল্ড অ্যালজাইমার্স ডেতে গড় তুলুন সচেতনতা।

বিভিন্ন শারীরিক বা সাইকোলজিকাল কারণে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন অ্যালজাইমার রোগে। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন মার্কিনিরা ভারতীয়দের থেকে অন্তত ৫ গুণ বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাপন বদলের কারণে বাড়ছে অ্যালজাইমারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও। এই মুহূর্তে দেশে ৫০ লক্ষ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত। চিকিত্সকদের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্য দ্বিগুণ হবে।

অ্যালজাইমার'স ডে ২০১৫-র থিম

ডিমেনশিয়ার কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হয় ওয়ার্ল্ড অ্যালজাইমার্স ডে। পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে প্রতি ৬৮ সেকেন্ডে একজন আক্রান্ত হন অ্যালাজাইমারে। এই বছর ওয়ার্ল্ড অ্যালজাইমার'স ডে-র থিম রিমেম্বার মি। অ্যালাজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যাকে তাদের প্রিজজনেরা ভুলে না যান তার জন্যই এই থিম।

কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা নয়?

বয়সের কারণে অনেক সময় স্বাভাবিক নিয়মেই স্মৃতিশক্তি কমে আসে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। কীভাবে বুঝবেন কোনটা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ আর কোনটা নয়?

১. কোনও মানুষের নাম ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু পরিচিত ব্যক্তিকে মনে করতে না পারা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ নয়
২. মাঝে মাঝে কিছু ভুলে গেলেও সারাদিনের সব কাজ যদি ঠিকঠাক করতে পারেন তাহলে আপনি স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, কিন্তু রোজকার জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন বিল দিতে ভুলে যাওয়া বা কীভাবে দিতে হবে ভুলে যাওয়া অ্যালজাইমারের লক্ষণ
৩. অনেক সময় স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে আমরা প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রেখেছি ভুলে যাই। কিন্তু একেবারেই অপ্রত্যাশিত জায়গায়(যেমন চাবি ফ্রিজে রেখে দেওয়া)জিনিস রাখা বা প্রায়শই হারিয়ে ফেলা মানে অবশ্যই আপনার সমস্যা গুরুতর
৪. আজ কোন বার? স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে অনেক সময়ই আপনি সপ্তাহের দিন ভুল করতে পারেন, কিন্তু যদি তারিখ, ঋতু, সময়ের প্রবাহমানতা গুলিয়ে যায় তাহলে অবিলম্বে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
৫. কথা বলার সময় অনেক সময়ই সঠিক শব্দ খুঁজে পাই না আমরা, তবে যদি দেখেন আপনার প্রিয়জন কথার খেই রাখতে পারছেন না, এক বক্তব্য থেকে আরেক বক্তব্যে চলে যাচ্ছেন, এই মুহূর্তে বলে পরের মুহূর্তে নিজেই ভুলে যাচ্ছেন তাহেল বুঝবেন অ্যালজাইমারের লক্ষণ প্রকট হচ্ছে
৬. রাস্তায় বেড়িয়ে দিক ঠিক করতে না পারার সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগি, কিন্তু পরিচিত রাস্তায় যদি বারবার হারিয়ে যান বা বাড়ির রাস্তা ভুলে যান তবে আপনি অ্যালজাইমারে আক্রান্ত
৭. অনেক সময় দিনটা ঠিকঠাক নিজের পরিকল্পনা মতো না চললে বা হঠাত্ পরিবর্তন এলে অনেকেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু কোনও কারণ ছাড়া বিরক্ত হওয়া, ভয় পাওয়া, উত্কণ্ঠায় ভোগা বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়া অ্যালজাইমারের জোরালো লক্ষণ
৮. মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে না পারা বা দুর্বল বিচারবুদ্ধির পরিচয়ও অ্যালজাইমারের লক্ষণ হতে পারে
৯. অফিসে, অনুষ্ঠানে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা, পছন্দের কাজ করতে ভাল না লাগা মানে আপনার অবশ্যই কোনও সমস্যা হচ্ছে

অ্যালজাইমারের সঙ্গে যাপন

১. অ্যালজাইমারে অক্রান্ত হলে সবথেকে প্রথমে নিজেকে ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় দিন।
২. পরিবারের ভালবাসা, সাহায্য চান। নিজের পছন্দের কাজ করুন, স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন।
৩. সময়, স্থান ও ব্যক্তির পরিচয় ভুলে যাওয়া এই রোগে স্বাভাবিক। তাই একটি ডায়রিতে আপনার দরকারি কাজ, তারিখ, পরিবার, বন্ধুদরে নাম-ঠিকানা লিখে রাখুন।
৪. বইপড়া, খেলাধুলো, ক্রসওয়ার্ড পাজল সলভ করা বা বাদ্যযন্ত্র বাজালে অ্যালজাইমারের সঙ্গে বোঝাপড়া করা সহজ
৫. সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে ব্যাপৃত রাখলে মস্তিষ্ক সচল থাকে, অ্যালজাইমারের সঙ্গে যোঝাও সহজ হয়
৬. অ্যালজাইমারে আক্রান্ত মানুষদের বোঝা উচিত্ যে জীবনে বিভিন্ন রকম আবেগে থাকা স্বাভাবিক। তাই একা একা সময় না কাটিয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে আবেগের দোলাচল ভাগ করে নিন
৭. মানসিক চাপ ও অবসাদের সঙ্গে ঠিকঠাক মোকাবিলা করতে পারলে পজিটিভ জীবনবোধ তৈরি হবে
৮. নিজের খাওয়া দাওয়া ও শরীরচর্চার ওপর জোর দিন

অ্যালজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বসবাস

অপনার প্রিয়জন যদি অ্যালজাইমারে আক্রান্ত হন তবে তার সবথেকে বেশি প্রয়োজন আপনার সাহচর্য, কারণ এই রোগের কোনও চিকিত্সা নেই। আপনার সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার জোরে প্রিয়জন ভরসা পেতে পারেন।
অ্যালজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবসময় চোখে চোখে রাখুন
অ্যালজাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির দেখাশোনা করা অনেক সময়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝে মাঝেই খিঁটখিটে হয়ে উঠতে পারেন, বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন
ভালবাসা, সাহচর্য, ধৈর্য্য ও প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার মানসিকতা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গ দিন।

 

.