এপিডিআর-এর মিছিলে হামলা প্রতিবাদে 'পরিবর্তনকামী' বুদ্ধিজীবী মহল
এপিডিআর-এর মিছিলে তৃণমূল হামলা ও পুলিসের মারধরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানবাধিকার সমগঠন ও বিশিষ্টজনেরা
একসময় বাম সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন এঁরাই। কেউ কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য প্রচারও চালিয়েছিলেন। মিছিলে তৃণমূল নেত্রীর পাশে হাঁটতেও দেখা গিয়েছিল তাঁদের। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের সদস্যপদও পেয়েছেন এঁদের মধ্যে কেউ কেউ। কিন্তু রাজ্যে পরিবর্তন এলেও সেই পরিবর্তনের বিরুদ্ধেই এবার সরব হলেন এঁরা।
পার্ক স্ট্রিট থেকে নোনাডাঙা। দময়ন্তী সেনের বদলি থেকে হাজরায় এপিডিআর-এর মিছিলে আক্রমণ। তার ওপর সংবাদমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপের খাঁড়া, নোনাডাঙায় বস্তি উচ্ছেদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। তার উপর বৃহস্পতিবার হাজরায় এপিডিআর-এর প্রতিবাদ মিছিলে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ চরমে। রাজ্য সরকারের একের পর এক পদক্ষেপের প্রতিবাদ পথে এবার পথে রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা। বৃহস্পতিবার অ্যাকাডেমির সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন কবীর সুমন, সুনন্দ সান্যাল, সুমন মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেনের মত ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিযোগ, অগণতান্ত্রিক পথে চলছে সরকার।
দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী, এপিডিআর কর্মী
পুলিস কি জানত না, ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা আছে? জানলে আমাদের মিছিল করার অনুমতি দিল কী করে? আর ১৪৪ ধারার নির্দেশপত্র কোথায়? অতীতেও ১৪৪ ধারাকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে স্তব্ধ করা হয়েছে। এবারও তার অ্যাকশন রিপ্লে হল।
সুজাত ভদ্র, মানবাধিকার কর্মী
খুবই অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। সরকার ক্রমাগত অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে। পূর্বতন সরকারের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। আশা ছিল, নতুন সরকার গণতন্ত্র রক্ষা করবে। শুধু তাই না, সম্প্রসারণ করবে। আমরা ক্রমাগত দেখছি, সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দিচ্ছে না। সাংবিধানিক অধিকার সরকার কেড়ে নিচ্ছে। এটা খুব খারাপ প্রবণতা। খুবই নিন্দাজনক। উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হওয়া উচিত্। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে যদি আলোচনা হতে পারে, তাহলে এবিষয়ে নয় কেন? এই সরকার যে প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় এসেছে, একবছরের মধ্যে তারা তা ভুলে গিয়েছে। এবং মারাত্মক আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছ। সরকার সংশোধিত না হলে আরও গণ আন্দোলন হবে।
সুমন মুখোপাধ্যায়, নাট্যকর্মী
ক্রমাগত অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। এত তাড়াতাড়ি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে যে, তা খুবই আশঙ্কার কথা। মিছিলের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক, ধিক্কারের বিষয়। পর পর ঘটনায় আমি আশঙ্কিত।
কৌশিক সেন, নাট্যকর্মী
রাজনৈতিক রঙের বাইরে মানুষের পরিচয় হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন সরকারের সিপিআইএমের পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত্ নয়। তাহলে পরিবর্তন কীসের? এই ঘটনায় তৃণমূলকর্মীরা থাকলে তো ভয়ঙ্কর প্রবণতা।
শুধু নোনাডাঙা কাণ্ডই নয়। সামগ্রিকভাবে একটা অসহিষ্ণুতার পরিবেশ দেখা দিয়েছে বলেই মত বুদ্ধিজীবীদের একাংশের। সভায় আসতে পারেননি মহাশ্বেতা দেবী। কিন্তু গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসএমএস পাঠিয়েছেন তিনি।